কালিগঞ্জের বসন্তপুরে অবস্থিত ‘রিভার ড্রাইভ ইকো পার্কে’ ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নিকট থেকে ব্লাকমেইল করে টাকাসহ জিনিসপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এই প্রতারক ও ছিনতাইকারী চক্রের কারণে পর্যটনের জন্য সম্ভাবনায় এই অঞ্চলটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, রাজা প্রতাপাদিত্য’র কাকা বসন্ত রায় এর স্মৃতি বিজড়িত এই অঞ্চল। এখানে একসময় নৌ বন্দরও ছিলো। সম্প্রতি গণ্যমাধ্যমে এই অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সহযোগিতায় এই এলাকার ৩ একর জমির উপর নির্মিত হয় রিভার ড্রাইভ ইকো পার্ক। যার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ চলমান।
প্রতিদিন এই পার্কে ও পার্ক সংলগ্ন ইছামতি নদীর তীরে বিভিন্ন স্থানের মানুষ একটু বিনোদনের জন্য আসেন। বিশেষ করে বিকেলের দিকে প্রচুর দর্শনার্থীর আনাগোনা লক্ষ্য করা যায় এখানে। এই সুযোগে ছিনতাইকারী ও প্রতারক চক্র একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ১৬ মে কালিগঞ্জের এক মেয়ে ও ঢাকার তিতুমির কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তার দুইজন মেয়ে বন্ধু ও একজন বড় ভাইকে নিয়ে পার্কে যান বেড়াতে। ওই সুযোগে ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম নেতা উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের হাড়দ্দহা গ্রামের মৃত মোকছেদ আলী গাজীর ছেলে মাছিদুল ইসলাম ওরফে মাছি (৩৮) নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে কয়েকজন সদস্য ঘুরতে আসা ওই ৪ জনকে আটক করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাছি তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। ৪ দর্শনার্থী মোবাইল ও টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মাছি গ্রুপ তাদেরকে মারপিট করে। পরবর্তীতে বিজিবি’র সহযোগিতায় তারা মুক্তি পান মাছি বাহিনীর হাত থেকে।
এঘটনায় গত ১৯ মে ভুক্তভোগী ছাত্রী নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুকে অভিযুক্ত মাছিদুল ইসলামের একটি ছবি দিয়ে সবাইকে সতর্ক করে একাটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে ওই কলেজছাত্রী লেখেন, ‘‘কালিগঞ্জ বসন্তপুর বর্ডারে ছেলেরা-মেয়েরা ভাইবোন একসাথে ঘুরতে গেলে অবশ্যই সাবাধানতা অবলম্বন করবেন। কারণ ছবিতে যে পশুকে দেখা যাচ্ছে এই পশু যারে তারে ধরে মোবাইল, ম্যানিব্যাগ নিয়ে নিচ্ছে। নিজের এলাকাতে এমনটা হবে ভাবতে পারিনি। না দিতে রাজি হলে মারধর করছে। এমনকি মেয়েদের হাতধরেও টানাটানি করছে। তাই আপনাদের মা বোনেরা তাদের নিজেদের এলাকাতেও সেভ না। এজন্য এদের থেকে দূরে থাকুন। ভালো মানুষের মুখোষ পরে আর কতদিন যাবে’’। তবে স্থানীয় দু’জন জনপ্রতিনিধির মধ্যস্থতায় অভিযুক্ত মাছিদুল ওরফে মাছি ছাত্রীর বাড়িতে যেয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে স্ট্যাটাসটি তিনি ফেসবুক আইডি থেকে ডিলিট করেন বলে জানা গেছে। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে স্ট্যাটাসটি দেখে প্রচুর মানুষকে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাতে দেখা গেছে।
ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীর বড় ভাই বলেন, গত ১৬ মে আমাদের বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল। অনুষ্ঠানের অতিথিদের মধ্যে থেকে আমার বোনসহ তিনটি মেয়ে ও একটি ছেলে আমাদের গ্রামে অবস্থিত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ইকো পার্কে গিয়েছিলো। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মাছিদুল ইসলাম ওরফে মাছি তাদেরকে আটকিয়ে মোবাইলসহ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। আমার কলেজ পড়-য়া বোনসহ তার সাথে থাকা অতিথিরা দিতে না চাইলে তাদেরকে মারধর করে মাছিসহ তার গ্রুপের সদস্যরা।
এব্যাপারে অভিযুক্ত মাছিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ১৬ তারিখ সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রাস্তার পাশে খারাপ কাজ করছিলো। অন্য দুইজন একটু দূরে দাড়িয়েছিল। আমি দেখতে পেয়ে তাদেরকে বাঁধা দিই। ওই সময়ে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলেটি আমাকে আঘাত করে আমিও তাকে আঘাত করি। তবে কোন মেয়ের গায়ে হাত দেইনি।
সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রাস্তার উপর কিভাবে খারাপ কাজ হয় জানতে চাইলে মাছিদুল ইসলাম বলেন, আপনার যদি দেখতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে এই রাস্তার পাশে অবস্থিত ভাটার ওই দিকে যান দেখতে পাবেন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় মাছিদুলের ওই কথার কোন ভিত্তি নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতিনিয়ত এই পার্কে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদেরকে ব্লাক মেইল, ভয়-ভীতি দেখিয়ে কয়েকটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। তাদের কাজ সারাদিন পার্কের আশপাশে ঘুরে বেড়ানো আর মানুষদেরকে ব্লাকমেইল করে টাকা কামানো।
কালিগঞ্জ থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি এইমাত্র শুনলাম। আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি আমি দেখছি।