জননেত্রী সৈনিকলীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছেন- চট্টগ্রামে অবৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর এখন রমরমা বাণিজ্য চলছে। এতে যারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বৈধ পন্থায় ব্যবসা করছেন; তারা আজ পথের ভিখারী হওয়ার উপক্রম হয়েছেন। অন্যদিকে যারা লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছেন তারা এখন বেপরোয়া। এখানে রিক্সা ও ভ্যানগাড়ী নিয়ে চলছে রীতিমত এক নৈরাজ্য। এতে কোনো শৃঙ্খলাও নেই। অবৈধ রিক্সা এবং ভ্যানগাড়ীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এখনো কোন ব্যবস্থাও নিচ্ছেন না। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কথিত শ্রমিক নেতারা এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হচ্ছেন। মঙ্গলবার সকালে হালিশহর সবুজবাগের নিজস্ব অফিসে ঢাকার শীর্ষ অনলাইন নিউজ এজেন্সি এফএনএস টুয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।
মো. সেলিম বলেন, চট্টগ্রাম শহরে অন্তত তিন লক্ষ রিক্সা এখন চলছে। এরমধ্যে ৭০হাজার রিক্সার লাইসেন্স আছে। এগুলোর মধ্যে নবায়ন হয়েছে ৬৩ হাজার রিক্সার। ওদিকে ভ্যানগাড়ী চলছে দুইলক্ষ। এরমধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র ১৪ হাজার ভ্যান গাড়ীর। এতে যারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বৈধ পন্থায় ব্যবসা করছেন; তারা আজ পথের ভিখারী হওয়ার উপক্রম হয়েছেন। এখানে রিক্সা নিয়ে চলছে রীতিমত এক নৈরাজ্য। হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এতে কোনো শৃঙ্খলাও নেই। অবৈধ রিক্সা এবং ভ্যান গাড়ীর মালিকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এখনো কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছেন না। বরং পুলিশকে চাঁদা দিয়েই এসব গাড়ী রাস্তায় চলছে বলে লোকমুখে শুনা যাচ্ছে। এতে সরকার প্রতিমাসে এই খাত থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি-অবৈধ রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীর চালক-মালিকরা শতকরা ৯০জনই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। এসব রিক্সা ও ভ্যান গাড়ীকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের অলি-গলিতে যে সকল গ্যারেজ গড়ে উঠেছে সেগুলোরও কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই। ওদিকে সিটিকর্পোরেশন প্রদত্ত একটি একই নাম্বারের প্লেট জালিয়াতি করে ৪টি প্লেট তৈরী করে আলাদা আলাদা জায়গায় ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের প্লেট ব্যবহার হচ্ছে- পতেঙ্গা, বহদ্দার হাট, বায়েজীদ, আগ্রাবাদ এবং হালিশহর এলাকায়। এই প্লেট ব্যবসায় জড়িত চৌমুহনীর দুবাই হোটেলে বসে কাদের মজুমদারসহ প্রায় ১০জন লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন। তাছাড়া অবৈধ রিক্সা এবং ভ্যানগাড়ীর গ্যারেজ গুলোতে রমরমা জুয়ার আসর ও ইয়াবা সেবনও চলে। ভ্যান গাড়ীর ২০ থেকে ১৫০টির মালিক হয়ে গ্যারেজ খুলে বসে আছেন। কিন্তু এগুলোর কোন ট্রেড লাইসেন্স নেই। এরা মাঝে মাঝে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় জ¦ালাও-পোড়াও আন্দোলনেও শরীক হয়। এরা আবার দেখি আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মোবাইলে সেলফি তুলে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। এটা দু:খজনক ঘটনা। সরকারের মন্ত্রী এমপিরা এগুলো দেখা উচিত।
এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন জড়িত। বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের অনেক অপকর্মের প্রতিবাদ করে হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। এখনো কিছু সন্ত্রাসী আমাকে সবুজবাগের অফিস জ¦ালিয়ে দিবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। দলের জন্য অনেককিছু ত্যাগ করেছি। বিনিময়ে কিছুই পাইনি। করোনা কালীন সময়ে সরকারের কোনো প্যাকেজের সহায়তাও পায়নি। এগুলো নিয়ে দুর্র্নীতি হয়েছে যথেষ্ট। মো. সেলিম চট্টগ্রাম সিটিরিক্সা শ্রমিকলীগের (রেজি:নং-২১০৩) সভাপতি ছাড়াও বহু সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছেন। তিনি আরো বলেন, আমার সবুজবাগের নিজস্ব কার্যালয়ের সামনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবং জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত সাইন বোর্ড ভেঙ্গে ফেলার জন্য অব্যাহতভাবে হুমকি দিচ্ছেন একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এতে থানায় জিডিও করেছি। আমার দল ক্ষমতায় থাকলেও আমি কারও ক্ষতি করিনি। বরং নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়ার মুখে তুলে দেওয়ার কাজ করছি। মো. সেলিম শহরে অবৈধ ফিটনেস বিহীনগাড়ী প্রসঙ্গে বলেন, ফিটনেস বিহীন গাড়ীর ব্যবসা রমরমা চলছে। লক্কর-ঝক্করগাড়ী বেপরোয়া গতিতে চলার কারণে অকালে রাস্তায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। বর্তমানে যানবাহনে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছেনা। যারা এগুলো তদারকি করে তারাও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। এটা থেকে আমাদের পরিত্রাণ পাওয়া দরকার। অথচ প্রতিদিন যানজটে পড়ে মানুষের কর্ম ঘন্টাও নষ্ট হচ্ছে। ওই সকল অবৈধ ভ্যানগাড়ী এবং রিক্সার বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
ইয়াবা প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, শহরের নানা জায়গায় এখন ইয়াবার কারবার চলছে। ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িতরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন। মাঝে মাঝে র্যাবের অভিযানে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ধরা পড়েন। কিন্তু যারা এদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা আড়ালেই থাকেন। সরকারের উপরের মহল প্রশাসন দিয়ে সঠিক তালিকা করে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ইয়াবা সেবন এবং বিক্রেতারা নারী ব্যবসার সাথেও জড়িত। এদের কারণে অভিভাবকদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে অবৈধ রিক্সা ও ভ্যানগাড়ীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম মাননীয় জেলা প্রশাসক ও মেয়র মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। তাছাড়া এই ধরণের অভিযানের সময় অবৈধ গাড়ী চিহিৃত করতে আমার কোন সহযোগিতা করতে হলেও আমি অবশ্যই করবো। আমি মাঠে থাকবো।