সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর আগামী ১ জুলাই থেকে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু টোল প্লাজার নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় যথাসময়ে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। আর আগামী সেপ্টেম্বরের আগে টোল প্লাজার নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে না। টোল প্লাজার নির্মাণ কাজ শেষ করার পাশাপাশি অপারেটর চূড়ান্ত করার পরই ওই এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু করা হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েটি গত বছরের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মহাসড়কটিতে বর্তমানে যাতায়াতের জন্য কোনো যানবাহনকে টোল দিতে হয় না। তবে এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে থাকা ধলেশ্বরী সেতু-১, ধলেশ্বরী সেতু-২ ও আড়িয়াল খাঁ সেতু থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর টোল আদায় করছে। বিগত ১১ মে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে এক্সপ্রেসওয়েটির টোল অবকাঠামো নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা ও টোল অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে সভা হয়েছে। ওই সভায় প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, এক্সপ্রেসওয়েটির ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের জন্য টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু পদ্মা সেতুর পর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশটির জন্য টোল প্লাজার নির্মাণকাজ এখনো চলমান। কাজ শেষ করতে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আর টোল প্লাজার নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে টোল আদায় কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সংশয় রয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় কার্যক্রম শুরুর দিনক্ষণ পিছিয়ে গেলেও এক্সপ্রেসওয়েটির জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ টোল হার চূড়ান্ত করে ফেলেছে। ওই এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতি কিলোমিটার যাতায়াতের জন্য ভিত্তি টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা। যদিও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর শুরুতে কিলোমিটারপ্রতি ২০ টাকা ১৮ পয়সা টোল আদায়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। তারপর গত ফেব্রুয়ারিতে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত সংস্থাটি সাময়িক সময়ের জন্য কিলোমিটারপ্রতি ৯ টাকা ৯০ পয়সা ভিত্তি টোল আদায়ের প্রস্তাব দেয়। আর সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি টোল ১০ টাকা চূড়ান্ত করেছে মহাসড়ক বিভাগ। আর চূড়ান্ত করা টোল হার অনুযায়ী পুরো এক্সপ্রেসওয়েটিতে যাতায়াতের জন্য একটি ট্রেইলারকে টোল দিতে হবে ১ হাজার ৩৭৫ টাকা। একইভাবে ভারী ট্রাক থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক থেকে ৫৫০, বড় বাস থেকে ৪৯৫, ছোট ট্রাক থেকে ৪১২, মিনিবাস থেকে ২৭৫, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ থেকে ২২০, সেডান কার থেকে ১৩৭ টাকা ৫০ পয়সা ও মোটরসাইকেল থেকে ২৭ টাকা ৫০ পয়সা টোল আদায় করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এক্সপ্রেসওয়েটি থেকে টোল আদায়ের জন্য ইতিমধ্যে একটি দরপত্র আহ্বান করেছে। তবে দরপত্র আহ্বান করা হলেও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ টোল আদায়ের জন্য কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনকে নিযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। ওই প্রতিষ্ঠানটিকে পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়েরও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, একই প্রতিষ্ঠানকে যদি এক্সপ্রেসওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে টোল আদায়ের কাজটি ভালোভাবে সমন্বয় করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একাধিক সভাও করেছে।
এদিকে টোল প্লাজার নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী ১ জুলাই এক্সপ্রেসওয়েটি থেকে টোল আদায় শুরু না হওয়া প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর জানান, শুধু চার লেনের এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় করা হবে। ধীরগতির লেন ব্যবহারের জন্য কোনো যানবাহনকে টোল দিতে হবে না। তবে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের টোল প্লাজার কাজ এখনো শেষ হয়নি। আশা করা যায় আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এ কাজ শেষ হয়ে যাবে। তার পরই টোল আদায় শুরু করা হবে। আর অপারেটর নিয়োগে ইতিমধ্যে একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপারেটর নিযুক্ত করা হবে। আগামী ৩০ জুন ধলেশ্বরী সেতুর টোল প্লাজার ইজারাদারের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। পুরো এক্সপ্রেসওয়েটিতে টোল আদায়ের জন্য অপারেটর নিযুক্ত করার আগ পর্যন্ত সেতুটি থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিভাগীয় পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব (টোল অ্যান্ড এক্সেল শাখা) ফাহমিদা হক খান জানান, এক্সপ্রেসওয়েটিতে টোল আদায়ের পাশাপাশি সেটির রক্ষণাবেক্ষণ ও আইটিএস (ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম) গড়ে তোলা হবে। সেজন্য অভিজ্ঞ ও উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে টোল অপারেটর নিযুক্ত করার পর এক্সপ্রেসওয়েটি থেকে টোল আদায় শুরু করা হবে।