‘আমাকে গোপনে ২০ হাজার টাকা দাও। আমি এরশাদুল হকের সাথে জায়গার বিরোধ নিস্পতি করে দিব।’ ভুক্তভোগি আনোয়ারকে (সিএনজি চালক) এমন প্রস্তাব দেন ইউপি সদস্য সুমন মিয়া। ইউপি সদস্যের এমন অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হননি আনোয়ার। ক্ষীপ্ত হন সুমন। পুলিশকে সাথে নিয়ে আনোয়ারকে ধরিয়ে নেন থানায়। প্রথমে মাদকাসক্ত ও পরে ইউপি জামাতের আমীর প্রমাণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কৌশলে হেফাজতের তান্ডবের মামলার আসামি করার চেষ্টাও ঠিকেনি। সবশেষে ৫১ ধারার অপরাধে সিএনজি চালককে ১রাত কাটাতে হয়েছে জেলহাজতে। সুমন ও আনোয়ার দু’জনের বাড়িই উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নে। সম্প্রতি আনোয়ারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দিচ্ছেন ওই ইউপি সদস্য সুমন মিয়া। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন আনোয়ার ও তার পরিবার। এ ঘটনায় গত ২২ মে সরাইল থানায় নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি জিডি/অভিযোগ দায়ের করেছেন সিএনজি চালক আনোয়ার।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগি সূত্র জানায়, গত ১৮/১৯ বছর আগে কালিকচ্ছ ইউনিয়নের বাড়ইজীবি পাড়ার বাসিন্ধা আনোয়ার হোসেন প্রতিবেশী এরশাদুল হক থেকে ৫ শতাংশ জায়গা ক্রয় করে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছেন। ওই ক্রয়কৃত ভূমি সংলগ্ন আরো ১ শতাংশ জায়গা ১২-১৩ বছর পূর্বে মৌখিক চুক্তিতে আনোয়ারের নিকট বিক্রি করেন এরশাদুল। এ জায়গাটিও ভোগ দখল করে আসছেন আনোয়ার। কিন্তু দেম দিচ্ছি করে ওই জায়গাটি এরশাদুল সাব কাবলা রেজিষ্ট্রি করে দিচ্ছেন না। স্থানীয় সালিসকারকদের অনুরোধও শুনেননি এরশাদুল। নিরূপায় হয়ে বিষয়টির নিস্পত্তি চেয়ে ৫-৬ মাস আগে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন আনোয়ার। সুযোগে এরশাদুলকে চাপে ফেলে জায়গাটি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার শর্তে গোপনে আনোয়ারের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবী করেন ইউপি সদস্য সুমন মিয়া। সুমনের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হননি আনোয়ার। বিষয়টি স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে জানান। এতে আনোয়ারের উপর আরো ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠেন সুমন। এরপর থেকে পথে ঘাটে আনোয়ারকে মামলায় মোকদ্দমায় জড়িয়ে শায়েস্তা ও হত্যা করে লাশ গুমের হুমকি দিয়ে আসছেন সুমন। গত ১৬ মে বাড়ি যাওয়ার পথে রমজান মিয়ার বাড়ির সামনে সুমন আনোয়ারকে প্রাণনাশের চেষ্টাকালে উজ্জ্বল মিয়া ও রমজান মিয়াসহ অন্যান্য লোকজনের সহায়তায় পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। প্রভাবশালী সুমনের এমন আচরণ ও হুমকির ফলে আনোয়ার সহ গোটা পরিবার ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়। আনোয়ারের মেয়ে রাবিয়া বেগম (১৭) বলেন, জায়গার বিষয়ে প্রায়ই আমাদের বাড়িতে এসে সুমন মেম্বার অকথ্য ভাষায় আব্বাকে গালমন্দ করেন। গত ১৮ এপ্রিল সকালে মেম্বার পুলিশ নিয়ে এসে আব্বাকে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় আমাকে বলেন,‘টাকা যেখানে, সুমন সেখানে।’ বিনা অপরাধে আব্বাকে জেলে পাঠায়। আমরা দুইদিন উপোস থাকি। আনোয়ার বলেন, আমি গরীব মানুষ। গাড়ি চালিয়ে আহার যোগাড় করি। টাকা দিচ্ছি আমি। এরশাদুল আমার ভাবীর নামে দলিলের প্রস্তাব দেন। কেন? বুঝতে পারছি না। থানার সিদ্ধান্তে ৩৫ হাজার টাকা রাজিব স্যারের কাছে দিতে চেয়েছি। তিনি পাঠিয়েছেন পাশা সর্দারের কাছে। সেখানেই দিয়েছি। পরে নানা তালবাহানা। বছর দিন ধরে সকলের পেছনে ঘুরছি। সুমন মেম্বার এরশাদুলের পক্ষ হয়ে আমাকে ও আমার বৃদ্ধ পিতাকে গালমন্দ করেন। গোপনে উনাকে ২০ হাজার টাকা দিতে বলেন। রাজি হয়নি। সুমন মেম্বার নাকি পুলিশের সোর্স। কয়েকজন পুলিশের সাথে নাকি সুমনের ভাল সম্পর্ক। তিনি তদবির করে আমাকে প্রথমে জামাত নেতা পরে হেফাজতের তান্ডবের মামলার আসামি করার চেষ্টা করেছেন। সবশেষে মিথ্যা অভিযোগে আমাকে জেলে পাঠিয়েছেন। ওসি স্যার সহ পুলিশের বড় স্যারের কাছেও গিয়েছি। জায়গার বিষয়টি নিস্পত্তি হচ্ছে না। তাদের নির্যাতন থেকে রেহায় পাচ্ছি না। সুমন মেম্বার আবারও আমাকে মিথ্যা মামলার আসামি করা ও হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। নিরাপত্তাহীনতা ও অশান্তিতে আছি। পরিবারের লোকজন নিয়ে আমি বাঁচতে চাই। আপনারা সুমন ও এরশাদুল হকের নীল নকশা থেকে আমাকে উদ্ধার করূন। জায়গা সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এ এস আই রাজিব আহমেদ বলেন, পক্ষদ্বয় সহ সামাজিক লোকজন নিয়ে থানার গোল ঘরে বসেছিলাম। সিদ্ধান্ত হয়েছিল আনোয়ার বকেয়া টাকা সাব-রেজিষ্ট্রারের সময় অথবা সালিসকারকের কাছে দিলে এরশাদুল জায়গা দলিল করে দিবেন। এক পক্ষ বলেন টাকা যথাস্থানে দিয়েছেন। অপর পক্ষ বলেন টাকা পায়নি। সুমন মেম্বারকে সাথে নিয়ে এরশাদুল মাঝে মধ্যে থানায় আসেন। কিন্তু সাবেক ওসি স্যারের নির্দেশে নিস্পত্তির জন্য একাধিকবার পক্ষদ্বয়কে থানায় ডাকা হয়েছে। আনোয়ার আসলেও এরশাদুল থানায় আসেননি। অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. সুমন মিয়া তার বিরূদ্ধে আনীত সকল অভিযোগকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, আনোয়ার এরশাদুলের বাঁধা না মেনে একটি দেওয়াল নির্মাণ করছিল। আমি বাঁধা দেওয়ায় আনোয়ার খারাপ আচরণ করেছে। ২০ হাজার টাকা চাইনি। তাকে হত্যার হুমকিও দেয়নি। সবকিছু বানোয়াট। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আনোয়ারের অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।