ভারতের পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় তকতের তা-বে মুম্বাই শহরের উপকূলে ডুবে যাওয়া বার্জের ৩৮ জন কর্মীর সন্ধান চার দিনেও মেলেনি। ভারতের নৌবাহিনী ও উদ্ধারকারী সংস্থা তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান সংস্থার (ওএনজিসি) এই কর্মীদের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে। তকতে আঘাত হানার সময় মুম্বাই উপকূল থেকে ৩৫ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করা বার্জটিতে ২৬১ জন আরোহী ছিল। এ পর্যন্ত ১৮৬ জনকে জীবিত এবং ৩৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া বার্জ পি-৩০৫টির নিখোঁজদের সন্ধানে তল্লাশি অভিযানে ভারতের নৌবাহিনীর একাধিক জাহাজ, অত্যাধুনিক উদ্ধারকারী বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। কোস্ট গার্ড ও ওএনজিসির নৌযানও এতে অংশ নিচ্ছে। ঝড়ের কবলে পড়া আরও দুটি বার্জ গ্যাল কনস্ট্রাকটর এবং সাপোর্ট-স্টেশন-৩ এর অবস্থানও শনাক্ত করা হয়েছে। বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলছে, মঙ্গলবার গ্যাল কনস্ট্রাকটরের ১৩৭ আরোহীর সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে। আর ২০১ জন আরোহী নিয়ে উত্তরপশ্চিমে ভেসে যাওয়া সাপোর্ট-স্টেশন-৩ নৌযানটিকে শনাক্ত করেছে নৌবাহিনীর জাহাজ আইএসএস তলোয়ার এবং এখন সেটিকে উপকূলে টেনে আনা হচ্ছে। ওই বার্জের সব আরোহী সুস্থ আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের গুজরাট উপকূলে ঘূর্ণিঝড় তকতের আঘাতে ল-ভ- ভাধেরা গ্রামের একটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। ছবি- রয়টার্স।ভারতের গুজরাট উপকূলে ঘূর্ণিঝড় তকতের আঘাতে ল-ভ- ভাধেরা গ্রামের একটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। ছবি- রয়টার্স।এদিকে পি-৩০৫ বার্জের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জাহাজ চলাচল দপ্তরের মহাপরিচালক। সতর্কবার্তা দেওয়ার পরেও নৌযানটির ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান করার ঘটনার তদন্তে নেমেছে মুম্বাই পুলিশও। এনডিটিভি জানায়, আইএনএস কোচি এবং আইএসএস কলকাতা বুধবার সন্ধ্যায় পি-৩০৫ বার্জের আরোহীদের এবং সেখানকার মৃতদেহ ফিরিয়ে আনে। এছাড়া টাগবোট ভারাপ্রাদা থেকেও দুইজনকে উদ্ধার করা হয়। এদের নামিয়ে দিয়েই আবার উদ্ধার অভিযানে ফিরে গেছে জাহাজ দুটি। পিটিআই জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে নোঙর ছিড়ে উত্তর দিকে ভেসে যাওয়া আরেকটি তেলকূপ খননকারী নৌযান- সাগর ভূষণের অবস্থানও শনাক্ত করা হয়েছে এবং ১০১ জন আরোহীসহ সেটিকেও নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার ভারতীয় কোস্ট গার্ড জানিয়েছে ঝড়ের সময় ১০ জন ক্রুসহ নিখোঁজ টাগবোট সঙ্গীতার অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে মহারাষ্ট্রের তারাপুর উপকূলের ১০ নটিক্যাল মাইল পশ্চিমে। সেটিকেও ফিরিয়ে আনা হচ্ছে এবং আরোহীদের জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রেটশিপ অদিতি নামের আরেকটি টাগবোটের জন্যও উদ্ধারকাজ পরিচালিত হচ্ছে, যেটা গুজরাটের পিপাভাভ উপকূলের ১৫ থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। উদ্ধার হওয়া আরোহীরা তীরে ফেরার পর ভয়াবহ সেই পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য মনোজ গীত নামের এক কর্মী নৌবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। সোমবার স্থানীয় সময় রাতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১০ কিলোমিটার গতির বাতাস নিয়ে গুজরাটের উপকূল দিয়ে স্থলে উঠে আসার পর তকতে দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে এর আগেই ঘূর্ণিঝড়টির তা-বে ভারতের গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও কেরালা রাজ্যে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়। সরকারি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আকাশ পথে গুজরাটের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করেছেন। তকতের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সেখানে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে এই রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তকতের তা-বে গাছপালা ভেঙে পড়ায় সেখানকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাড়ে ১৬ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বন্ধ হয়ে আছে ছয়শরও বেশি রাস্তা। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এক হাজার কোটি রুপির আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে গুজরাটে জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেশি ভুগতে থাকা রাজ্যগুলোর অন্যতম গুজরাট। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গত তিন দিন সেখানে টিকাদান কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। বৃহস্পতিবার থেকে তা আবার শুরু করার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।