বিলের মধ্যে বসতবাড়ি নির্মান করে প্রায় দুইশ’ বছর যাবত বসবাস করে আসছেন শতাধিক পরিবার। শুকনো মৌসুমে পরিবারগুলোর যাতায়তের পথ ছিলো জমির আইল আর বর্ষা মৌসুমে যাতায়াত করতে হতো নৌকা কিংবা কলার ভেলায় চরে।
শুধুমাত্র যাতায়াতের জন্য আধুনিকতার ছোঁয়া না থাকায় ওইসব পরিবারের মেয়েদের এতোদিন ভালো কোন বরের কাছে বিয়ে পর্যন্ত দিতে পারেননি অভিভাবকরা। রাস্তার অভাবে পরিবারগুলোর শিশুরা ঝড়ে পরতো শিক্ষাজীবন থেকে। একটি মাটির রাস্তাই ছিলো ওইসব শতাধিক পরিবারের স্বপ্ন। অবশেষে দেড় কিলোমিটার মাটির রাস্তা নির্মান করে দুইশ’ বছর পর বিলের ওই পরিবারগুলোর স্বপ্নপূরন করা হয়েছে। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের বাঘার ও জয়শুরকাঠি গ্রামের।
বাঘার গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা হরলাল রায়, শরৎ বিন্দু রানী, মানিক লাল বেপারীসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, প্রায় দুইশ’ বছরপূর্বে তাদের পূর্ব পুরুষরা বাঘার বিলের মধ্যে বসতি নির্মান করে বসবাস করে আসছেন। তাদের যাতায়াতের জন্য ছিলোনা কোন রাস্তা। এমনকি বিলের মধ্যদিয়ে রাস্তা নির্মান করা কষ্টকর হওয়ায় কোন জনপ্রতিনিধিরাই এতোদিন এগিয়ে আসেননি।
অতিসম্প্রতি মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর কাছে বিলের মধ্যদিয়ে রাস্তা নির্মানের দাবি করেন এলাকাবাসী। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইশ’ বছর পর দেড় কিলোমিটারের মাটির রাস্তা নির্মান করা হয়েছে।
কলেজ ছাত্রী মৌমিতা বেপারী ও সুপ্রিয়া হালদার বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা অতীতেই যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি যেতে পারেননি, সেখানে আমাদের বিলের মধ্যে কোনদিনও যে রাস্তা হবেনা, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত ছিলাম। তারা আরও বলেন, দেড় কিলোমিটার এলাকার এ বিলের মধ্যে রাস্তা নির্মানের দাবি ছিলো একটা স্বপ্নের মতো। সেই দুইশ’ বছরের স্বপ্ন মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বাস্তবায়ন করেছেন।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, তার ইউনিয়নের বাঘার গ্রামের ও পাশ্ববর্তী বাটাজোর ইউনিয়নের জয়শুরকাঠী গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার দীর্ঘ দুইশ’ বছর যাবত বিলের মধ্যে বসবাস করে আসছেন। পরিবারগুলো দুই গ্রামের মূল সড়ক থেকে বিছিন্ন ছিলো। তাই ওই পরিবারগুলোকে গ্রামের মূল সড়কের সাথে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র অনুপ্রেরনায় রাস্তা নির্মাণ শুরু করা হয়। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে মাটির রাস্তার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। রাস্তাটি নির্মানের ফলে সুবিধাভোগী দুই গ্রামের বাসিন্দারা মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি ও ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।