মণিরামপুরে খোলা বাজারে ধানের মূল্য বেশি থাকায় কৃষকরা সরকারি খাদ্য গুদামের ধান ক্রয় কেন্দ্রে ধান দিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে সরকারি খাদ্য গুদামে এবার বোরো মৌসুমে ৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ে মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। ৬মে মণিরামপুর উপজেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে ধান ক্রয়ের উদ্বোধন করার দু’সপ্তাহ ব্যবধানে মাত্র ৩৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, গত ৬মে মণিরামপুর উপজেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু করেছেন। এখানে প্রতি কেজি ধান ২৭ টাকা দরে সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। যা প্রতি মণ ধানের বাজার মুল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৮০ টাকা। উপজেলার এ অফিস থেকে এবার বোরো মৌসুমে ৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে মঙ্গলবার পর্যন্ত দুই সপ্তাহে মাত্র ৩৫ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা সম্ভব হয়েছে। তবে ঈদের ছুটি থাকায় ধান ক্রয় একটু কম হয়েছে বলে অফিস সূত্র জানিয়েছেন।
জানাযায়, উপজেলার শ্যামকুড় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি দায়িত্ব নিয়ে শ্যামকুড় গ্রাম থেকে চাষি ইলিয়াস, রাজু এবং মনিরুল ইসলামকে দিয়ে ৯ মেট্রিক টন ধান বিক্রি করিয়েছেন উপজেলা খাদ্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা সেলিম হোসেন বলেন, বাইরে বাজার মূল্য ভালো থাকায় চাষিরা কেউ ধান দিচ্ছেন না সরকারি এ অফিসে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এ পর্যন্ত মাত্র ৩৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকারি মূল্য এবং খোলা বাজারের মূল্যের ব্যবধান থাকায় ধান ক্রয় ভেস্তে যাবে এমন আশংকার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
ধান ক্রয় কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, বাজারে ভালো দাম থাকায় কৃষকরা সরকারি এ অফিসে ধান দিচ্ছেন না। তিনি দাবী করেন, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় যে কোন মৌসুমের চাইতে এ বছর বোরো ফসল উৎপাদন ভালো হয়েছে। ২৭ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করে চাষিরা এ বছর ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮’শ ৪০ মেট্রিক টন ধান পেয়েছেন। বাজারে মূল্য ভালো থাকায় চাষিরা সরকারি ক্রয় কেন্দ্রের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না।
মণিরামপুর আড়ৎ ব্যবসায়ী গোপাল দাস, আব্দুল গফুর এবং খাটুয়াডাংগা বাজারের সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান চিকন ধান প্রতিমণ ক্রয় করা হচ্ছে পৌনে ১১’শ টাকা মূল্যে। এর বাইরেও হাইব্রিড-২৮ ধান প্রতিমণ ১ হাজার ৬০/৮০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। আর বাশমতি নেওয়া হচ্ছে সাড়ে ১১’শ টাকা মূল্যে।
আম্রঝুটা গ্রামের চাষি মিজানুর রহমান বলেন, খোলা বাজারে চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ১১’শ টাকা মূল্যে। তাও আবার গড়ানভাবে নিচ্ছেন খোলা বাজারের ব্যবসায়ীরা। আর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা কার্যালয়ে প্রতিমণ ধান কিনছেন ১ হাজার ৮০ টাকা মূল্যে। তাও আবার সম্পূর্ণ চিটামুক্ত এবং কয়েকবার রোদে শুকানো ফ্রেশ ধান ছাড়া ধান কিনছেন না তারা।
এ অফিসে ধান বিক্রি করতে চাষিদের অফিস পর্যন্ত ধান বহনের খরচও রয়েছে। তারপরও খাদ্য অফিস থেকে চেক নেওয়া এবং ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের একটা জটিলতাতো আছেই। যে কারনে চাষিরা ধান দিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেননা সেখানে।
উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, সরকারি মূল্যের চাইতে খোলা বাজারে মূল্য ভালো পাওয়ায় চাষিরা সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান দিচ্ছেন না এবার। ফলে সরকারিভাবে এ উপজেলা থেকে যে ধান ক্রয়ের টার্গেট নিয়েছে তা সম্ভব হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
মণিরামপুরে প্রধান শিক্ষকের জিম্মিদশা থেকে চারঘন্টা পর অফিস সহকারি উদ্ধার, কর্মচারী পরিষদের এলাকা পরিদর্শন
এফএনএস (জি. এম ফারুক আলম; মনিরামপুর, যশোর) : মণিরামপুরের গোপিকান্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জিম্মি হওয়া অফিস সহকারি আব্দুল গণি ৪ ঘন্টা পর জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার হয়েছেন। এ নিয়ে ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। অপর দিকে বুধবার সকালে বাংলাদেশ বে-সরকারি তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতির যশোর জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ ঘটনার এলাকা পরিদর্শন করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুষ্ঠবিচার দাবী করেছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নিতাই কুমার পাল বলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে অফিস সহকারি আব্দুল গণি প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিনকে তার গ্রামের বাড়ি গোপিকান্তপুর কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে গেলে তাকে জিম্মি করে রাখেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে আমি মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টার দিকে মণিরামপুর থানা পুলিশের দারস্থ হয়। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিনকে এ সময় চাপ প্রয়োগ করলে অবশেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আব্দুল গণিকে জিম্মিদশা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।
সভাপতি নিতাই কুমার আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিন বিভিন্ন সময় জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ করেছেন। সকল বিষয় নিয়ে বুধবার বিকেলে প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মণিরামপুর থানায় একটি সাধারণ ডাইয়েরী করার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ তার বিরুদ্ধে রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন।
অপর দিকে গোপিকান্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারির জিম্মির ঘটনা কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশ হলে নজরে আসে বাংলাদেশ বে-সরকারি তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ যশোর জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ’র। তারা ঘটনার পরদিন বুধবার সকাল ১১টার সময় ঘটনার এলাকা পরিদর্শন করেন এবং নেতৃবৃন্দরা কর্মচারী আব্দুল গণিকে অহেতুক হয়রানি করা হয়েছে মর্মে প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিনের সুষ্ঠবিচার দাবী করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কর্মচারি পরিষদের যশোর জেলা শাখার সভাপতি মোঃ জাহিদুল ইসলাম, সহসভাপতি এস এম আক্তারুজ্জামান, যগ্ম-সম্পাদক নূর ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, যশোর সদর থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক পঙ্কজ কুমার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিন কর্তৃক অফিস সহকারি জিম্মি ঘটনাটি নিয়ে গোপিকান্তপুর এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।