কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ব্যবসায়ীর দেয়া ভুল কীটনাশক প্রয়োগে পুড়ে গেছে কৃষকের ধানক্ষেত। পরে স্থানীয় মাতব্বরদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষককে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন কীটনাশক ব্যবসায়ী আব্দুছ ছামাদ। এর দেড় মাস অতিবাহিত হলেও সেই ক্ষতিপূরণ দিতে টালবাহানা করছেন ওই ব্যবসায়ী। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা নেটারপাড় শ্রীপুর এলাকায়। ফলে এ ঘটনায় ৬ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক।
অভিযোগে জানা যায় ওই এলাকার আবুল কালাম নামের এক কৃষক প্রতি মৌসুমে বিঘা প্রতি ৬ মণ করে ধান দেয়ার চুক্তিতে ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বোরো চাষ করেন। ধান পাকার সময় ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ ঠেকাতে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ১২ এপ্রিল পার্শ্ববর্তী মনিয়ারহাট বাজারের আব্দুছ ছামাদের “সরকার স্টোর”-এ যান তিনি। ছত্রাকনাশক ওষুধ চাইলে কীটনাশক ব্যবসায়ী প্যারাটক্স এবং ফলিকুর নামের ২টি ওষুধ হাতে দিয়ে দুটি ঔষধই ধানক্ষেতে দেয়ার পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগের পরদিন সকালে গিয়ে দেখেন ৫০ শতকের পুরো ক্ষেত পুরে চিটে হয়ে গেছে। মরে গেছে ধানের গাছগুলো এবং ঘাস ও লতাপাতা। পরে বিষয়টি স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে জানালে তিনি ক্ষেত পরিদর্শন করেন এবং প্যারাটক্স আগাছা নাশক ঔষধ, তাই এমন হয়েছে বলে জানান। এরপর কীটাশক ব্যবসায়ী আব্দুছ ছামাদকে ঔষধের বোতল দেখালে তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে দ্রুত ক্ষেতে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী ধান ক্ষেতে ৪২ ড্রাম পানি স্প্রে করেও পাননি প্রতিকার। ধীরে ধীরে ধানের গাছের গোড়া পর্যন্ত পঁচে গেছে। ক্ষেতের ধান পুড়ে আনুমানিক ৪০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরে ১৪ এপ্রিল স্থানীয়ভাবে মিমাংসায় বসলে ওই কীটনাশক ব্যবসায়ী কৃষককে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ১০ হাজার টাকা ক্ষতি পূরণ দেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু দেড় মাস অতিবাহিত হলেও সে টাকা দিতে টালবাহানা করছেন এবং ক্ষতিপুরণের টাকা দেবেন না বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ী। এ অবস্থায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক আবুল কালাম।
স্থানীয় যুবক আবদুল আলীম বলেন, কীটনাশকের বোতল দুটি দোকান থেকে নিয়ে আসার সময় রাস্তায় আমার সাথে কালাম চাচার দেখা হয়। উনি ঔষধগুলো আমাকে দেখালে আমি দেখি ওনার কাছে একটি প্যারাটক্স আর একটি ফলিকুরের বোতল। তবে এগুলো কী কাজে ব্যবহার করতো আমি জানতাম না।
কৃষক আবুল কালামের স্ত্রী শরিফা বেগম জানান, তাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। তাই দু’মুঠো ভাত পেটে দেয়ার জন্য অন্যের জমি লিজ নিয়ে ধার-দেনা করে ধান চাষ করেছেন তারা। কিন্তু ভুল ওষুধ দিয়ে সব ধান বিনষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের ধান থেকে জমির মালিককে লিজের চুক্তির ধান পরিশোধ করে এখন আর ঘরে ভবিষ্যতে খাবারের ধান নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে ভবিষ্যতে কী খাবে, কীভাবে বাঁচবে, আর ধার দেনা কীভাবে পরিশোধ করবেন এ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তার অন্ত নেই তাদের।
এ ব্যাপারে কীটনাশক ব্যবসায়ী আব্দুছ ছামাদ বলেন, আমি শুধু ফলিকুর নামের ওষুধ দিয়ে ১ বিঘা জমিতে দিতে বলেছি। ওরা দিয়েছে দেড় বিঘায়। বাকি ওষুধ আমি দেইনি। ওরা আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেছে। আর আমি যেহেতু ওই ওষুধ দেইনি তার আমার ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রশ্ন আসে না। আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষরযন্ত্র করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর আহমেদ মাছুম বলেন অভিযোগ পেয়ে কৃষি অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কৃষি অফিসারের কাছে খোঁজ নেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহারিয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন ইউএনও মহোদয়ের নিকট তদন্ত রিপোর্ট জমা হলে উনি ব্যবস্থা নেবেন।