নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অঘোষিত সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছেন খোরশেদ আলম নামে একজন এমএলএসএস (পিওন)। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামানের প্রত্যক্ষ মদদেই খোরশেদ আলম এমন ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছেন। প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ইন্ধন থাকায় প্রতিবাদ বা প্রতিকার কোনটাই পাচ্ছেন না ডাক্তার-সেবিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ে চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে সেবা কার্যক্রমসহ হাসপাতালের নিয়মিত কর্মকান্ড।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, গত ৮ মার্চ হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই ডা. আসাদুজ্জামান বিভিন্ন জাতীয় দিবস, প্রশিক্ষণ কর্মশালা কাগজে কলমে দেখিয়ে বিল উত্তোলন শুরু করেন। আর এই কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগী হিসেবে সাথে নিয়েছেন পিওন খোরশেদ আলমকে। ডা. আসাদুজ্জামান তার সুবিধার জন্য অনেককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রেখে পছন্দের জনকে দিয়ে নিয়ম বর্হিভুতভাবে কাজ করাচ্ছেন। পিওনকে দিয়েই বিল-ভাউচার তৈরী করাচ্ছেন। হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ হিসাবে আনিসুর রহমান নামে একজন কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মৌন সম্মতিতে কোন প্রকার অফিস আদেশ ছাড়া পিওন খোরশেদ আলম উপলশহর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আবদুল হালিমকে ক্লিনিক বন্ধ রেখে হাসপাতালে এনে কম্পিউটারের কাজ করাচ্ছেন। এক কথায় পিওন খোরশেদের ইচ্ছাতেই চলছে হাসপাতাল। তার ইচ্ছার বাইরে ঘোরে না এ্যাম্বুলেন্সের চাকাও। ডাক্তার-কর্মচারীরা কেউ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে গেলে তিনি অযাচিত ভাবেই সেখানে উপস্থিত থাকেন এবং কথার মাঝে ঢুকে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন। তার এমন উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে হাপিয়ে উঠেছেন হাসপাতালের ডাক্তার-সেবিকাসহ অন্যরা। এদিকে ডা. আসাদুজ্জামান যোগদানের পর অদ্যাবধি কোন স্টাফ মিটিং করেন নাই। পিওন খোরশেদের ইশারাতে তার ইচ্ছেমত কাজকর্ম চালাচ্ছেন তিনি। যেখানে হাসপাতাল চত্ত্বর সার্বক্ষণিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কথা, সেখানে ব্যক্তিগত দাপটে খোরশেদ হাসপাতাল চত্ত্বর দখল করে কলাবাগান করেছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গেলে সাংবাদিকের সাথে সবাই এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও সরাসরি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জড়িত থাকায় নিজেদের নাম প্রকাশ করতে অপারগতা জানান তারা। এ সময় দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বলেন, আমরা কখন কোথায় কি দায়িত্ব পালন করবো তা ডিউটি রোষ্টারে নির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু পিওন খোরশেদ আমাদেরকে সেই কাজ করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তার ইচ্ছেমত কাজ করায়।
জরুরী ও বহির্বিভাগের দায়িত্বে থাকা একাধিক সেবিকা বলেন, পিওন যদি আমাদের কাজের তদারিক করে তাহলে কেমন লাগে বলেন ? তার ইচ্ছায় আমাদের ডিউটি করতে হয়। দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পিওন খোরশেদের থাকার কথা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ফুটফরমাস খাটার কাজে। কিন্তু তা না করে সে সর্বত্র অনধিকার চর্চা করছে, যা খুবই অপমানজনক। এভাবে ডিউটি করা যায় না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে খোরশেদ আলম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যারা ভাল কাজ করে কর্মকর্তারা তাকেই গুরুত্ব দেন। আপনারা তদন্ত করে দেখুন, যারা অভিযোগ করছে তারা সঠিক না আমি সঠিক।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, আমি নতুন এসেছি আবার এই দায়িত্বেও নতুন। খোরশেদ আগে থেকেই এখানে দাযিত্বে ছিলো তাই তার নিকট থেকে সহযোগিতা নেয়া হয়। স্টাফ মিটিং করে সবার দায়িত্ব এবং কর্মকা- তদারকি করছেন না কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন এখনো হয়ে উঠেনি।
নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান বলেন, তাদের বিষয়ে মৌখিক ভাবে কিছু কথা শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা করা হবে।