সমর রায় বাচ্চু। শ্রীমঙ্গলের একজন সফল খামারী। বানিজ্যিক আশায় নয়, শুধুমাত্র শখের বশবর্তী হয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি কবুতরের খামার। অর্জন করেছেন ব্যাপক সফলতা। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ২০০ কবুতর।
শ্রীমঙ্গল শহরতলীর জেটি রোডের একটি বাড়ি। বাড়িটি দুটি প্লটে বিভক্ত। একটি প্লটের তিনতলা ভবনে বাচ্চুর বাসভবন। বাসভবনের গা ঘেষে সোয়া তিন শতকের একটি প্লট। এখানেই তার কবুতরের খামার।
সমর রায় বাচ্চু জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নিতান্তই শখের বশবর্তী হয়ে তিনি কবুতরের খামার করার পরিকল্পনা করেন। প্রথমেই তার বাসভবন সংলগ্ন প্লটে একটি খাঁচায় শুরু করেন কবুতর পালন। কিন্তু চোরের উপদ্রব লেগেই ছিল। তারপর তিনি সোয়া তিন শতক জায়গায় বাউন্ডারী ্ওয়াল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। যেই কথা সেই কাজ। তিনি এই প্লটে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ করে কবুতরের জন্য দেয়াল ঘেষে ছয়টি দৃষ্টিনন্দন ঘর নির্মাণ করেন। ঘরগুলি সেমিপাকা, রডের গ্রিল, কাঠ, উপরে ্িটন দিয়ে এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে-যা নান্দনিক সৌন্দর্য আর সেই সাথে শোভাবর্ধন করছে। ঘরগুলোর ভেতর লাল-নীল বাতি, শীতের সময় ব্যবহারের জন্য রুম হিটার, কবুতরের শষ্যদানা খাবারের জন্য বাটি, পানি খাবারের জন্য পাত্রসহ সবধরণের সুবিধা রয়েছে। শোভাবর্ধণকারী এই খামারে নিজেদের বিনোদনের জন্য তৈরি করেছেন একটি দৃষ্টিনন্দন দোলনা। পরিবারের সদস্যরা বিনোদনের পাশাপাশি কবুতরের উড়াউড়ি আর কবুতরের ডাক শোনে আনন্দ উপভোগ করেন। হরেক রঙের আর হরেক প্রজাতির এসব কবুতর দেখে যে কেউ হবেন মুগ্ধ।
দেয়াল ঘেরা সোয়া তিন শতক প্লটের চারিদিকে কবুতরের জন্য নির্মিত নান্দনিক ডিজাইনের ঘরগুলো বাড়িটির শোভাবর্ধন করছে। যা সহজেই মানুষের মন কাড়ে। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, কবুতরের পরিপাটি ঘর, আধুনিক ল্যাম্প, পুরো খামারের পরিবেশটাকে এক অন্যরকম আবহ বিরাজ করছে। খামারের মাঝখানে আছে বিভিন্ন প্রজাতির বেশ কিছু গাছ। আম, লিচু, আমড়া, নিম প্রভৃতি গাছ আর ছোট্ট গাছগুলোতে থোকায় থোকায় আম ঝুলছে-্এ অন্যরকম সৌন্দর্য। বাচ্চু বলেন তার খামারে ২০০ কবুতর রয়েছে। এরমধ্যে জেকোবিন ৭৫০০ টাকা জোড়া, ক্যাবাচিনো ২৫০০ টাকা জোড়া, লক্ষা ১৫০০ টাকা জোড়া, সিরাজী ২০০০ টাকা জোড়া, কিং ২০০০ টাকা জোড়া, সুইফট ২০০০ টাকা জোড়া, হাই ফ্লায়ার ২৫০০ টাকা জোড়া, আর্ক এ্যাঞ্জেল ১৫০০ টাকা জোড়া হিসেবে ক্রয় করেছেন। এছাড়াও তার খামারে রয়েছে গিরিবাজ, ল্যারেন্ডার চন্দন, কাগজী, মুখীসহ আরো অনেক প্রজাতির কবুতর। যাদের খাদ্য হিসেবে শষ্যদানা সহ মাসে খরচ হয় ৫/৬ হাজার টাকা।
বাচ্চু বললেন, পরিবারের সব সদস্যরা কবুতরের দেখভাল করে থাকেন। বাচ্চু নিজে ছাড়াও তার বড়দা সন্দীপ রায়, বৌদি ফাল্গুনী রায়, স্ত্রী শ্রাবণী রায় দৈনিক ৩/৪ ঘন্টা এখানে শ্রম দেন। পরিবারের ছোট ছেলে সৌম্য, ওম ও অর্ণব লেখাপড়ার অবসরে ব্যস্ত থাকে কবুতরের পরিচর্যায়। বাচ্চু জানান, এখন আর চোরের উপদ্রব নেই। ক্রস জার্মান শেফার্ড ও জার্মান স্পিচ জাতের দুইটি কুকুর গার্ড হিসেবে চমৎকার। রাতের পাহাড়া শেষে দিনে ওরা বিশ্রাম নেয়।
গতকাল সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, কবুতরের বিভিন্ন রকমের ডাকে মুখরিত হয়ে রয়েছে পুরো বাড়ি। বাড়ির কাছাকাছি গেলেই এসব কবুতরের ডাক শোনা যায়। কোন খাচায় ডিম, কোন খাচায় সদ্য প্রস্ফুটিত বাচ্চা, আবার কোন খাচায় বেড়ে উঠা বাচ্চা দেখা যায়। মা কবুতর নিজেদের খাবার পাশাপাশি বাচ্চাদের খাওয়াতে ব্যস্ত। মায়ের মমতায় ভরা এ এক অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য। যা দেখে সহজেই মন প্রাণ ভরে যায়।