বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্নিঝড় ‘ইয়াস’ আঘাত হেনেছে উপকূলে। ‘ইয়াস’ এর কারণে বাতাসের তীব্র গতি না থাকলেও বিভিন্ন নদনদীর পাতি ৪-৫ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। পানির ¯্রােতের তীব্রতা ও টেকসই বেরিবাঁধ না থাকার কারণে বরগুনার বামনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেরিবাঁধ ভেঙ্গে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে তলিয়ে গেছে ফসলী জমি ও মাছের ঘের। অনেক এলাকায় বেরিবাঁধের বাইরে থাকা শতশত পরিবার এখন পানিবন্ধী অবস্থায় রয়েছে।
বুধবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সরেজমিনে দেখাগেছে, উপজেলার বিষখালী নদীতীরবর্তী চেঁচান এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নব নির্মিত ৪শত মিটার বেরিবাঁধটি প্রায় ৫০ ফুট জায়গায় মাটি না ফেলায় ওই জায়গা দিয়ে বিষখালী নদীর পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে চেঁচান, বেবাজিয়াখালী, কাটাখালী, ঢুসখালী ও কালিকাবাড়ি এলকা। এছাড়াও উপজেলার জাফ্রাখালী গ্রামের পানি উন্নয়নবোর্ডের ২০মিটার এলাকার বেরিবাঁধ ভেঙ্গে মঙ্গলবার রাত থেকে খালের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে ছোনবুনিয়া, জাফ্রাখালী, কালাইয়া, তালেশ্বর বুকাবুনিয়া এলাকার ফসলী জমি ও বসতঘর। এদিকে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিন রামনা গ্রামের বেরিবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে।
উপজেলার সবচেয়ে দুর্যোগ প্রবণ এলাকা ডৌয়াতলা ইউনিয়নের দক্ষিনগুদিকাটা গ্রামের বেরিবাঁধের বাইরে থাকা ২শত পরিবার প্রতিদিন দুইবার জোয়ারে তলিয়ে যায়। ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে বিষখালীর পানি ৩-৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হওয়ায় ওই এলাকাটি কর্তমানে রয়েছে পানির নিচে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পূর্বেই এখানের বাসিন্দারা গবাদিপশু, বৃদ্ধ, শিশু ও নারীদেরকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে।
বরগুনা জেলা পানিউন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, বামনা উপজেলায় ৫২ কিলোমিটার বেরিবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৫ কিলোমিটার বেরিবাঁধ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে। এসব বাঁধ গুলো সংস্কারের জন্য প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরগুনা পানিউন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে বিভিন্ন এলাকার বেরিবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে নদীর পানি প্রবেশ করায় তলিয়ে গেছে উপজেলার হাজার হাজার একর ফসলী জমি ও মাছের ঘের। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে উপজেলার কৃষি ও মৎস্য সেক্টর।
বামনা উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, বিভিন্ন এলাকায় বেরিবাঁধ ভেঙ্গে ৫হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান, ১৫০ হেক্টর জমির মুগডাল, ১০০ হেক্টর জমির মরিচ, ও ১৫৫ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। এছারাও প্রায় ৪ হেক্টর জমির পানের বরজ, ৩০ হেক্টর জমির কলা খেত এখন পানির নিচে রয়েছে।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, ঘুর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার ৪টি উইনিয়নের বেরিবাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে ৫শত মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।
জাফ্রাখালী গ্রামের বাসিন্দা মো. মহিবুল্লাহ বলেন, গত রাতে বেরিবাঁধ ভেঙ্গে প্রচন্ড বেগে পানি কৃষি জমিতে প্রবেশ করে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত পানি ফসলী জমি ও লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় আমাদের এ অঞ্চলসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের ধানের বীজ ও মাছের ঘের এখন পানির নিচে রয়েছে। দ্রুত বাঁধটি না আটকালে বসত ঘরেও লোকজন থাকতে পারবেনা।
বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বেরিবাঁধ ভেঙ্গে ফসলী জমি ও লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার বিষয়ে জানতে চাইলে বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সরকার বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্থ্য এলাকা গুলো পরিদর্শন করেছি। যেসকল এলাকায় বেরিবাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করেছে সেসব এলাকার বাঁধ গুলো দ্রুত মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে টেলিফোনে জানানো হয়েছে। এছারাও ক্ষতিগ্রস্থ্যদের তালিকা তৈরীর কাজ চলছে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার খবর আমরা পেয়েছি। ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গত মানুষের জন্য নগদ অর্থসহ আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য মজুদ আছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে আমরা দাঁড়াব।