রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে একদিনের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে করোনায় প্রাণ ঝরেছে আরও ১৩ জনের। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছিল ৪ জনের। এ ছাড়াও করোনা পরীক্ষায় একদিনে সংক্রমণের হার বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। হাসপাতালটির করোনা ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও রোগটিতে একদিনের ব্যবধানে ফের মৃত্যু ও সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় এখানে করোনা পরিস্থিতি আবারও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য চিকিৎসকদের। এর আগে গত ৪ জুন রামেক হাসপাতালে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু রেকর্ড হয়।
এ তথ্য নিশ্চিত করে রোববার বিকেলে রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ও উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, মারা যাওয়া ১৩ জনের মধ্যে ছয়জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন এবং অন্যরা রোগটির উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। মৃত ১৩ জনের মধ্যে ছয়জনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। অন্যান্যের মধ্যে নওগাঁর তিনজন, রাজশাহীর দুজন, নাটোরের একজন ও কুষ্টিয়ার একজন রয়েছেন। মৃতদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও একজন নারী। এ ছাড়া করোনা পজিটিভ হয়ে যে ছয়জন মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবং অপর একজন নওগাঁর বাসিন্দা।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে মৃতদের লাশ দাফনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র জানান, মৃত ১৩ জনের মধ্যে ছয়জনের বয়স ৬১ বছরের বেশি। এ ছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে দুজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তিনজন ও ৩১ থেকে ৪০ বছরের দুজন রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৩৫ জন করোনা রোগী। এ ছাড়া নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪২ জন। হাসপাতালটিতে করোনা চিকিৎসায় থাকা ৯টি করোনা ওয়ার্ড ও কেবিন মিলে মোট ২৭১ বেডের বিপরীতে রোববার সকাল পর্যন্ত রোগী ভর্তি ২৮৯জন। ফলে শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় করোনা ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ডা. সাইফুল ফেরদৌস আরও জানান, শনিবার রাজশাহী মেডিকেলের দুটি পিসিআর ল্যাবে ৩৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৮৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৫৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিন শুক্রবার সংক্রমণের হার ছিল ৩৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। ওইদিন ৩৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৪৩ জনের করোনা পজিটিভ এসেছিল। ফলে নমুনা পরীক্ষায় একদিনে সংক্রমণের হার বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।
এদিকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে চাপ বেড়েছে রাজশাহীর এই সরকারি হাসপাতালটিতে। প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগীরা আসছেন চিকিৎসা নিতে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সমৃদ্ধ ৯টি ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তরিত করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে বাড়তি রোগী ভর্তি থাকায় করোনা ওয়ার্ডগুলোর মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
এরপরও রোগী এলে তাদের ভর্তি করা হবে জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালের আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে। অক্সিজেন সংযোগ দেওয়া শেষ হলে সেসব ওয়ার্ডেও করোনা রোগী ভর্তি করা হবে।
এদিকে, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে রাজশাহী নগরীতে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের তৃতীয় দিন ছিল রোববার। লকডাউনের কারণে মহানগরীতে ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া সব ধরনের দোকান বন্ধ রয়েছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে মহানগরীর পাড়া মহল্লায় কিছু দোকান খোলা রাখতে দেখা গেছে। এছাড়াও রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করলেও রাজশাহী শহরের সঙ্গে সারা দেশের যাত্রীবাহী বাস ও রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। গত শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউন চলার ঘোষনা রয়েছে আগামী ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাতদিনের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষনা করা হলেও বিভিন্ন অজুহাতে মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন। যাদের ঘরে ফেরাতে রীতিমত যুদ্ধ শুরু করেছে পুলিশ। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) পাশাপাশি রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) সদস্যরাও এই দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া মাঠে রয়েছে র্যাব সদস্যরা। আইন প্রয়োগকারী এসব সদস্যরা রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আর জরুরী সেবায় চালিত রিকশা-অটোরিকশা পেলে লকডাউন না মানার কারণে প্রথমবার ক্ষমা স্বরুপ এসব গাড়ির চাকার বাতাস ছেড়ে দিতে দেখা গেছে।
সর্বাত্মক লকডাউন না মানার বিষয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু আসলাম জানান, স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন মানাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঠে রয়েছেন একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত। যাদের কার্যক্রম পরিচালনায় স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন অমান্যকারিদের মধ্যে একদিনেই ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫৭ জনকে ৩৪ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।