বন্যপাখির জন্য নিরাপদ প্রজনন ও অভারন্য গড়ে তুলতে কাজ করছে খুলনার পাইকগাছায় পরিবেশবাদী সংগঠন বনবিবি। উপজেলায় গাছে গাছে পাখির জন্য মাটির পাত্র স্থাপন করছেন। এতে পাখি শিকার বন্ধ ও গড়ে উঠছে অভারন্য। বর্তমান বিশ্বের জলবায়ুর পরির্বতনের ফলে পাখিদেরও আবাসস্থল ধংস হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে দিন দিন পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। উপকূল এলাকায় পাখির আবাসস্থল নিরাপদ রাখা ও বিচারণস্থল সংরক্ষণের কাজ করে যাচ্ছে বনবিবি সংগঠন। উপজেলায় বিভিন্ন গাছে স্থাপন মাটির পাত্রে পাখি বাসা বেধে সেখানে ডিম পাড়িয়ে বাচ্চাও ফুটিয়েছে। সংগঠন সভাপতি সাংবাদিক প্রকাশ ঘোষ বিধান গাছে মাটির পাত্রে পাখি বাসা বাঁধবে এমনটা স্বপ্ন দেখেন। এখন সেই স্বপ্ন ধারাবাহিক ভাবে বাস্তবায়ন হতে চলেছে। গাছে বাধা মাটির পাত্রে পাখি বাসা করায় সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সাড়া পড়েছে। উপজেলায় বিভিন্ন গাছে গাছে বাঁধা হচ্ছে মাটির পাত্র, ছোট ঝুড়ি ও বাঁশের তৈরী বাসা। আর তাতে পাখিরা বাসা বাঁধছে। উপজেলার সরল মেইন সড়কের পাশে বট গাছে বাধা মাটির পাত্রে শালিক পাখি বাসা বেঁধেছে, নতুন বাজারের পাশে বকুল ও মেহগুনি বাধা মাটির পাত্রে চড়-ই পাখি বাসা বেঁধেছে। গোপালপুর স্কুলের পাশের মেহগুনি গাছে দোয়েল পাখি বাসা বেঁধেছে, বোয়ালিয়া কপোতাক্ষ নদে তীরে বটগাছে দোয়েল পাখি বাসা বেঁধেছে। প্রকৃতির নিয়মে পাখিরা নির্দিষ্ট সময়ে প্রজননের জন্য বাসা তৈরীর অনুকূল পরিবেশ খুঁজে নেয়। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত পাখিদের প্রজননের সময়। এপ্রিল থেকে বাসা বানাতে শুরু করে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি তারা তাদের পছন্দমত গাছের ডাল, পাতা, গাছের গর্তে আবাসস্থল হিসাবে বেছে নেয়, যেমন-কাঁক, চিল, ঈগল, বাচপাখি, বড় উঁচু গাছের মগডালে বাসা তৈরী করে। টিয়া, কাটঠুকরা গাছের গর্তে বা গাছের কান্ড ছিদ্র করে বাসা তৈরী করে। মাছরাঙ্গা বিভিন্ন প্রজাতির পাখি মাটির গর্তে বাসা তৈরী করে। এসব প্রজাতির পাখি মাটির পাত্রে বাসা বাঁধে না। মাটির কলস বা পাত্রে দোয়েল, শালিক, পেঁচা, চড়-ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা প্রজনন সময বাসা বাধে। পাখি মাটি পাত্রের ভিতরে তারমত করে ছোট ছোট ডাল, খড়খুটা দিয়ে বাসা তৈরী করে। উপকূলের এ উপজেলায় পাখি সুরক্ষায় আবাসস্থল তৈরীর লক্ষ্যে গাছে মাটির পাত্র বেধে দেওয়া নানা কুটুক্তি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শুনছে সংগঠনটি। প্রথম বছরে গাছে বাধা প্রায় সব মাটির পাত্র গুলতি মেরে ও ইট পাথর ছুড়ে ভেঙ্গে দেওয়া হয়। সংগঠনটি বিভিন্ন স্কুল কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের পাখির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে লিফলেট ও পাখি রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি করতে উদ্ভূদ্ধকরণ সভা করেন। পাখি পৃথিবীর ৮০ ভাগ কীটপতঙ্গ খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অপরিসীম। বনবিবি সংগঠন ২০১৬ সাল থেকে উপজেলার পৌরসভা, গদাইপুর, রাড়-লী, হরিঢালী, কপিলমুনি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন গাছে মাটির পাত্র স্থাপন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। পরিবেশ বান্ধব পাখিকূল রক্ষা, বিরল প্রজাতির বিলুপ্তি রোধ, নির্বিচারে শিকার বন্ধ, পাখিদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রগুলো নষ্ট না করাসহ সচেতনতা করে চলেছে। সংগঠনের সভাপতি প্রকাশ ঘোষ বিধান জানান, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাখি রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি ও এদের আবাসস্থল সুরক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। াামাদের দেশে জীববৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে পাখি। পরিবেশবান্ধব এই প্রাণীটি জীববৈচিত্রের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের দ্বারা সৃষ্ট নানা কারণে পাখিরা আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলায় বিভিন্ন গাছে প্রায় ১২শ মাটির পাত্র স্থাপন করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন ঝড়সহ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে প্রায় তিনশতাধিক মাটির পাত্র ভেঙ্গে গেছে। সে সকল গাছের মাটির পাত্র ভেঙ্গে গেছে সে সব গাছে পুনরায় স্থাপন করা হচ্ছে। উপজেলার পৌর সদরসহ আশপাশের ৩/৪টি ইউনিয়নের গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে গাছের ডালে ডালে বাঁধা হয়েছে মাটির ছোট ছোট কলস ও ঝুঁড়ি। গদাইপুর গ্রামের চাষী মোবারক ঢালী বলেন, পাখি আমাদের ক্ষেতের পোকা মাকড় খেয়ে অনেক উপকার করে। বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. হারুন জানান, এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এর ফলে আমাদের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিকর ভারসাম্য রক্ষা হবে। পাখিরা ফিরে পাবে নিরাপদ আবাসস্থল। পাখি কৃষকের পরম বন্ধু। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। আমি নিজেই প্রাণীবিদ ও পাখিপ্রেমী। পাখি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, মানুষের উপকারী বন্ধু। আমি এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরে গর্বিত মনে করছি।