ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন, অসহায় ও ভাসমান তিন শতাধিক রোজাদারকে প্রতিদিন নিজেদের টাকায় বিনামূল্যে সেহেরী ও ইফতার বিতরণ করে যাচ্ছে ‘মানবিক আশুগঞ্জ’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি উপজেলার একটি বেঁদে পল্লীতেও প্রতিদিন রোজাদারদের জন্য পাঠানো হচ্ছে সেহেরী ও ইফতার। অসহায় ও নিম্ন আয়ের লোকজন শেষ রাতে সেহেরী ও যথাসময়ে ইফতার পেয়ে খুশি। ৪০/৫০ জন সদস্য সেহেরীর ও ঈফতার প্যাকেট নিয়ে আশুগঞ্জ বাজার, রেলগেইট, আশুগঞ্জ রেলস্টেশন, আলমনগর ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ টোলপ্লাজায় দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। সৈয়দ নজরুল ইনলাম সেতুর আশুগঞ্জ এলাকায় টোল দেয়ার জন্য দাঁড়ানো যানবাহন চালক-সহযোগী ও অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতদের মাঝেও সেহেরী বিতরণ করা হয়।
সংগঠন সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সামাজিক সংগঠন ‘মানবিক আশুগঞ্জ’ উপজেলায় করোনার সংক্রামণ ঠেকাতে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবেশপথ আশুগঞ্জ টোল প্লাজা এলাকায় জীবাণুনাশক ছিটিয়েছেন তারা। এছাড়াও আশুগঞ্জ বাজার, তালশহর বাজার, রেলগেইট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও নিজ খরচে জীবানুনাশক ছিটিয়েছেন।
এছাড়াও অসহায় ও নিম্ন আয়ের লোকজনের মাঝে বিতরণ করা হয় খাদ্য সহায়তা। চলতি রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে তারা ভবঘুরে, অসহায় ও নিম্ন আয়ের লোকজন ও রোজাদারদের জন্য সেহেরী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন। এদিকে মহাসড়কে চলাচল করার সময় লকডাউনের কারণে কোথাও সেহেরীর ব্যবস্থা না থাকায় রোজাদাররা পড়েন বিপাকে। তারা এমনভাবে সেহেরী বিতরণ করছে দেখে অনেক চালক খুশি হয়েছেন। ব্যতিক্রম এই আয়োজনকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। শুধু মহাসড়কেই নয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে উপজেলার চরচারতলা ইউনিয়নের মরম পাড়ায় বেঁদে পল্লীতে রোজাদারদের জন্য দেয়া হচ্ছে সেহেরী ও ইফতার।
সেহেরী নেয়া আশুগঞ্জ বাজারের পাহাড়াদার খলিলুর রহমান বলেন, বাড়ি অনেকদূরে হওয়ার কারণে বাজার খালি রেখে বাড়িতে গিয়ে সেহেরী খাওয়া সম্ভব হয় না। মানবিক আশুগঞ্জের সদস্যরা প্রতিদিন আমাকে সেহেরী দিয়ে যায়।
আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফরমে থাকা সামসুল মিয়া বলেন, রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন আমাদের মাঝে বিনামূল্যে সেহেরী ও ইফতার বিতরণ করছেন তারা।
চরচারতলা মহরম পাড়া এলাকায় থাকা বেদে পল্লীর মো. বিপুল বলেন, করোনার কারণে কোথাও কোন কাজকর্ম নেই। যার কারণে হাতে টাকা পয়সাও নেই। আমাদের এই পল্লীতে অনেকেই রোজাদার। তাদের জন্য এই সেহেরীটা অনেক বেশী প্রয়োজন ছিল। আমরা এই সেহেরী ও ইফতার পেয়ে অনেকটাই খুশি। তাদের জন্য দোয়া করি।
মানবিক আশুগঞ্জ’ এর সভাপতি মো. আলাউদ্দিন বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরং হওয়ার পর থেকে জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ও হাট-বাজারে গিয়ে দফায় দফায় জীবাণুনাশক ছিটিয়েছে সংগঠনের সদস্যরা। এছাড়াও লকডাউনের মধ্যে কোনো বহিরাগত যেন জেলায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আশুগঞ্জ টোলৎমঠাজায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেও কাজ করছে আমাদের সদস্যরা।
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন রোজাদারদের জন্য অনেকেই ইফতারের আয়োজন করলেও সেহেরী নিয়ে কেউ চিন্তা করেন না। তাই আমরা ভবঘুরে, অসহায় ও নিম্ন আয়ের লোকজনের কথা চিন্তা করে সেহেরী দেয়ার উদ্যোগটি নিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় পুরো রমজান মাসজুড়েই আমাদের সেহেরী বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি আমরা রোজাদারদের জন্য ইফতার ও ঈদের খাবার সামগ্রীও বিতরণ করছি। করোনার প্রভাব যতদিন থাকবে আমাদের সাধ্যমত অসহায়দের পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ।