বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ওবাইদুল ইসলাম এর উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ড্রেন পরিস্কার করা হয়। একই সাথে ড্রেনের ময়লা ও পানি আলাদা হয়ে পানি চলে যাবে নদী বা খালে। শহরে সেখানে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সংশ্লি¬ষ্ট দফতরকে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময়ে বাসিন্দাদের অসদিচ্ছা আর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অক্ষমতায় বন্ধ হয়ে যায় ড্রেন। স্থবির হয়ে পড়ে পয়ঃনিস্কশন প্রণালী। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ফলে ড্রেন উঁপচে পানি ও বর্জ্য মাটির উপরিভাগে উঠে এলে নানা ধরণের রোগ-জীবানুর সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ে। ডেঙ্গুজ্বরের মত ভয়ংকর রোগে মানবমৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হয়। ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডতো আছেই। এছাড়া পানি ও মাটি দূষণে ভারসাম্য হারায় পরিবেশ। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ‘অটো ড্রেন ক্লিনার’ উদ্ভাবণ করেছেন বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের মধ্য পাংশা গ্রামের শরীফ বাড়ির নাতি ওবাইদুল ইসলাম। রোববার দুপুরে ওবাইদুল আবিস্কৃত অটোড্রেন ক্লিনার প্রযুক্তি নিয়ে আসেন বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আমীনুল ইসলামের অফিস কক্ষে। এসময় নির্বাহী কর্মকতা উপজেলা প্রকৌশলী দফতরের একজন উপ-সহকারী মোসাঃ রাব্বি আক্তারকে ডেকে আনেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন,পল্লী বিদ্যুতের এজিএম সাধন কৃতনীয়া, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোসাঃ নাসিমা আক্তার, হিসাব রক্ষক আব্দুল কুদ্দুস, বাবুগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ শাহজাহান খান, সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম,সাংগঠনিক আরিফ হোসেন নয়ন প্রমূখ। ওবাইদুলের চমকপ্রদ তথ্য হলো, অটো ড্রেন ক্লিনার পদ্ধতিতে শহরের ড্রেন পরিস্কার করতে একজন জনবলেরও দরকার হবে না। আর পুরো প্রকল্পটি চলবে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। ওবাইদুল ইসলাম বলেন, অটো ড্রেন ক্লিনার হচ্ছে একটি শহর পরিচ্ছন্ন রাখার মডেল প্রযুক্তি। এটি বৃহৎ পরিসরে বাস্তবায়ন হলে নগর কর্তৃপক্ষ পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের ব্যয় কমবে। লোকবলের দরকার কম হবে। সেই শ্রমশক্তি অন্যত্র ব্যবহার করে সমৃদ্ধি আনতে পারবে। পাশাপাশি সময় মত প্রতিদিন ড্রেন পরিস্কার হয়ে যাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। ওবায়দুল ইসলাম বলেন, অটো ড্রেন ক্লিনার হচ্ছে সেন্সর নির্ভর এবং মাইক্রো প্রসেসর নিয়ন্ত্রিত একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতির সেন্সরের কাজ ড্রেনে ময়লা-আবর্জনার স্থর শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই স্থর ভেঙে দিয়ে প্রেসার পাম্পের মাধ্যমে পানির গতি বাড়িয়ে নির্ধারিত দূরত্বে ময়লা-আবর্জনা পৌঁছে দেওয়া। সর্বশেষ সেন্সরটি থাকবে ড্রেনের ‘বর্হিগমন’ পয়েন্টে। সেখানে ড্রেনের পানি নদী/খালে নির্গমন না হয়ে যদি উল্টো প্রবেশ করে তাহলে বর্হিগমন পয়েন্টের সেন্সর সক্রিয় হয়ে নদী বা খালের পানির স্থর ড্রেনের পানির স্থরের নিচে না নেমে আসা অবধি পুরো প্রক্রিয়াটি নিস্ক্রিয় করে রাখবে। তরুন এই উদ্ভাবক উদাহরণ টেনে বলেন, শহরের ময়লা-আবর্জনা ড্রেনের নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে ফেলা হলে ড্রেনের পানির স্বাভাবিক গতির সাথে মিশে একটি নির্ধারিত দূরত্বে গিয়ে জমাট বাঁধতে থাকবে। আমি আগেই বলেছি ড্রেনটির পরিমাপের ওপর নির্ভর করে চার স্থরের চারটি সেন্সর স্থাপন করতে হবে। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা যদি প্রথম স্থর পর্যস্ত জমাট বাধে তাহলে সেন্সরের সিগন্যালের মাধ্যমে প্রথম প্রেসার পাম্পটি চালু হয়ে ময়লা-আবর্জনার জমাট বাধা অংশের ওপর প্রবল গতিতে পানি ছুঁড়ে তা ভেঙে দিবে। ওবাইদুল ইসলাম কাছে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পিতার পরিচয় নেই এবং নিজের কোন বাড়ি নেই। থাকি মামার বাড়িতে। আমার জন্মের পর মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। আমার মা আমাকে নিয়ে এসে ওঠেন মামার বাড়ি। আমার লেখাপড়া সবকিছুর ভরণ-পোষণ দিয়েছেন মামা। তিনি অটো ড্রেন ক্লিনার প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সমস্ত সাহস ও অর্থ দিয়েছেন। ওবাইদুল বলেন, বিগত এক বছর ধরে পর্যায়ক্রমে অটো ড্রেন ক্লিনার প্রযুক্তি ডেভেলপের জন্য কাজ করছি। এতে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আমি বাবুগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কারিগরি বিভাগের জেনারেল মেকানিক্স ট্রেড থেকে এসএসসি ভোকেশনাল এবং খুলনার ম্যানগ্রোভ ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে ডিপে¬ামা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এসময় উদ্ধাবক ওবাইদুল হক এটি আরো উন্নয় প্রযুক্তি নির্ভর করতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আমীনুল ইসলাম বলেন,ওবাইদুলের এর উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি কিভাবে সরকারিভাবে টিকসই করা যায় সে বিষয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।