বাঁশের কয়েকটি খুঁটির উপর দাঁড় করানো ছোট্ট একটি ঝুপরি ঘর। এলাকাবাসী স্থানীয় চেয়ারম্যান এর সাহায্য দেওয়া অর্থ দিয়ে কয়টা ঢেউটিন দিয়ে মোড়ানো নড়বড়ে এ ঘরটিতে স্বামী পরিত্যক্ত মেয়ে ও দুই নাতিকে নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে বৃদ্ধা সোনামতি (৭৫)।
প্রায় ৭৫ বছর বয়সী এ বৃদ্ধা স্বামী হারিয়ে বর্তমানে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে কোনো রকম জীবনের ঘানি টেনে যাচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ২নং আমগাও ইউনিয়নের জামুনগাজী বস্তি গ্রামের বাসিন্দা সোনামতির ভাগ্যে এখনো পর্যন্ত জোটেনি সরকারি ঘর। কিছু দিন বয়স্ক ভাতা পেলোও অজ্ঞাত কারণে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। তার বয়স্ক ভাতার কার্ডটি চালু করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছে।
সোমবার (২৪ মে) সকালে সোনামতির সাথে কথা বলে জানা গেছে, তার জীবনের দুর্বিষহ কষ্টের ইতিহাস। তিনি জানান, প্রায় ৫ বছর পূর্বে স্বামী তহরিল আলী মারা যান। হতদরিদ্র স্বামী সোনামতির জন্য শুধুমাত্র বসত ভিটে ৩ শতক জমি ছাড়া অন্য কোনো সহায়-সম্পদ রেখে যাননি। স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামী পরিত্যক্ত এক মেয়ে ও দুই নাতিকে নিয়ে অন্েযর বাড়িতে কাজ করে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করতো।
বয়সের জন্য বৃদ্ধ সোনামতি কোনো কাজই এখন আর করতে পারেন না। তাই কোনো উপায় না দেখে বর্তমানে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জীবন চালাচ্ছেন।
সোনামতি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পৃথিবীতে আমার কেউ নাই। ঘর নাই। খাবার নাই। আমাকে দেখার মতো কেউ নাই। সরকারি কোনো কার্ডও নাই।
তাই সরকার যেন একটি ঘর তৈরি করে দিয়ে এবং আমার বয়স্ক ভাতার কার্ডটি ঠিক করে ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে শেষ জীবনের নিরাপত্তা দেয় সে জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন। তিনি আরো বলেন,স্বামীর মৃত্যুর পর মাটির দেয়াল ও খড়ের ছাউনি ঘরে বসবাস করতাম। গত বছর কাল বৈষাখী ঝড়ে আমার একমাত্র ঘরটি বিধস্ত হয়ে গেলে আমি আশ্রয়হীন হয়ে পড়ি। আমার দূর্দশার ঘটনা স্থানীয় চেয়ারম্যান পাভেল তালুকদারের নজরে আসলে আমাকে সে কিছু ঢেউটিন এর ব্যবস্থা করে দেয়। এরপর স্থানীয় লোকজন চাদা তুলে আমাকে একচালা একটি ছোট্ট ঘর তৈরি করে দেয়। আমার এই করুন অবস্থা তুলে ধরে স্থানীয় সাংবাদিকগণ সংবাদ প্রকাশ করেন। সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার স্থানীয় এমপি পুত্র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম সুজন,উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল কাইয়ুম পুষ্প ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল করিম আমার বাড়ি পরিদর্শনে এসে আমাকে সরকারি একটি ঘর নির্মাণ করে আমার থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তূ এই আশ্বাসের এক বছর হয়ে গেলো কেউ আর আমার খবর রাখেনি,এই বলে বৃদ্ধা সোনামতি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে যায়।
সোনামতির প্রতিবেশীরা জানান, বৃদ্ধা সোনামতি সত্যি চরম অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। যে ঝুপরি ঘরটিতে সোনামতি বাস করছেন যে কোনো সময় ঝড়-তুফানে সে ঘরটিকে উড়ে যেতে পারে। মজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রতিটি উপজেলায় শতশত ঘর নির্মাণ করে বাস্তহীনদের বন্দোবস্ত করা হলেও এ অসহায় বৃদ্ধা ভাগ্েয জোটেনি সরকারি একটি ঘর। আমরা সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি, তাকে দ্রুত সরকারি অর্থায়নে একটি ঘর নির্মাণ করে নিরাপদভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।
হরিপুর উপজেলায় ৩য় কিস্তিতে দু:স্থ ও অসহায়দের মাঝে ৯শ ৩৬ টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হলেও বৃদ্ধা সোনামতির ভাগ্যে জুটেনি সে ঘর।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পাভেল তালুকদার বলেন, সোনামতির এই করুন অবস্থার বিষয়ে আমি জানি। তার একটি ঘরের জন্য আমি উপর মহলকে অবহিত করেছি। গত বছর কালবৈশাখী জড়ে তার একমাত্র ঘরটি বিধস্ত হয়ে গেলে আমি ওকে কিছু ঢেউটিন এর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। আমি তাকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা দিয়ে আসছি। তিনি আরো বলেন এই অসহায় বৃদ্ধা মহিলাকে সরকারি ভাবে একটি ঘর করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু দৃষ্টি কামনা করছি।
সোনামতির ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে জানতে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল করিম এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।