ঘূর্নিঝড় ‘যশ’ এর আঘাত হানার আশংকায় ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। সার্বক্ষনিক কন্ট্রোলরুম খোলা রাখার পাশাপাশি একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানসহ সিপিপি সদস্যদেরকে প্রস্তুত থাকতে উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক অনুষ্ঠিত জরুরি সভা থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা কম হওয়ায় উপকূলের সোয়া লক্ষ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে।
মেঘনা ও বঙ্গোপসাগর মোহনায় অবস্থিত এই দ্বীপ উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন ও ছোট-বড় ১০ টি চর রয়েছে। প্রতিনিয়ত দুর্যোগ ও ঘূর্ণীঝড়ের সাথে মোকাবেলা করে বসবাস করে এখানারকার বাসিন্দারা। স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও এই দ্বীপে আজও ঘূর্ণীঝড় কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় গড়ে ওঠেনি পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র। তাই ঘূর্ণীঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই আঁতকে উঠেন স্থানীয়রা।
এদিকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের আরেকটি বিচ্ছিন্ন অংশ চর কলাতলী। যেখানে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। তবে বেড়ীবাঁধ নেই। বেড়ীবাঁধহীন এই চরে মেঘনার পানি একটু বৃদ্ধি পেলেই ৩-৪ ফুট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। শুধু চর কলাতলী-ই নয় চরনিজাম, কাজিরচর, মহাজনকান্দি, ঢালচর সহ এইরকম বিচ্ছিন্ন আরো ১০ টি চরে আনুমানিক ৩০ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ঘূর্ণীঝড় আঘাত হানলে এই উপকূলে আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালে ঘূর্ণীঝড় গোর্কির (যা ভোলা সাইক্লোন নামে পরিচিত) আঘাতে তখনকার সময়ে বেড়ীবাঁধহীন মনপুরায় আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বন্যার পানিতে ভেসে যায় প্রায় লক্ষাধিকের উপরে গৃহপালিত পশু-পাখি। এরপর ১৮৮, ১৯৯১ এর সালের ঘূর্ণীঝড়সহ সিডর, আইলা, নার্গিস ও আম্পান এ এই উপকূলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমানটা একটু বেশি।
উপজেলা এলজিইডি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ৫৯টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রর মধ্যে ৪০টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারিতাস সাইক্লোন শেল্টার ১২টি, রেডক্রিসেন্ট সাইক্লোন শেল্টার ৭টি এবং মাটির কিল্লা ৩টি যা দূর্যোগ মোকাবেলায় অপ্রতুল। এছাড়াও সরকারী-বেসরকারী ভবন সহ আশ্রয়কেন্দ্রে সবমিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। তবে দুর্যোগ আঘাত হানলে আশ্রয় নিতে না পারা মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এই ব্যাপারে বিচ্ছিন্ন কলাতলীর চরের বাসিন্দা আল মামুন, আরজু, শমসের, কালাম, রসিদ, কামাল, হাসনা, রফিজল, রাসেদসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, ঘূর্ণীঝড়ের কথা জানতে পারলে ভয়ে থাকি। আশ্রয়কেন্দ্রে যাই না জায়গা হয়না, তাই ঘরের মধ্যে থাইকা আল্লারে ডাকি। চরে বেড়ীবাঁধ সহ আরো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মানের দাবী করেন চরবাসী।
এই ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াছ মিয়া জানান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ৩ টি সাইক্লোন সেন্টার নির্মানের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামীম মিঞা বলেন, বিচ্ছিন্ন উপকূল মনপুরায় জনসংখ্যার তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্র কম। আরো নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মানের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিচ্ছিন্ন চরকলাতলীতে বেড়ীবাঁধ নির্মানে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।