৬০ বছরের পুরাতন কালিকচ্ছের ঋষি বাড়ির চোলাই মদ উৎপাদনের কারখানায় অভিযান চালিয়েছে এস আই বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে সরাইল থানা পুলিশ। সোমবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে অভিযান। অভিযানকালে মাটির নীচ থেকে মদ তৈরীর সরঞ্জাম, কন্টিনসহ ৯০ শত লিটার মদ উদ্ধার করা হয়। উৎপাদন ও বিক্রয়ের সাথে জড়িত থাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কস্তরি রবি দাস (৫০), তার স্ত্রী অঞ্জনা রবি দাস (৩৫) ও মেয়ে চম্পা রবি দাসকে (১৮)। পুলিশের আগমন টের পেয়ে আগেই পালিয়ে গেছে আরো ৪-৫টি পরিবারের সদস্যরা। দীর্ঘ ১০-১২ বছর আলোচিত এই মদ উৎপাদন কারখানায় পুলিশি অভিযানে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ দারূন খুশি। কিন্তু চেহারা কালচে হয়ে গেছে উৎপাদন কাজের সাথে গোপনে জড়িত বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘ ৬০ বছরেরও অধিক সময় ধরে কালিকচ্ছের এই বাড়িতে চোলাই মদ উৎপাদন ও বাজারজাত করণের বিষয়টি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। এখানকার মদ স্থানীয় এক শ্রেণির লোকদের মনোরঞ্জনে ব্যবহার হয়। সেই সাথে আসক্ত হয়ে ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। দিনে রাতে সময়ে অসময়ে মদ্যপদের মাতলামি আশপাশের অনেক শিক্ষার্থী ও মহিলাদের বিব্রত করছে। সুস্থ্য পরিবার ও সমাজ গঠনের লক্ষ্যে স্থানীয় যুব সমাজ উৎপাদন বিক্রয়ে বাঁধা দিয়েছে। উল্টো তাদেরকে হামলা মামলার শিকার হয়ে কারাবরণ করতে হয়েছে। বাণিজ্যিক উদ্যেশ্যে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মাদকমুক্ত নয় যুক্ত সমাজ গঠনে কাজ করার এন্তার অভিযোগ রয়েছে। একটি গ্রুপ সংখ্যালঘুর ঝড় তুলে ফায়দা লুটার গভীর ষড়যন্ত্র করেছে একাধিকবার। ৮ বছরেরও অধিক সময় ধরে এখানে মদ উৎপাদন করে ৯টি ইউনিয়ন সহ দেশের কয়েকটি জেলায় বিপনণের বিষয়টি মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় চিৎকার করে বলে আসছিলেন সরাইল প্রেসক্লাবের প্রতিনিধিরা। কিছুই হয়নি। উৎপাদনকারীরা বলতেন সবকিছু ম্যানেজ করেই ব্যবসা করছি। অবশেষে সরাইল থানা পুলিশ এখানকার মাদক প্রতিরোধে আরেক ধাপ এগিয়ে আসল। কালিকচ্ছের দায়িত্বে থাকা এস আই বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে গতকাল পুলিশ প্রথমে পুরো ঋষি বাড়িটি চারিদিকে ঘেরাও করে। পরে বাড়িতে প্রবেশ করেন। টের পেয়ে আগেই ওই ৪-৫টি পরিবার ঘরে তালা ঝুলিয়ে সটকে পড়ে। আড়াই ঘন্টা অভিযান চালিয়ে মাটির নীচ থেকে ৪০ লিটার মদসহ ১টি ড্রাম, ১ লিটার করে পলিথিনের ১০টি প্যাক, প্রতিমা মূর্তির বরাবর মাটি কুড়ে নীচে মিলে ২০ লিটার ওজনের মদ ভর্তি ২টি কন্টিনার, ২টি বড় ডেসকি উদ্ধার করে পুলিশ। মাদক প্রতিরোধে পুলিশের এমন অভিযানে ওই এলাকার অধিকাংশ পরিবার স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলেছেন। মাদকের বিরূদ্ধে লড়াকু যুবকরা ভুলে গেছেন মিথ্যা বানোয়াট মামলায় কারাবরণের যন্ত্রণার কথা। সুখে মুছকি হাঁসছেন তারা। মো. জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ি বলেন, বর্তমান ইউপি সদস্য সুমন মিয়া এখানের মদের কারখানাকে পুঁজি করে ব্যবসা করছেন। মদপান অবস্থায় ওই বাড়ি থেকে পুলিশ দিয়ে যুবকদের আটক করায়। আবার সে-ই মধ্যস্থতা করে মোটা অংকের টাকায় ছাড়িয়ে আনে। একজন জনপ্রতিনিধি কিভাবে পুলিশের সোর্স হয় বুঝি না। সরাইল থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, মাদকের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স। এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। ওই বাড়িতে মাদক উৎপাদন ও বিক্রয় কোনটাই হবে না। মদ উৎপাদনের সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।