নিজেদের নেই কোন জমাজমি। পিতা অন্যের বাড়ি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। সংসারে পিতা-মাতা, তিন ভাই ও দুই বোন তারা। বড় ভাই শাকিব এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। বোন সুমাইয়া খাতুন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট ভাই ক্লাস ওয়ানের ছাত্র। ছোট বোনটির বয়স মাত্র ৬ মাস। দিনমজুর পিতা যা আয় করেন তা দিয়ে সাত সদস্যের সংসার তেমন চলে না। তারপর নিজেদের পড়া-লেখার খরচ তো আছেই।
মহামারি করোনায় এখন স্কুল বন্ধ। তাই বাড়িতে বসে না থেকে ভ্যান গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতে দরিদ্র পিতাকে সাহায্য করছে স্কুলছাত্র শাকিল হোসেন। ওর বয়স ১৪ বছর। বই খাতা নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে ছুটতো যে শাকিল তাকে এখন জীবিকার সন্ধানে বের হতে হয় ভ্যান গাড়ি নিয়ে।
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার চরভাঙ্গুড়া সরকার পাড়ার মনিরুল ইসলাম প্রামানিকের ছেলে শাকিল। সে চরভাঙ্গুড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। পড়া-লেখায় মোটামুটি ভালো। কিন্তু অভাবের তাড়নায় এখন ভ্যান গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করতে হচ্ছে ক্ষুদে এই স্কুলছাত্রকে। ভাঙ্গুড়া পৌরশহরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাটারি চালিত ভ্যান গাড়ি চালাতে দেখা যায় তাকে।
শাকিল জানায়, স্কুল বন্ধ থাকায় সে এখন নিয়মিত ভ্যান গাড়ি চালায়। এতে দিন ৩ থেকে ৪ শ’ টাকা রোজগার হয়। সে আরও জানায়, স্কুলে যেতে তার মন চায় কিন্তু করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় যেতে পারে না।
বড়ভাই শাকিব হোসেন বলেন, সেও মাঝে মধ্যে ভ্যান গাড়ি চালাতো। সামনে তার এসএসসি পরীক্ষা থাকায় আর গাড়ি চালান না। ছোট ভাই শাকিল ভ্যান চালায় আর পিতা মনিরুল অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।
শাকিলের পিতা মনিরুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, সে দিনমজুরের কাজ করেন। ধার দেনা করে সংসার চালাতে হয়। এরপর ছেলে-মেয়েদের পড়া-লেখার খরচ তো রয়েছে। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলেটা ভ্যান গাড়ি চালায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ভাই সামর্থ্য থাকলে কি ছেলেকে ভ্যান চালাতে দিতাম।
চরভাঙ্গুড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আনিসুর রহমান বলেন, শাকিল দরিদ্র পরিবারের সন্তান। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় সে এখন ভ্যান গাড়ি চালিয়ে রোজগার করছে।