সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে আনোয়ারায় মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। প্রায় ৫৭৭ কোটি টাকার ওই প্রকল্পে ভাঙনের মুখে পড়েছে এক কিলোমিটার অংশ। কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধের এমন নড়বড়ে অবস্থায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী আগামী ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে এখন অন্তত ১০টি স্থানে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই কাজের সাঙ্গু উপকূলীয় ৪২০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের সংস্কার কাজ করবেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। অবশিষ্ট অংশে ঠিকাদার নিজ দায়িত্বে মেরামত করে দেবে। উপজেলার রায়পুর, জুঁইদন্ডি, পরৈকোড়া, বারখাইন ও চাতরি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ৭০০ মিটার বেড়িবাঁধ অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির কারণে ভেঙে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে শুধু আনোয়ারায় প্রাণ হারিয়েছে ২০ হাজার মানুষ। সেদিন আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকায় শুধু একটি টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় রায়পুর, জুঁইদন্ডি, বরুমচড়া বারখাইন ইউনিয়নসহ পুরো এলাকা মৃত্যুর মিছিলে পরিণত হয়। স্বজন হারানোর আর্তনাদ এখনো আনোয়ারা উপকূলের মানুষ ভুলতে পারেনি। প্রলয়ংকরী সেই ঘূর্ণিঝড়ের পর পেরিয়ে গেছে ২৯টি বছর। সাগরপৃষ্ঠ হতে উচুঁ টেকসই সুরক্ষিত বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। দীর্ঘসময়ে কয়েক বার জোড়াতালির সংস্কার হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রত্যেক বছরই জোয়ারে ভেসেছে এখানকার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। গত ২০১৮ সালে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির আন্তরিক চেষ্টায় পর্যায়ক্রমে ৫৭৭ কোটি ২৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ বাঁধে ব্লক বসানোর কাজ শুরু হয়। এতে স্থানীয়দের সেই দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ ও হতাশা দূর হয়। তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণকে ঘিরে কাজের দৃশ্যমান অনিয়মে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পানি সম্পদমন্ত্রী, পানিউন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসনসহ নানা স্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল না পাওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। রায়পুরের ফকির হাট নোয়াপাড়ার বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মানসম্মত বেঁড়িবাধ নির্মাণের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে লাভ হয়নি। ঠিকাদারের দুর্নীতি প্রকাশ্যে প্রমাণসহ তুলে ধরলেও কাজ হয় না। আমার এলাকায় মাটির সাথে বালি মিশ্রিত করে করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ঠিকাদারের লোকজনের অনিয়ম স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে পারে না।
রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিন শরিফ বলেন, ভূমিমন্ত্রীর চেষ্টায় আমরা ৫৭৭ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ পেয়েছি। ২০১৮ সাল থেকে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ বছর এলাকাবাসী বাঁধে সুফল পেয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে বাঁধে ব্লক বসানোর কাজ শেষ হলে নদী ভাঙন ও বসতঘরে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ার সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম বলেন, ভূমিমন্ত্রী বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজে কোন ধরনের অনিয়ম না করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাঁধ ও ব্লক নির্মাণে নানা অনিয়মের আশ্রয় নেয়। এই ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বার বার অভিযোগ করা হলেও অনিয়ম বন্ধ হয়নি ঠিকাদারদের। ওদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী চয়ন কুমার ত্রিপুরা দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, আনোয়ারায় ৫৭৭ কোটি ২৩ লাখ ৯২ হাজার টাকার বেড়িবাঁধ ও বাঁধে ব্লক বসানোর কাজ চলমান আছে। সব কিছু অনুকূলে থাকলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ শেষ হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আনোয়ারা উপকূলে ৭ শত মিটারের মত বেড়িবাঁধ ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়। কাজে কোন ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড কঠোর নজরদারীসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাই অনিয়ম করে কোন ঠিকাদারই পার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।