বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এদেশ থেকে শাকসবজি ও ফলমূল রফতানির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু রফতানি পণ্যের মানদ- অনুসরণ না করায় ওই বাজার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কারণ এদেশ থেকে রফতানিকৃত শাকসবজি ও ফলমূলে পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের উপস্থিতিসহ নানা কারণে নন-কমপ্লায়েন্সের অভিযোগ ছিল। ওসব কারণে বিভিন্ন সময় কৃষিপণ্যের রফতানি চালান বাতিলও হয়েছে। এমনকি কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের শাকসবজি ও ফল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞাও জারি করে। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় এবার কৃষিপণ্যের রফতানির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে উদ্যোগী হয়েছে। ওই লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় এখন স্বপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে যোগাযোগ করছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যে ৬ বছর পর ইউরোপে পান রফতানি শুরু হয়েছে। পাশাাশি দেশে উত্তম কৃষিচর্চা নীতিমালা (গ্যাপ) বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। সারা দেশে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। ওসব উদ্যোগের ফলে আন্তর্জাতিক কৃষিপণ্যের বাজারে বাংলাদেশ সম্মানজনক অবস্থান করে নিতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের আলু, শাকসবজি ও ফলমূল রফতানির একটি সম্ভাবনাময় বাজার। আর ওই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতেই ইউরোপসহ উন্নত দেশে অন্যান্য কৃষিপণ্যের রফতানি বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এদেশের কৃষিপণ্য উৎপাদনকারীরা সরাসরি রফতানি কাজে সম্পৃক্ত না হওয়ায় তারা আমদানিকারক দেশের কমপ্লায়েন্স ইস্যুগুলো নিয়ে যথাযথভাবে অবহিত নয়। ফলে আমদানিকারক দেশের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও রফতানি না হওয়ায় ইন্টারসেপশনের (রফতানি পণ্যে পোকামাকড়, রোগবালাই ইত্যাদি ধরা পড়া) ফলে এদেশ থেকে কৃষিপণ্য রফতানির সুযোগ বাড়ছে না। কিন্তু শাকসবজি ও ফলমূল মালয়েশিয়া, ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্যে রফতানির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। তবে সেজন্য বাংলাদেশের পণ্যকে কম্পিটিটিভ হতে হবে। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপসের মতো আলুকে প্রসেস করতে পারলে রফতানি অনেকাংশে বেড়ে যাবে। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনার ব্যবস্থাসহ প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে জমি এবং ঋণ দুটোই প্রয়োজন।
সূত্র আরো জানায়, শাকসবজি ও ফল রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার উদ্দেশ্যই ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের উৎপাদিত শাকসবজি ও ফল রফতানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা রয়েছে সে বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের করণীয় নির্ধারণ করা। কারণ কৃষিকে লাভজনক ও বাণিজ্যিকীকরণের জন্য রফতানি বাড়ানো প্রয়োজন। ওই ব্যাপারে কৃষি উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করা জরুরি।
এদিকে কৃষিপণ্য রফতানি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রুট, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসাইন জানান, কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে কিছু বাধাবিপত্তি থাকলেও সেগুলো মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। এদেশে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও প্যাকেজিং সমস্যা নেই। পণ্যবাহী কার্গো স্পেস বাড়ানো ও উচ্চ ভাড়া হ্রাস করতে পারলে রফতানি বাড়বে। আর যে জেলায় যে ফসল উৎপাদন ভালো হয়, ওই জেলায় ওই ফল উৎপাদনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া রফতানি মনিটরিংয়ের জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার চানান, বিএডিসি জন্মলগ্ন থেকেই কৃষি উন্নয়নে, কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। শিগগিরই রাজশাহী জেলায় একটি প্রকল্প চালু হতে যাচ্ছে। ওই প্রকল্পের আওতায় নিজস্ব কুলিং ভ্যানের মাধ্যমে রাজশাহী থেকে আমসহ অন্যান্য পচনশীল পণ্য ঢাকায় স্থাপিত সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিটে নিয়ে আসা হবে। ফলে রফতানি আরো সহজ হবে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইফসুফ জানান, কৃষিপণ্য রফতানির জন্য বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি থেকে ফিডব্যাক পাওয়া গেছে। উৎপাদন বাড়াতে কাজ করা হচ্ছে। রফতানি যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে ঢাকায় একটি কার্গো ভিলেজ, শিপিং কনটেইনার ভেসেল সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।