নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিনেমাওয়ালা থেকে এবারের ঈদে সাজিয়েছেন একটি বিশেষ সিরিজ। পাঁচটি নাটকে মোড়া এর নাম ‘ফ্যামিলি এক্সপ্রেস’। রাজের পাঁচ সহকারী পরিচালক এগুলো নির্মাণ করেছেন। সব নাটকের ভাবনা রাজের। অ্যাডভাইজরি পরিচালকের দায়িত্ব সামলেছেন তিনিই। নাটক পাঁচটিতে পারিবারিক বন্ধন আর সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের গল্প বলা হয়েছে। কোনো কাজই যে ছোট নয়, এগুলোতে আছে সেই বক্তব্য। এসব নাটক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পেশার মানুষদের প্রতি অন্যান্যের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা হলেও বদলে দিতে পারে। এর মধ্যে ‘পেপার গার্ল’ দর্শকদের প্রশংসায় ভাসছে। এটি লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন রুশো আহমেদ। এখন কোনো কাজে ছেলেমেয়ে কোনো ভেদাভেদ নেই, সেটাই নাটকটিতে ফুটে উঠেছে। ‘পেপার গার্ল’ একটি মেয়ের জীবনযুদ্ধের পারিবারিক গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যমণি শাহনাজ। বাবাহারা পরিবারের বড় মেয়ে। পঙ্গু মা ও ছোট বোনকে নিয়ে তার পৃথিবী। ভোরে পত্রিকা বিলি, দুপুরে অফিসে খাবার ডেলিভারি এবং দিনশেষে টিউশনি করে ঘরে ফিরে পরিবারের দায়িত্ব একাই বয়ে বেড়ায় সে। সাধ্যের বাইরে থাকার পরও ছোট বোন ফাহনাজের সব ইচ্ছে পূরণ করে শাহনাজ। ফাহনাজ অন্যমনস্ক। তার মধ্যে আছে উচ্চবিলাসীতা। সাদাকালো জীবনযাপন করলেও প্রেমিকের কাছে নিজের জগত রঙিনভাবে উপস্থাপন করে মিথ্যের চক্রে আটকে যায় সে। যদিও পঙ্গু মায়ের মতো ছোট বোনের ভালোবাসায় সিক্ত থাকে শাহনাজ। তার প্রতি ছোট বোনের সম্মানের কমতি নেই। তার গোপনীয়তার পেছনে জড়ানো থাকে বড় বোনের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা। ফাহনাজের মিথ্যে কি তার প্রেমিক বুঝতে পারে? যদি জেনে যায়, তারপরও কি সে চুপ থাকবে নাকি অন্যকিছু ঘটবে? সেসব নাটকটি দেখে জেনে নিন। নাটকের শেষটায় একটি বক্তব্য পাওয়া যায় ফাহনাজের ব্যাখ্যায়। একজন নারীর সংগ্রামী চরিত্র দেখানো হয়েছে নাটকটিতে। শত প্রতিকূলতার মাঝে পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া, নিজেকে টিকিয়ে রেখে পরিবারের চাহিদা মেটানোর সংগ্রাম বুঝিয়ে দেয় ‘পেপার গার্ল’। মেয়েদের কর্মসংস্থান নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ার বক্তব্য মিশে আছে এতে। রাতে একা পথ চলতে গিয়ে উত্ত্যক্তকারীর সঙ্গে সাহস নিয়ে কথা বলার অনুপ্রেরণাও জোগায় নাটকটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন প্রশংসার বন্যায় ভাসছে ‘পেপার গার্ল’। ফেসবুকে বাংলা নাটক গ্রুপে প্রচুর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। রিয়াজ আহমেদ আরিফ লিখেছেন, ‘শাহনাজ শুধু একটি নাম নয়, হাজারো শাহনাজ তৈরির অনুপ্রেরণা। বাবাহারা অসচ্ছল পরিবারের সাহসী কা-ারী। ইচ্ছে আর চেষ্টা থাকলে মেয়েরাও দুঃখী মা-বোনের মুখে হাসি ফোটাতে সফল। দারুণ গল্প ও অভিনয়। তানজিন তিশাকে যখন এ ধরনের কিছু ভিন্ন চরিত্রে দেখি, মনে হয় চারপাশে দূষণের মাঝে অক্সিজেন। অভিনয় বরাবরের মতোই অসাধারণ। সারিকা সাবাহ ওভার অ্যাক্টিং করেছেন মনে হলেও চরিত্র অনুযায়ী জুতসই। শামীম হাসান সরকার ও মনিরা মিঠু যার যার জায়গায় ভালো করেছেন।’ মিথুন আহমেদ জয়ের কথায়, ‘পারিবারিক গল্পের নাটকটি আমার খুব ভালো লেগেছে। বেঁচে থাকার জন্য কতটা পরিশ্রম করতে হয় এবং দায়িত্বশীল থেকে পরিবারকে আগলে রাখতে হয়, তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পেপার গার্ল।’ ফাইজুল ইয়াব তাহসিনের বর্ণনায়, সবকিছু করার পর মেয়েটার নিজের জন্য সময়টা পর্যন্ত নেই। তার চোখে এটি দারুণ ভাবনা। তার পোস্টের মন্তব্যের ঘরে তানজিন তিশার প্রশংসা করেছেন সাহানা সেন। নায়লা শারমিন দৃষ্টির মন্তব্য, শেষ মুহূর্তটা খুব আবেগপ্রবণ। ‘পেপার গার্ল’ নাটকের শেষ দৃশ্যে চার অভিনয়শিল্পীর চোখের জল ছুঁয়ে গেছে দর্শকদের আবেগ। আপেল মাহমুদ এমিলের আবহসংগীত সেই কান্নার রঙে মনে দাগ কেটেছে বলা যায়। ফেসবুকে বাংলা নাটক গ্রুপে ইসরাক মাহমুদের মন্তব্য, পারিবারিক ড্রামা হিসেবে এই ঈদের অন্যতম ভালো কাজ হয়ে থাকবে ‘পেপার গার্ল’। মাইনুল ইসলাম নিহাদের মতে, ‘পেপার গার্ল এই ঈদে আমার দেখা সেরা নাটক। পরিবারের সম্মান, দায়িত্ব ও বন্ধনের গল্প এটি।’ তাহসিনা জাহান সুমা লিখেছেন, ‘ঈদে আমার দেখা নাটকগুলোর মধ্যে ‘পেপার গার্ল’ সেরা। এর গল্পটা অন্যরকম। পরিবারের সম্মান, দায়িত্ব ও বন্ধনের গভীর ছাপ ফেলে যায় মনে। অসাধারণ একটি বক্তব্য নিয়ে তৈরি হয়েছে এটি। গল্পটা ভাবতে বাধ্য করে। সব মিলিয়ে ভালো লাগার মতো। গল্পটা আমার মন ছুঁয়ে গেছে, চোখে পানি চলে আসছিল। তানজিন তিশা বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। তার মুখাবয়ব স্বাভাবিক মনে হয়েছে। তার বলা শেষ সংলাপগুলো এককথায় অসাধারণ। মনিরা মিঠু তার চরিত্রে দারুণ। সবার চমৎকার অভিনয় নাটকটিকে অন্যমাত্রা এনে দিয়েছে।’ মোহাম্মদ জুনায়েদের মন্তব্য, ‘সব মিলিয়ে ভালো লাগার মতো একটি নাটক। তানজিন তিশা অনেক ভালো অভিনয় করেছেন। মনিরা মিঠু চরিত্রের সঙ্গে দারুণ মানিয়েছেন। পুরো নাটকে সারিকা সাবাহ ওভার অ্যাক্টিং করলেও তার চরিত্রে এমনটাই প্রয়োজন ছিলো।’ মো. হামিদুল হক লিখেছেন, “ঈদের বেশকিছু নাটক দেখলাম। তবে সবার ওপরে থাকবে ‘পেপার গার্ল’।গল্পটা ভিন্নরকম। কোনো সময় নষ্ট করার মতো কাহিনি নেই। শামীম হাসান সরকারসহ সবার অভিনয় দারুণ লেগেছে।” আরিশা ফারজিন ঝুম লিখেছেন, ইতোমধ্যে বেশ প্রশংসিত হয়েছে নাটকটি। তার পোস্টের মন্তব্যে সুমিতা সরকার বলেন, পেপার গার্ল অসাধারণ। শ্রেয় শিঞ্জনের মতে, এটি ভালো নাটক। রাফসান চৌধুরীর মনে করেন, ‘পেপার গার্ল’ ঈদের ভালো কাজগুলোর তালিকায় থাকবে। শাহনাজ চরিত্রে তানজিন তিশার অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করছেন দর্শকরা। বাংলা নাটক গ্রুপে জনি মিয়ার পোস্ট, ‘পেপার গার্ল নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে তানজিন তিশার দারুণ অনবদ্য অভিনয় মন ছুঁয়ে গেছে। নাটকে মায়ের চরিত্রে মনিরা মিঠু দারুণ।’ তার পোস্টে সুমাইয়া জারা তনুর মন্তব্য, ‘তানজিন তিশা ইদানীং দারুণ সব কাজ করছেন। অভিনয়েরও বেশ উন্নতি হয়েছে।’ মো. আলাদিন আহামেদের মন্তব্য, ‘তানজিন তিশার অভিনয় এই নাটকে দারুণ লেগেছে।’ শরিফ মোহাম্মদ বলেন, ‘পেপার গার্ল-এর মতো গল্পনির্ভর নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে এগিয় নিয়ে যাবেন তানজিন তিশা।’ তার পোস্টের মন্তব্যে ঘরে আবদুল্লাহ নুর তুষার বলেন, সেরা নাটক; তানভীর ইয়াসিরের কথায়, সত্যিই ভালো কাজ ছিল; ইসরাতুল জান্নাত শাম্মির মন্তব্য, অনেক ভালো লেগেছে নাটকটি; এএন অপূর্ব সরকার অপুর মতে, অসাধারণ কাজ। ‘পেপার গার্ল’কে ৭/১০ রেটিং দিয়েছেন শরিফ উদ্দিন। তিনি মনে করেন, এবারের রোজার ঈদের সেরা নাটকের তালিকায় থাকতে পারে ‘পেপার গার্ল’। তিনি লিখেছেন, ‘তানজিন তিশার অভিনয় ছিলো প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ভালো। সারিকার অভিনয় চরিত্র অনুযায়ী মানানসই। মা চরিত্রে দারুণ ছিলেন মনিরা আক্তার মিঠু। সব মিলিয়ে উপভোগ্য নাটক।’ পান্না খান মন্তব্য করেছেন, ‘খুব ভালো লেগেছে তানজিন তিশাকে। তিনি নায়কদের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে নিজেকে নিজের মতো করে উপস্থাপন করতে পেরেছেন, এটা অনেক বেশি ভালোলাগার বিষয়।’ রহমান মতির মতে, ভালো একটি বক্তব্য নিয়ে নাটকটি সাজানো হয়েছে। ভালোলাগার মতো। তানজিন তিশা বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। মনিরা মিঠু তার চরিত্রে দারুণ। সারিকার অভিনয় শেষের দিকে ভালো ছিলো। মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘ফ্যামিলি এক্সপ্রেস’ সিরিজটির নাটকগুলো দর্শক অনেকদিন মনে রাখবে, এটা বলে দেওয়া যায় এখনই!