মেট্রোরেলের আওতায় আসছে পুরো রাজধানী। ওই লক্ষ্যে মেট্রোরেলের প্রধান তিনটি রুট বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেগুলো হলো মেট্রোরেল লাইন-৬, লাইন-৫ নদার্ন রুট এবং মেট্রোরেলের লাইন-১। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে ওই তিন প্রকল্পে জন্য প্রায় আট হাজার (৭ হাজার ৯৭৪) কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (অ্যানুয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বা এডিপি) আওতায় ওই বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ওসব প্রকল্পের অনুকূলে ৬ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। ওই হিসাবে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মেট্রোরেলের তিন প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩০ হাজার ৬২৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮৫ হাজার ১৬১ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে। ওই প্রকল্পগুলোর আওতায় শুরু থেকে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। তাছাড়া চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে ওই তিন প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ আছে ৬ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। তার মধ্যে অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) খরচ হয়েছে ২ হাজার ৩৪২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যা গড়ে মোট বরাদ্দের ৩৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
সূত্র জানায়, উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল লাইন-৬) বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে সরকারি তহবিলের ৫ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। আর আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তাছাড়া চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ৫৫৪২ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে তুলনামূলক বরাদ্দ কমেছে ৭৪২ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় শুরু থেকে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম অংশে রেল চালুর জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সূত্র জানায়, ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল লাইন-১) প্রকল্পটির দুটি অংশ রয়েছে। একটি বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রুট এবং অপর অংশটি পূর্বাচল রুট (নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ পর্যন্ত)। সেটি ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তার মধ্যে সরকারি তহবিলের ১৩ হাজার ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮৭৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে ৫৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। ওই হিসাবে নতুন এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে ২৮৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের শুরু হতে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৪৯৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০১৯ থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। সেজন্য আগামী অর্থবছরের জন্য প্রকল্পটির যে পরিমাণ অর্থের চাহিদা দেয়া হয়েছে ওই অনুযায়ীই এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল লাইন-৫ নর্দান রুট) প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। সেটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তার মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১২ হাজার ১২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। ২০১৯ থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পটির জন্য আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ৬৭০ কোটি টাকা। ফলে প্রকল্পটিতে তুলনামূলকভাবে বরাদ্দ বেড়েছে ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। প্রকল্পের শুরু থেকে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত খরচ হয়েছে ১৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আর প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। মেট্রোরেলের এ অংশটি পাতাল এবং উড়াল মিলেই তৈরি হবে। তার মধ্যে পাতাল হবে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এবং উড়াল সাড়ে ৬ কিলোমিটার। স্টেশন থাকবে ১৪টি। ওই প্রকল্পের বর্তমান কাজ অধিকাংশই বিদেশি কর্মীনির্ভর। এমন অবস্থায় করোনা মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হলে বিদেশিদের আনা গেলে প্রকল্পে আরো টাকা লাগবে এবং তা পাওয়া যাবে। এখন যা বরাদ্দ আছে তা যথেষ্ট।
এদিকে এডিপি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এডিপির আকার পাওয়ার পর তা সেক্টরভিত্তিক বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়। তারপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়। তবে সরকারে বিশেষ অগ্রাধিকারে থাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পগুলোতে সংশ্লিষ্টদের চাহিদা এবং ওই মন্ত্রণালয়ের সিলিং বিবেচনায় নিয়েই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রাজধানীর যানজট নিরসনে মেগা প্রকল্প হিসেবে বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, মেট্রোরেল হচ্ছে সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। মেট্রোরেলসহ বড় সব প্রকল্পেই চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকার চায় অর্থের অভাবে যেন ওসব প্রকল্পের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না হয়।