রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এখন প্রতিষ্ঠানটির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রুস্তম আলী আহম্মেদ। এ পদে আসীন হয়েছেন গত ৩০ এপ্রিল। তবে তিনি এ দায়িত্ব পালন করছেন নিজ দায়িত্বের পর অতিরিক্ত হিসেবে। যে কারণে ভিসির রুটিন দায়িত্ব হিসেবে ওই দিন থেকেই অতিরিক্ত কাজ করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন কোষাধ্যক্ষ। গুরুত্বপূর্ন এমন দুইটি পদ একা সামলাতে গিয়ে উভয় সংকটে পড়ায় প্রশাসনিক কাজে ইতিমধ্যেই স্থবিরতা এসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর বর্তমানে ভিসি পদে প্রায় এক ডজন নিয়োগ প্রত্যাশীরা সরকারের শীর্ষ মহলে জোর তদবীর চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শনিবার (২২ মে) সন্ধ্যায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয়টিতে নিয়মিত ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
রামেবি সূত্র মতে, প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ এ পদটি শূন্য হয়েছে গত ৩০ এপ্রিল। আর সদ্য প্রতিষ্ঠিত এ বিশ^বিদ্যালয়টির গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার কারণে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারক লিপি দিয়েছেন রাজশাহীর একটি জনপ্রিয় অরাজনৈতিক সংগঠন। জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের ব্যানারে দেওয়া ওই স্মারক লিপিতে জরুরি ভিত্তিতে একজন সৎ, যোগ্য ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভিসি নিয়োগ করারও দাবি জানানো হয়েছে।
প্রাপ্ত সূত্র মতে, ২০১৬ সালের আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রথম ভিসি নিয়োগের মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু সাবেক ওই প্রথম ভিসির বিরুদ্ধে বহু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগসহ বিভিন্ন কারণে গত চার বছরেও বিশ^বিদ্যালয়টির দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। এমনকি বিশ^বিদ্যালয়টির নিজস্ব অর্গানোগ্রাম, সংবিধি এবং জমি অধিগ্রহনের কাজও আজ পর্যন্ত শুরু হয়নি। প্রায় ৪টি বছর এমন এলোমেলো পরিস্থিতির মধ্যে সময় পার করার পর এখন অবসরে ভিসি ডা. মাসুম হাবীব। আর বর্তমানে নিয়মিত ভিসি না থাকায় নীতি নির্ধারণী কাজসহ চলমান অনেক গুরুত্বপূূর্ণ কাজ স্থবির হয়ে আছে।
এদিকে নিয়মিত ভিসি নিয়োগ না হওয়ায় ওই পদে প্রায় ডজন খানেক নিয়োগ প্রত্যাশীরা সরকারের শীর্ষ মহলে জোর তদবীর চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভাব্য ভিসির দৌঁড়ে প্রথম দিকে প্রায় এক ডজন চিকিৎসকের নাম শোনা গেলেও শেষ মূহুর্তে দু’জনের নাম রয়েছে আলোচনার শীর্ষে। তাদের একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বর্তমান পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) সাবেক অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. একেএম আহসান হাবিব, অন্যজন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডা. মোস্তাক হোসেন।
সূত্র বলছে, ডা. আহসান হাবিব বিএমএ’র প্রাক্তন কাউন্সিলর এবং স্বাচিপের আজীবন সদস্য। বৃহত্তর রাজশাহীর মানুষ প্রগতিশীল এই চিকিৎসকের উপাধ্যক্ষ, অধ্যক্ষ এবং পরিচালক হিসেবে ১০ বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকায় সরকার তাকেই ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিবেন বলে গুঞ্জন চলছে। অন্যদিকে, ডা. মোস্তাক হোসেন তুহিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ২০তম ব্যাচের ছাত্র ছিল। এছাড়াও তিনি ছাত্র অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে সকল নিয়োগ প্রত্যাশীদের প্রশাসনিক দক্ষতাসহ সার্বিক বিষয়ে সরকার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন সূত্রটি।
নতুন এই মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের দ্রুত পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে কেমন ভিসি প্রয়োজন জানতে চাইলে শনিবার (২২ মে) সন্ধ্যায় রাজশাহী জেলা স্বাচিপ সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সৎ, দক্ষ এবং অভিজ্ঞ একজন প্রগতিশীল চিকিৎসককে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। নয়তো পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের ন্যয় এখানেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।’
একই বিষয়ে রাজশাহীর অরাজনৈতিক সংগঠন জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়কে শক্তভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভিসির প্রয়োজন। এক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি হলে প্রকৃত শিক্ষাগ্রহন হতে বঞ্চিত হবে শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের ন্যয়। আর এ বিষয়টিও গত ৩ মে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া স্মারক লিপিতে উল্লেখ করেছি।