মণিরামপুরের গোপিকান্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার মণিরামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন একই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য মতিয়ার রহমান (৬৭)। মণিরামপুর থানার সাধারণ ডায়েরী নম্বর ৮১৯, তারিখ- ২০/০৫/২০২১ ইং। দুপুরে বিদ্যালয়ের সভাপতি নিতাই চন্দ্র পাল, সদস্য মোঃ মতিয়ার রহমান ও বিদ্যালয়ের সহকারি সিনিয়র শিক্ষক মোঃ আবদুল জলিল থানায় এসে ডায়েরী করেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন আগামী ডিসেম্বরে তিনি চাকুরী থেকে অবসরে যাবেন। সম্প্রতি তিনি বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতির যোগসাজনে বিদ্যালয়ের রিজার্ভ ফান্ডের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের নামে একটি ভূয়া কমিটি তৈরী করে নিয়ে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে টাকা তসরুফ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে পেরে বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিচালনা কমিটির মিটিং করে গত সোমবার অফিস সহকারি আবদুল গণির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে কারণ দর্শানোর নোটিশ নিয়ে যাওয়া হয়। আবদুল গণি তার বাড়িতে গেলে প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন এবং তার দুই ছেলে আবদুল গণিকে লাঞ্চিত করে জিম্মি করে রাখে। খবর পেয়ে কমিটির সদস্য মোঃ মতিয়ার রহমান অফিস সহকারি আবদুল গণিকে জালাল উদ্দীনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করতে গেলে মতিয়ার রহমান এবং সভাপতি নিতাই চন্দ্র পালকে গালিগালাজসহ জীবন নাশের হুমকি দেয়। উপায়ন্তর না পেয়ে মতিয়ার রহমান ও সভাপতি নিতাই চন্দ্র পাল রাতে মণিরামপুর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ রফিকুল ইসলামের সহযোগিতায় চার ঘন্টার পর আবদুল গণিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হলে এলাকায় তোড়পাড়ের সৃষ্টি হয়। জালাল উদ্দীন ও তার দুই ছেলে বেপরোয়া হয়ে সভাপতি নিতাই এবং সদস্য মতিয়ার কে জীবন নাশের হুমকি অব্যাহত রাখায় গতকাল থানায় এ ডায়েরী করেন। গতকাল শিক্ষক আবদুল জলিল, সিনিয়র শিক্ষক ইমরান আলী, ওয়াজেদ আলী, সভাপতি নিতাই চন্দ্র পাল, সদস্য মতিয়ার রহমান সাংবাদিকদের জানান, গত ২০বছর আগে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদ্যালয়ের নামে প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীনের কাছ থেকে ১২শতক জমি ক্রয় করেন।
অভিযোগ রয়েছেন, প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন আজও বিদ্যালয়ের অনুকূলে সেই জমি বুঝে দেননি। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের নামে ২২ শতক চাষযোগ্য জমি সাবেক সভাপতি আবদুল আজিজ সরদার এবং প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন ওই গ্রামের আলী আকবর নামের এক ব্যক্তির কাছে ৪০ হাজার টাকায় বন্ধক রেখে দেয়। যেটা আদৌ আইন সম্মত নয় বলে দাবী করেছেন বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
এসব বিষয় নিয়ে বর্তমানে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ বিভিন্ন সময় মিটিংএ উত্থাপন করলে প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের অব্যাহত রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আবদুল আজিজ সরদার এবং প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন ২৪ লক্ষ টাকা নিয়ে দু’জন শিক্ষককে নিয়োগ দেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। তারা বিদ্যালয়ের কর্মরত থাকলেও আজও পর্যন্ত সেই ২৪ লক্ষ টাকার হিসাব দেননি জালাল উদ্দীন। বিষয়টি নিয়েও বর্তমানে জোরালো হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরিচালনা কমিটির একটি অভিযোগ পত্র হাতে পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।