শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর বাবার ভাড়াটিয়া বাসার পাশের সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যে স্ত্রীর লাশ গুম করে রেখেছিলো ঘাতক স্বামী সাকিব হোসেন। পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর এমনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সাকিব। সে অনুযায়ী বাথরুমের ওই সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিস্কারের পর তল্লাশী চালিয়ে বেশকিছু আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ।
কিন্তু রহস্যজনক কারণে ওই সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্য থেকে হতভাগ্য কলেজছাত্রী নাজনিন আক্তারের (১৯) লাশটি গায়েব হয়ে যায়। অবশেষে নানা নাটকীয়তা শেষে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের ১০দিন পর বগুড়ার কলেজছাত্রী নাজনিন আক্তারের বস্তাবন্ধী লাশ বুধবার দুপুরে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। যার দূরত্ব ঘাতক সাবিকের দেয়া সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরত্বে। এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঘাতক সাকিবের দেয়া স্বীকারোক্তিমতে সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে পুলিশ নিহতের পরিধেয় ওড়না, দুইটি নক ও শরীরের চামড়ার বেশ কিছু অংশ যখন উদ্ধার করছে তখন ওই সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যেই সাকিব তার স্ত্রী নাজনিনের লাশ গুম করেছিলো। তবে সেখান থেকে লাশ উত্তোলনের পর বস্তাভর্তি করে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধাকিলোমিটার দূরত্বে জমির মধ্যে লাশ গেলো কিভাবে। আর সেপটিক ট্যাঙ্কের অবস্থান যেখানে সেখান থেকে একজন ভাড়াটিয়া (সাকিবের ভ্যানচালক পিতা) কিংবা মাতার পক্ষে লাশ উত্তোলন করে গুম করা অসম্ভব। এ কাজের সাথে সাকিবের বাবার ঘনিষ্ঠজন স্থানীয় কেউ জড়িত থাকতে পারে। তাই বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সর্বমহলে জোর দাবি উঠেছে।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ তৌহিদুজ্জামান বলেন, বুধবার দুপুরে উপজেলার হরহর গ্রামের জনৈক ট্রাক্টর চালক ধানক্ষেতের মধ্যে বস্তাবন্ধী লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। তাৎক্ষনিক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে সুরাতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরন করেছেন। তিনি আরও জানান, বগুড়া জেলার জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের পরিচ্ছন্নতা কর্মী সাকিব হোসেন তার স্ত্রী নাজনিন আক্তারকে গত ২৪ মে বাটাজোর বন্দর সংলগ্ন হরহর গ্রামের ভাড়াটিয়া বাসায় বেড়াতে নিয়ে এসে হত্যার পর লাশ গুম করে।
সূত্রমতে, নাজনিন আক্তার বগুড়া সদরের সাবগ্রাম (উত্তরপাড়া) এলাকার আবদুল লতিফের কন্যা ও বগুড়ার গাবতলী সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। গ্রেফতারকৃত সাকিব হোসেন আড়াই বছর পূর্বে বগুড়ার জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে চাকরি পায়। সে সুবাদে সাকিব বগুড়ায় থাকতেন। এরমধ্যে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রধরে নাজনিন আক্তারের সাথে সাকিবের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে সাকিব প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে ঠিকানা গোপন রেখে নিজেকে সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে দাবি করে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নোটারীর মাধ্যমে নাজনিনকে বিয়ে করে। গত ২৪ মে সাকিব তার বাবার অসুস্থতার কথা বলে নাজনিনকে গৌরনদীর ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে আসে। এরপর থেকে নাজনিন আক্তার নিখোঁজ ছিলো। এ ঘটনায় গত ২৬ মে তার বাবা আবদুল লতিফ বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ সোমবার (৩১ মে) সাকিবকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
পরবর্তীতে স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চরজাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বর্তমানে বাটাজোরের হরহর গ্রামের ভাড়াটিয়া ভ্যানচালক আবদুল করিমের পুত্র সাকিব পুলিশকে জানায়, তাদের ভাড়া বাসায় এসে নাজনিন আক্তার দারিদ্রতার কথা গোপন করার কারণ জানতে চায়। এ সময় তাদের স্বামাী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল বাগ্বিতন্ডার একপর্যায়ে রাগে নাজনিন তাকে (সাকিব) ভিক্ষুকের ছেলে বলে গালি দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজনিনের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস দিয়ে সাকিব শ^াসরুদ্ধ করে হত্যা করে। এরপর ঘরের পেছনে থাকা বাথরুমের সেপটিক ট্যাঙ্কে স্ত্রী নাজনিন আক্তারের মৃতদেহ গুম করে বগুড়া ফিরে সাকিব তার নিজ কর্মস্থলে যোগদেয়। সূত্রমতে, গ্রেফতারকৃত সাকিব ও বগুড়া সদর থানা পুলিশের উপস্থিতিতে লাশ উদ্ধারের জন্য তার (সাকিব) দেয়া তথ্যানুযায়ী মঙ্গলবার দিনভর বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয় গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ।