নগদ সহায়তার টাকা হাতিয়ে নিতে জন্য অসাধু রপ্তানিকারকরা নানা অসৎ পন্থা অবলম্বন করছে। তারা ভুয়া রপ্তানি দলিল তৈরির মাধ্যমে রপ্তানি দেখাচ্ছে। আবার রপ্তানি দলিলে প্রকৃত ঘোষণার চেয়ে কম পণ্য বা ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য দেখাচ্ছে। আবার যে পণ্যের বিপরীতে প্রণোদনার পরিমাণ বেশি ওই পণ্যের পরিমাণ বেশি এবং যে পণ্যে প্রণোদনা কম ও পণ্য প্রকৃত পণ্যের চেয়ে কমিয়ে দেখাচ্ছে। রপ্তানিতে সক্ষমতা বাড়াতে সরকার বেশকিছু পণ্যে নগদ সহায়তা বা ক্যাশ ইনসেনটিভ দিয়ে আসছে। সেজন্য প্রতি বছর বাজেটে বিপুল অঙ্কের বরাদ্দ রাখা হয়। ওই নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে শুরু করে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। আর ওই নগদ সহায়তা পেতেই অনেকে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কিছু কিছু অসাধু রপ্তানিকারক পণ্য রপ্তানি না করেই রপ্তানি দেখিয়ে নগদ সহায়তার টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে। আবার কম হারের কিংবা নগদ সহায়তার আওতা বহির্ভূত পণ্য রপ্তানি করে বেশি হারের পণ্য দেখাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই পণ্য কম রপ্তানি করে বেশি দেখিয়েও কারসাজির মাধ্যমে নগদ সহায়তার অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে সম্প্রতি রপ্তানির ক্ষেত্রে এ ধরনের বেশকিছু কারসাজি ধরা পড়েছে। তার বাইরে ঢাকা কাস্টমস হাউজসহ অন্যান্য কাস্টমস হাউজেও এমন ধরনের কারসাজি ধরা পড়ে। তারপরই এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। এমন ধরনের কারসাজি রোধ করতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ পণ্য চালান পরীক্ষায় আরো সতর্ক হতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে। বিশেষত বাড়তি নগদ সহায়তার সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন পণ্য চালান এবং অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য চালান কায়িক পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিকতা যাচাইয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বন্দরের বাইরে অফডকে পণ্য চালানের সংখ্যা ও অফডক কর্তৃপক্ষের কাছে রক্ষিত তথ্য যাচাই করার নির্দেশনাও দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ৩৭ শ্রেণির ৪৭ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বিভিন্ন হারে প্রণোদনা পাওয়া যায়। তার মধ্যে কয়েকটি পণ্য ২০ শতাংশ, কিছু পণ্য ১৫ শতাংশ ও ১০ শতাংশ হারে প্রণোদনা পায়। আবার কিছু পণ্য ১ থেকে ৯ শতাংশ হারে প্রণোদনা পায়। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে রপ্তানি খাতে প্রণোদনা প্রদানের লক্ষ্যে বরাদ্দ রয়েছে ৭ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৭ ধরনের পণ্য রপ্তানির জন্য নগদ সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। খাদ্য ও সবজিজাতীয় পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বেশি হারে পাওয়া যায়। ওসব পণ্যে নগদ সহায়তা ১০ থেকে ২০ শতাংশ। জালিয়াত চক্র রপ্তানির ওই অর্থ হাতিয়ে নিতেই অন্য পণ্য রপ্তানি করে ওসব পণ্য হিসেবে দেখাচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, সবজি, খাদ্যদ্রব্য ও মশলাজাতীয় পণ্য রপ্তানিতে সর্বোচ্চ নগদ সহায়তা দেয় সরকার। এর ফলে দেখা যায় অন্য পণ্য (যে পণ্য সহায়তার তালিকায় নেই কিংবা ইনসেনটিভের হার সামান্য) রপ্তানি করা হলেও নগদ সহায়তা পাওয়া পণ্য হিসেবে দেখানো হচ্ছে। মুড়িতে নগদ সহায়তা রয়েছে। কিন্তু কন্টেইনারে হয়তো অর্ধেক মুড়ি আর অর্ধেক অন্য পণ্য। কিন্তু ঘোষণা দেয়া হচ্ছে মুড়ি। তাছাড়া পণ্যের ওজনেরও মিথ্যা ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। আর যখন বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করে তখন তা পরীক্ষা করতে গেলে ওসব রপ্তানিকারকরা পণ্য আটকে দিচ্ছে বা দেরি করছে বলে শুল্ক বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। পাশাপাশ আইন অনুযায়ী শুল্ক কর্মকর্তারা ২ শতাংশের বেশি পণ্য পরীক্ষা করতে পারে না। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে অসাধু রপ্তানিকারকরা।
এদিকে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, নগদ সহায়তার লোভে ভুয়া রপ্তানি দেখানোর মতো অনিয়ম দ্রুত বন্ধ করা জরুরি। কারণ প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে না পারলে পুরো প্রণোদনা ব্যবস্থাই প্রশ্নের মুখে পড়বে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি ওই ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীরা অবশ্যই নজরদারির আওতায় আনতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সেজন্য সাধারণ রপ্তানিকারকরা যাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না পড়ে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. ফখরুল আলম জানান, গত বেশ কিছু দিন ধরে নগদ সহায়তা পাওয়ার জন্য কিছু রপ্তানি পণ্যে অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে।