ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে সৃষ্ট অতি জোয়ারের চাপে উপকুলবর্তী গাবুরা ও কৈখালীসহ শ্যামনগর উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও সুন্দরবন সংলগ্ন কৈখালী সম্পুর্নভাবে প্লাবিত হলেও অপর ৭টি ইউনিয়নের সব মিলিয়ে প্রায় সত্তরটি গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে।
পাশর্^বর্তী খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ, কালিন্দি, চুনকুড়িসহ অপরাপর নদীতে জোয়ারের চাপ বৃদ্ধি পেলে বুধবার বেলা এগারটার দিক উপকূল রক্ষা বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। শুরুতে বাঁধের উপর মাটি দিয়ে পানির প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করলেও জোয়ারের তীব্রতার কারণে অল্প সমেয়র মধ্যে স্থানীয়রা ‘আশা’ ছেড়ে দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুড়তে থাকে।
গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান বেলা বারটার দিকে জেলেখালী, গাগড়ামারী, নাপিতখালী ও নেবুবুনিয়া এলাকার বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ঢুকে একে একে তার ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের সবগুলো প্লাবিত করেছে। তিনি আরও জানান মঙ্গলবার রাক কিংবা বুধবার সকালে কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে না উঠলেও পানিতে গোটা এলাকা প্লাবিত হওয়ার পর মানুষ সাইক্লোৈন শেল্টারগুলোতে পৌছাতে শুরু করেছে।
কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম জানান বেলা একটার ভাঁটা শুরু হওয়ার আগেই জোয়ারের তোড়ে তার ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের সবগুলো প্লাবিত হয়েছে। তিনটি অংশের বাঁধ ভাঙলেও আরও অন্তত চল্লিশটিরও বেশী জায়গার বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে বসতঘর ও মিষ্টি পানির পুকুরগুলো ভাসিয়ে দেয়ায় সমগ্র এলাকায় বিপর্যয়ের সম্ভনা তৈরী হয়েছে।
এদিকে মুন্সিগঞ্জের সিংহড়তলী এলাকার বাঁধ ছাপিয়ে পাশের চুনকুড়ি নদীর পানি সিংহড়তলী, হরিনগর, কচুখালসিহ অন্তত চারটি গ্রাম তলিয়ে গেছে বলে জানায় স্থানীরা। মানুষ শুরুতে বাঁধ এর উপর মাটি ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করলেও প্রবল জোয়অরের তোড়ে সে চেষ্টা ব্যর্থ হলে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছে বেল জানায় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দুর্গাবটি ও দাতিনাখালীসহ পাশর্^বর্তী এলাকার বাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের সাতটি গ্রামকে প্লাবিত করেছে। এসব এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি ও রাস্তাসহ শতাধিক চিংড়ী ঘের দুপুরের অগেই জোয়ারের পানিতে তিলয়ে যায় বলে জানায় ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল।
একইভাবে পদ্মপুকুরের পাতাখালী এলাকার প্রায় দুই কিরোমিটার বাঁ উপচে এবং রমজানগেরর সন্নিকটস্থ উপকূল রক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে পানি এসে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে দুই ইউনিয়নের সাতটি গ্রামকে প্লাবিত করেছে বলে জানা যায়।
আব্দুল কাদের, জিয়াউর রহমানসহ স্থানীয়রা নদীতে ভাঁটা শুরু হলেও পানি কমছে না। ফলে রাতের জোয়ারে ইতোমধ্যে প্লাবিত অংশসমুহ আরও পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার শংকায় পড়েছে তারা। ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ও অন্তত বিশ হাজার ছোট বড় চিংড়ী ঘের প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন।
কাশিমাড়ীর চেয়ারম্যান আবদুর রউফ এবং আটুলিয়ার চেয়ারম্যান আবু সালহ জানিয়েছে দুপুরের কিছু আগে তাদের ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে নিচুঁ অংশের এসব বাঁধের উপর মাটি দিয়ে পানির ্রপবেশষ ঠেকানোর চেষ্টা করছে বলেও তারা জানান।
জেলা প্রশাসন সুত্র জানিয়েছে শ্যামনগরের অধিকাংশ এলাকা জোায়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার বিষয়টি দুর্যোগ ব্যবস্তাপনা মন্ত্রানালয়কে অবহিত করে দুর্গত এলাকা ঘোষনার দাবি করা হয়েছে।
একসাথে উপকুলীয় জনপদ শ্যামনগরের বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার নিয়ে পআুবো কতৃপক্ষকে কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছে স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ আম্পানের পর একটি বছর সময় পেলেও পাউবো বাঁধের উপর এক কোদাল মাটি পর্যন্ত দেয়নি। এমনকি সংস্কার কাজে নিয়াজিত ঠিকাদারের নিকট থেকে নিজেরা কাজ নিয়ে শ্রমিক সর্দারদের দিয়ে কাজ করিয়েছে। ফলে বাঁধসমুহ এর সংস্কার কাজ টেকসইভাবে না হওয়ার কারণে সামান্য জলোচ্ছাসের কারণে এত বিস্তীর্ন এলাকা একসাথে প্লাবিত হয়েছে। এদিকে স্থানীয়রা আরও জানিয়েছে উপকূলীয় এ জনপদেও বাঁধ মুলত ছয় দশক পুর্বে নির্মিত। পরবর্তীতে নানা কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলেও বাঁধের উচ্চতা বাড়ানো নিয়ে পাউবো কৃতপক্ষ কোন কাজ করেনি। ফলে সামান্য জোয়ার এলেই বাঁধ ছাপিয়ে বরাবারের মত এবারও নদীর পানিতে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়েছে।