বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের অধিকাংশ শয্যাই এখন শূন্য। তারপরও দুশ্চিন্তায় রয়েছে স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। কারণ আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ফের করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। মূলত করোনার সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে গাদাগাদি করে গ্রামে যাওয়া ও ঈদ শেষে শহরে ফিরে আসা লাখো মানুষের জন¯্রােতের কারণে ফের সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি ৪২টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট সাধারণ শয্যা ৫ হাজার ২৪১টি (১৫টি সরকারি হাসপাতালে শয্যা ৩ হাজার ৪৪০ এবং বেসরকারি ২৭টিতে এক হাজার ৮০১টি)। সরকারি হাসপাতালে বর্তমানে প্রায় পৌণে ৩ হাজার শয্যা এবং বেসরকারি হাসপাতালে দেড় হাজারের বেশি শয্যা খালি অবস্থায় আছে। শতাংশের হিসাবে সরকারি হাসপাতালের ৮০ শতাংশ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৯৩ শতাংশ সাধারণ শয্যা রোগীশূন্য। তাছাড়া সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৮৫৫টি আইসিইউ (সরকারি ৩৭৪ ও বেসরকারি ৪৮১টি) শয্যার অধিকাংশই খালি। শতাংশের হিসাবে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে আইসিইউ শয্যা ৭৫ শতাংশ খালি। তার মধ্যে সরকারিতে ৬৬ শতাংশ এবং বেসরকারিতে ৮১ শতাংশ আইসিইউ শয্যা খালি।
সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন দেশে টানা করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু সংখ্যা কমে এসেছে। অথচ মাসখানেক আগে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ৭ হাজার এবং মৃত্যু শতক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। তবে তাতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। ঈদের আগে যেভাবে মানুষ বাড়ি ফিরেছে তাতে সংক্রমণ বাড়ার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সারাদেশে করোনা চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক শয্যা, আইসিইউ ও আইসিইউ সমতূল্য শয্যা, হাই ডিপেনডেনসি শয্যা, হাইফ্লো নাজেল ক্যানুলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের মজুদ রয়েছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, করোনার সংক্রমণ অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকলে নির্দিষ্ট সময় পর অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে এদেশে এমনটা হওয়া অমূলক নয়। তাই সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ঈদে যারা গ্রামে গেছে তাদেরকে ঈদের আগের মতোই গাদাগাদি করে শহরে ফিরে না এসে এক দুই সপ্তাহ পর ফিরে আসার অনুরোধ জানান। করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এদেশ করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝামাঝি আছে। একসঙ্গে লাখো মানুষ ফিরে আসলে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়বে। দেশে চলমান টিকাদান কার্যক্রম আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হচ্ছে। বিভিন্ন উৎস্য থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।