জবেদা বেগমের এক হাতে ঝুলি, অন্য হাতে লাঠি ভর করে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে। ধীর স্থিরভাবে ঝুলি থেকে ১৬ টাকা বের করে টেবিলের ওপর রেখে ইউএনও’র কাছে দাবি করলেন, তার একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড চাই।
জবেদা বেগম জানান, চেয়ারম্যান-মেম্বররা ভাতার কার্ডের জন্য তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেছে। সে টাকা দিতে না পারায় গত ১১ বছরে বিভিন্নজনের হাতে পায়ে ধরেও তিনি কোন সুফল পাননি। ইউএনও যেন ১৬ টাকার বিনিময়ে ভাতার কার্ডটা করে দেন এটাই তার কামনা।
৭৩ বছর বয়সের জবেদা বেগমের এলোমেলো শব্দের কথাশুনে হতবাক হয়ে যান বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গেরাকুল গ্রামের কৃতী সন্তান বর্তমানে বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার চৌকস নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কাওছার হোসেন। তাৎক্ষনিক তিনি (ইউএনও) জবেদা বেগমের গোড়াপাড়া গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই গ্রামের মৃত আলতাফ মল্লিকের স্ত্রী জবেদা বেগম নিত্যান্তই অসহায়। তার এক পুত্র কর্মঅক্ষম, অন্য পুত্র বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। প্রায়ই নিরন্ন থাকেন জবেদা।
তাকে সামনে রেখেই ইউএনও কাওছার হোসেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে ফোন দিয়ে জবেদা বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। ফলশ্রুতিতে দুই মিনিটের মধ্যেই জবেদা বেগমের নাম বয়স্ক ভাতার এমআইএস’এ এন্ট্রি হয়ে যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কাওছার হোসেন বলেন, বয়স্ক ভাতার কার্ড প্রস্তুত হওয়ার পর লোক পাঠিয়ে জবেদা বেগমকে খবর দেয়া হয়। পরবর্তীতে সোমবার (২৪ মে) তার হাতে কার্ড তুলে দেওয়ার পর তিনি যেমন হেসেছেন আবার কেঁদেছেনও। দুঃখী মানুষের হাসি সবচেয়ে যে বেশি সুন্দর হয় জবেদা বেগম তারই প্রমান দিয়েছেন বলেও ইউএনও কাওছার হোসেন উল্লেখ করেন।