শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ চত্বরে গত ১৯ মে বুধবার নালিতাবাড়ী পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিকের উপস্থিতিতে তার অনুসারীদের দ্বারা জেলা ছাত্রলীগের উপ-মানব বিষয়ক সম্পাদক ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক সাব্বির আহমেদ বাদশার উপর বর্বরোচিত হামলা করে মারাত্বক ভাবে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পরদিন ২০ মে বৃহস্পতিবার দুপরে সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে দিবালোকে কয়েকটি মোটরসাইকেল করে আড়াইহাতি লাঠি ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নালিতাবাড়ী শহর প্রদক্ষিন করার পর নালিতাবাড়ী ছাত্রলীগের অফিস ও বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদের অফিসটি ভেঙ্গে চুড়মার করে ফেলে। পৌর শহরের উত্তর বাজারস্থ অফিস কার্যালয়ে ভাংচুরের ঘটনার পর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বসির আহম্মেদ বাদল উত্তরবাজারস্থ অফিসে প্রাথমিক তদন্তে আসে এবং সেখানে বসে ছাত্রলীগ নেতাসহ অনেকের সাথে কথা বলেন।
এদিকে নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদে ভিতরে ছাত্রলীগ নেতা উপড় হামলা করার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নালিতাবাড়ী থানা কে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। একই সাথে নালিতাবাড়ী থানায় ১১জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সাব্বিরের বাবা। এদিকে অফিস ভাংচুরের ঘটনায় নালিতাবাড়ী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এনিয়ে ২টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অপরদিকে ছাত্রলীগ নেতাকে মারপিটের ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ সামজিক যোগযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনার পর উপজেলা নিবার্হী অফিস ও উপজেলা পরিষদ রোমসহ নিরাপত্তা চেয়ে বাড়তি পুলিশ মোতায়েনের জন্য নালিতাবাড়ী থানা পুলিশকে চিঠি দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন। উপজেলা পরিষদের ভিতরে হামলা ও অফিস ভাংচৃুরের ঘটনায় নালিতাবাড়ীতে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং সর্বমহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
এলাকাবাসী, অভিযোগকারী, পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, আবু ব্কর সিদ্দিক মেয়রের উপস্থিতিতেই মেয়রের কর্মীরা সাব্বিরকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেছে সাব্বিরের পরিবার। এই ঘটনার পর একটি সিসিটিভি ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, ১৯ মে বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি মিটিং শেষে ফেরার পথে উপজেলা পরিষদের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিককে কে সালাম দেন ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির আহম্মেদ বাদশা। সালাম দেয়ার পর পরই মেয়রের কর্মীরা তাকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি দিতে থাকে। পরে মোটর সাইকেলে চাবি দিয়ে সাব্বিরের তার পিঠে আঘাতে শরীর রক্তাক্ত ও মাথায় মারাত্বক আঘাতে পাকায় পড়ে যায়। পরে পাকাতে ফেলা অবস্থায় বুকে পিঠে লাথি মারতে থাকে এবং সাথে থাকা ম্বোাইলটি নিয়ে নেয়। পরে মেয়র সেখানেই তার কর্মীদের ফিরিয়ে নিয়ে যান। একই সময়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু সাব্বির কে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী হাসপাতালে পাঠায়। পরদিন ২০ মে বৃহস্পতিবার দুপরে সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে দিবালোকে কয়েকটি মোটরসাইকেল করে আড়াইহাতি লাঠি ও অস্ত্র নিয়ে নালিতাবাড়ী শহর প্রদক্ষিন করার পর নালিতাবাড়ী ছাত্রলীগের উত্তর বাজারস্থ বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদের অফিসটি ভেঙ্গে চুড়মার করে ফেলে। একই সাথে অফিসের উল্টো পাশে ফেসটুন ব্যানারও ছিড়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় সাব্বিরের বাবা আবদুল মতিন বাদী হয়ে ২০ মে রাতে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ২০ জনকে আসামি করে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা করেছেন।
সাব্বিরের বাবা আবদুল মতিন বলেন, বুধবার মিটিং শেষ করে মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক বাক্কার তার কর্মীদের নিয়ে দোতলা থেকে নিচে নামার সময় আমার ছেলে সাব্বির মেয়রকে দেখেই সালাম দেন। সালামের জবাব না দিয়ে মেয়র তাকে ধমক দিয়ে বলেছেন “এই বেয়াদব তুই এহেনে কি করস রে”। এটা বলে উনি যাওয়ার পরই তার (মেয়রের) অনুসারীরা তাকে মারধর শুরু করে। পরে নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান লেবু সাব (উপজেলা চেয়ারম্যান) আমার ছেলেকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী হাসপাতালে পাঠানোর পর আমি খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলে ডাক্তাররা ময়মনসিংহে আমার ছেলেকে রেফার্ড করছেন। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার চাই। এ সময় সাব্বিরের হাতে থাকা এন্ডরয়েড মোবাইলটি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এদিকে এ ঘটনার জেরধরেই ২০ মে বিকেলে নালিতাবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের অফিস ভাংচুর করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় জড়িতদের শাস্তি দাবী করে পোষ্ট করতে দেখা গেছে। শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শোয়েব আহমেদ শাকিল বলেন, “আওয়ামলীগের একজন মেয়রের সামনে একজন ছাত্রলীগ কর্মী ও জেলা ছাত্রলীগের একজন পোষ্টেড নেতাকে মারধরের ঘটনা লজ্জাজনক। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, মেয়রের সাথে থাকা ছেলেগুলোই সাব্বিরের উপর হামলা করেছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমাদের অনুরোধ, দ্রুত এর সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আানা হোক।
নালিতাবাড়ী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বসির আহমেদ বাদল বলেন, সাব্বিরের বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। আসামি গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। এদিকে এই ঘটনার পর উপজেলা চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে পুলিশকে চিঠি দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন। এদিকে যখন এ ঘটনাটি হয় তখন প্রচুর বৃষ্টি শুরু হয়। এর পূর্বে কয়েকটি মোটর সাইকেলে করে লাঠি নিয়ে যখন তারা বের হয় তখন আমি খবর পেয়ে বের হই। পরে আমি অফিসে এসে ছাত্রলীগের কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি এবং সেখানে আমি অবস্থান করেছি। এ বিষয়ে আরো অধিকতর তদন্ত করে উত্তর বাজাস্থ অফিস ভাংুচরের ঘটনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক সাংবাদিকদের মুঠোফোনে বলেন, এই ঘটনার সাথে আমি বা আমার কোন কর্মী সমর্থক জড়িত না। যারা এই কাজের সাথে জড়িত আমি নিজেও তাদের বিচার চাই।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ কে লিখিত জানানো হয়েছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু বলেন, ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক। উপজেলা পরিষদ ভবনে একজন ছাত্রলীগ নেতার উপর হামলা নিন্দার কাজ। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা ও সামাজিক অস্থিরতা বিরাজকারীদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার সময় এসেছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথ্য ও গবেষনা পরিষদ উপ-কমিটির সম্মানিত সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা বলেন, এগুলি মাদক সেবীদের জগন্যতম কাজ। এগুলির কারণে আজ সমাজ ধ্বংস হচ্ছে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আর সাব্বিরের হামলা অফিস ভাংচুর এটা কোন সভ্য বিবেকবান মানুষের কাজ নয়। এসব অন্যায় কাজের বিরোদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে আইন ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।