নীলফামারী জেলায় এখন হারিয়ে গেছে গরু দিয়ে হালচাষ। এখন আর চোখে পরে না লাঙ্গল জোয়াল। দেখা যায় না পান্তা ভাত কাপড় দিয়ে বেঁধে এক হাতে আর অন্য হাতে পানির ঘটি নিয়ে কৃষানীদের দোলায় যেতে। পাশাপাশি হাতে নেই আগুনের ভুতি, হুক্কা ও তামাক পাতা। কৃষকের মাথায় এখন নেই ঝাঁপি। হালের গরু বলতে এখন আর নেই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগুলো আজ হারিয়ে গেছে। জেলার ৬ উপজেলা সৈয়দপুর, নীলফামারী, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জে বদলে যাচ্ছে কৃষি চাষাবাদ ও কৃষক। প্রায় কয়েক বছর আগেও এখানকার জমি চাষাবাদ ছিল গরুর হাল দিয়ে। কেউ মধ্য রাতে আবার কেউ বা ভোর রাতে লাঙল-জোয়াল ও হালের গরু নিয়ে বের হয় জমি চাষের জন্য।
বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতির ছোঁয়ায় গরুর হাল এখন বিলীন হয়ে গেছে। এখন জমি চাষাবাদ হচ্ছে পাওয়ারটিলার দিয়ে। তবে এতে সময় কম লাগছে। ধান কাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে রিপার মেশিন। গরু হাল দিয়ে জমি চাষ করে নরম করা হত। মাটি সমান করতে দেয়া হত বাঁশের মই। গরুর গোবরে হত উৎকৃষ্ঠ জৈব সার। আর ওই জৈব সারে ফলানো হত ফসল। যা ছিল বিষমুক্ত। এখন দশ পাথার ঘুরেও চোখে পড়ে না গরু দিয়ে হালচাষের দৃশ্য। জৈব সার দিয়ে ফসলও তেমন একটা ফলানো হচ্ছে না। কারণ রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে হারিয়ে গেছে জৈব সারের ব্যবহার। তবে সৈয়দপুরে মানুষের মল দিয়ে উৎকৃষ্ঠ মানের সার তৈরীর কার্যক্রম শুরু করেছে এসকেএস নামে একটি এনজিও।
কৃষকরা জানান, একসময় প্রায় গৃহস্থের বাড়িতে হালচাষ করার জন্য গরু ছিল। কারো কারো বাড়িতে ছিল ৩ থেকে ৪টি হাল। অপরপাশে দুধের জন্য পালন করা হত গরু। গরুর হাল উঠে যাওয়ার কারণে এখন আর তেমন একটা গরু পালনে আগ্রহ নেই মানুষের।
সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কিসামত এরাকার কৃষক ফজলুল হক, অসুরখাই এলাকার শাহাদাৎ, বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর, কাশিরাম ইউনিয়নের তাহের জানান, আমরা চাষাবাদ করেছি গরু হাল দিয়ে। লাঙল-জোয়ালের সাথে আমরা জড়িয়ে ছিলাম। তাছাড়া সে সময় গরু ও মহিষের হাল ছাড়া আর কোন ছিল না। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কলের লাঙ্গল এসে অনেক সুবিধা হয়েছে। কম খরচ এবং স্বল্প সময়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে। তাছাড়া দোলা বাড়িতে জমির ধান সাথে সাথে কেটে মাড়াই করে ধান বাড়িতে আনা যাচ্ছে।