বগুড়ার নন্দীগ্রামে উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ রণবাঘা হাট কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ইজারা বাতিলের দাবিতে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন গত দু’দিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। আগামী মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের সামনে ইজারা বাতিলের দাবিতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আধাঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আ.লীগ নেতা স্বপন চন্দ্র, মুকুল হোসেন, শামীম শেখ, সরফুল হক উজ্জল, শাজাহান আলী, আবদুর রাজ্জাক, আনন্দ কুমার, কৃষকলীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক সাঈদ রায়হান, শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক এনামুল হক, যুগ্ম-আহবায়ক সানোয়ার হোসেন মিলন, স্বেচ্ছা সেবকলীগের সভাপতি আবু সাঈদ, সাধারন সম্পাদক কামরুল হাসান সবুজ, যুবলীগ নেতা এমআর জামান রাশেল, আকতার হোসেন, মোফাজ্জল বারী, ছাত্রলীগের সভাপতি তুহিন আহমেদ, সাধারন সম্পাদক শুভ আহমেদ প্রমূখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নন্দীগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের রণবাঘা হাটটি উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম হাট। প্রতি বছর এ হাট থেকে কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলা ১৪২৮ সনের ইজারার জন্য পত্রিকায় দরপত্র আহবান করা হয়। সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয় এক কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ২৬৫ টাকা। সিডিউল বিক্রির শেষ তারিখ ছিল গত ২৮ এপ্রিল। পঞ্চম ধাপে দরপত্র গ্রহণের শেষ দিন গত ২৯ এপ্রিল মেসার্স রাহী এন্টারপ্রাইজ ৮৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার দরপত্র দাখিল করে। যা সরকারি মূল্যের চেয়ে ৩২ লাখ ২৯ হাজার ২৬৫ টাকা কম। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। গত ১৪২৭ সনে রণবাঘা হাট ইজারা দেয়া হয় এক কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার টাকায়।
তিনি আরো বলেন, মেসার্স রাহী এন্টারপ্রাইজ কালো তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠান। এর মালিক বগুড়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম রেজাউল করিম তানসেন। তবে সিডিউলে মালিকের জায়গায় কৌশলে আ: করিম উল্লেখ করা হয়েছে। হাট ইজারা প্রদানের ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়নি। তাই রণবাঘা হাটের ইজারা বাতিল করা না হলে মঙ্গলবার ইউএনও অফিসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। এতেও কাজ না হলে পরবর্তীতে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ বলেন, সরকারি হাট-বাজার ইজারা নীতিমালার ২-এর ১০ উপধারা অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন হাট-বাজার ইজারার ক্ষেত্রে পরিষদের সাধারণ বা বিশেষ সভার কার্যবিবরণীসহ মতামত চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি; হাট ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে পরিষদকে অবহিত করা হয়নি। সাবেক সংসদ সদস্য একেএম রেজাউল করিম তানসেনকে সরকারি মূল্যের চেয়ে অনেক কমে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইজারাদারের নাম জালিয়াতি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা হাট-বাজার কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিফা নুসরাত জানান, হাট ইজারার জন্য দরপত্র ক্রয় ও দাখিলের পাঁচটি আলাদা তারিখ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রথম চার দফায় কেউ ডাকে অংশ নেননি। পঞ্চম দফায় একজন ইজারাদার ৮৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ডাক দেন। সরকার মূল্যের চেয়ে কম হলেও সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নীতিমালা অনুসারে জেলা প্রশাসক তাকে ইজারা দিয়েছেন। আর ইজারা গ্রহিতা যে দর দিয়েছেন তা ৩৬৫ দিন খাস আদায়ের চেয়েও বেশি। তবে দরটি ভ্যাটসহ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তাই হাট ইজারা প্রদানে কোন অনিয়ম হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা জাসদের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি একেএম রেজাউল করিম তানসেন বলেছেন, হাট-বাজার ইজারা নিতে ঠিকাদারি লাইসেন্স লাগেনা। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে তার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাহী এন্টারপ্রাইজ হাটটি ইজারা পেয়েছে। রাহী এন্টারপ্রাইজ, প্রোপাইটার আ: করিম আমার প্রতিষ্ঠান। স্বল্প দরে ইজারা নিতে ও সরকারি মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করতে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি অযৌক্তিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।