নগদ সহায়তার জাদুতে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের নতুন রেকর্ড হচ্ছে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২ সরকার শতাংশ নগদ সহায়তা ঘোষণা করে। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী ৫ হাজার ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ সহায়তা পেতে কোনো কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে হয় না। বর্তমানে একশ’ টাকা রেমিট্যান্স আনলে বাড়তি ২ টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এভাবে পুরো বছরে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকার বরাদ্দ ৯ মাসেই শেষ হয়ে গেছে। নগদ সহায়তার জাদুতে দেশে রেমিট্যান্সের রেকর্ড ভেঙে রেকর্ড গড়ছে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে নগদ সহায়তা। ইতিমধ্যে বরাদ্দ শেষ হয়ে যাওয়ায় ৩ মাসের রেমিট্যান্সের বিপরীতে নগদ সহায়তা পরিশোধে আরো ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নগদ সহায়তার জাদুতে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্সের রেকর্ড গড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইতে রেমিট্যান্সের ৬২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। এর পরের মাসগুলোতে ওই প্রবৃদ্ধি ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে ছিল। মার্চে প্রবৃদ্ধি হয় ৫০ শতাংশ। আর সর্বশেষ গত এপ্রিলে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয় ৮৯ শতাংশ, যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ। ফলে অর্থ বছরের ২ মাস বাকি থাকতেই অর্থাৎ ১০ মাসে দেশে আহরিত রেমিট্যান্স গত অর্থবছরে থেকে বেড়ে গেছে। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার, যেখানে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে এসেছে (জুলাই-এপ্রিল) ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে পুরো অর্থবছর শেষে তা আড়াই হাজার কোটি ডলার ছেড়ে যেতে পারে। রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে এলেই সুবিধাভোগীদের ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়া হয়। আর ৫ হাজার ডলার বা ৫ লাখ টাকার ওপরে কেউ রেমিট্যান্স পাঠালে নগদ সহায়তা পেতে হলে প্রবাসীদের সামগ্রিক তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়ে থাকে।
সূত্র জানায়, রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার নগদ সহায়তা ঘোষণা করার পরপরই রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ ওই দুই অর্থবছরে এক টানা রেমিট্যান্স প্রবাহের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। যেমন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয় ঋণাত্মক আড়াই শতাংশ। তার পরের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি আরো কমে হয় ঋণাত্মক সাড়ে ১৪ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে এক টানা রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয় ১৭ শতাংশ, তার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয় ১০ শতাংশ। সর্বশেষ গেলো অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয় সাড়ে ১২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরেও রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ শতাংশ।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে যে কোনো অঙ্কের রেমিট্যান্সের বিপরীতে ২ শতাংশ নগদ সহায়তা সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণের জন্য অর্থ ছাড় করে থাকে সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৭৬৫ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছিল। দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের জন্য ছাড় করা হয় ১ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। আর তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) জন্য ছাড় করা হয় ১ হাজার কোটি টাকা। ৯ মাসে ছাড় করা হয়েছে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অথচ পুরো অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেও ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। আর চলতি অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরের জন্যও একই অর্থাৎ ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তার বিপরীতে বরাদ্দকৃত নগদ সহায়তার পুরো অর্থই ইতিমধ্যে ছাড় করা হয়েছে এবং ৯ মাসেই পুরো বরাদ্দ শেষ হয়ে গেছে। সামনের ৩ মাসের জন্য যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসবে তার বিপরীতে ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেয়া হবে। সেজন্য ইতিমধ্যে বাজেটের অন্য খাত থেকে এনে এ খাতে আরো ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দেশের প্রায় সূচকগুলো ঋণাত্মক হয়ে পড়লেও মাত্র ২ শতাংশ নগদ সহায়তার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। তবে শুধু প্রবাসীরাই তাদের কষ্টার্জিত অর্থই পাঠাচ্ছে না, যারা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা বিদেশে নিয়ে গিয়েছিল তারাও বিভিন্নভাবে রেমিট্যান্স আকারে পাঠাচ্ছে। যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করলেই বেরিয়ে যাবে। তবে আশার কথা হলো যে ফর্মেটেই হোক রেমিট্যান্স আকারে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। আর নগদ সহায়তা যেন সহজেই সুবিধাভোগীরা গ্রহণ করতে পারেন সেজন্য ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করেছে। আগে কেউ যেন নগদ সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো নয়ছয়ের আশ্রয় না নিতে পারে সেজন্য তাদের কাগজপত্রাদি অধিকতর যাচাই-বাছাই করা হতো। কিন্তু নীতিমালা শিথিল করায় এখন আর সে প্রক্রিয়া থাকবে না।