এডভোকেট পারভিন কাওসার মুন্নী। তিনি থাকেন ঢাকায়। নিজ বাড়ী কোম্পানীগঞ্জেই। সবার কাছে বিএনপি নেত্রী হিসেবে পরিচিত। মানুষের যে কোনো বিপদে পাশে থাকেন। খোঁজ-খবর রাখেন। যথাসাধ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েও দেন। করোনার শুরুতেই তিনি এলাকার বহু দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে একেবারে তৃণমুল পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সাথে তাঁর সম্পৃক্ততা আছে। তিনি আগামীতে নোয়াখালী-৫আসন থেকে এমপি প্রার্থী হওয়ার জোরালো গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। এতে দলের মধ্যে নানান জনের নানা মত দেখা দেয়। সেই যাই হোক; তবে তিনি এমপি প্রার্থী হতে নিজেই মাঠে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কয়েকটি জায়গায় নিজের মত করে বৈঠকও করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে তিনি কোম্পানীগঞ্জে ভোটারদের কাছে নয়া আলোচনায় আছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুর পর থেকেই ওই নির্বাচনী আসনে আগামীতে কারা প্রার্থী হবেন? কিংবা কে দলীয় মনোনয়ন পাবেন? এসব প্রশ্ন এখনো দলীয় নেতৃবৃন্দের কাছে আলোচনার প্রধান বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। পাড়া-মহল্লায় চলছে সরব আলোচনা। কে ধরবেন নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপির হাল? এসব বহু প্রশ্ন কর্মীদের মুখে মুখে। আর ওই আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে নিজ কর্মগুণে স্থান করে নিয়েছেন অ্যাডভোকেট পারভিন কাওসার মুন্নীও। তাঁকে নিয়ে দল এবং দলের বাইরেও অনেকেরই নানা কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ৯০ দশকে বসুরহাট সরকারী মুজিব কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ছাত্রদলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা প্রার্থী ছিলেন পারভিন কাওসার মুন্নী। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন। এরপর কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। একপর্যায়ে শহীদ জিয়ার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দীর্ঘ সময়ের মাঠের সক্রিয়কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপির রাজপথের সক্রিয় নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। কোম্পানীগঞ্জের কৃতী সন্তান এই পারভিন কাওসার মুন্নী। তিনি কোম্পানীগঞ্জের চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মুকিম পাটোয়ারি বাড়ির সাবেক সরকারী কর্মকর্তা মরহুম রুহুল আমিন মিয়ার ছোট মেয়ে। ১৯৯১ সালের সরকারী মুজিব কলেজের ছাত্র সংসদের ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী ইকবালের ছোট বোন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চরকাঁকড়ার চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জিয়া তাঁর বড় ভাই। ব্যক্তিগত জীবনে মুন্নী একজন সফল আইনজীবী হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তিনি ফ্যাক্টিস করেন ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টে। মুন্নীর স্বামী অ্যাডভোকেট নুরুল আলমও একজন সফল আইনজীবী। তাঁর স্বামীও বিএনপি পরিবারের সন্তান। কুমিল্লা-৯ আসনের সাবেক এমপি কর্নেল আনোয়ারুল আজিম মুন্নীর চাচা শ^শুর। মুন্নী দুই সন্তানের জননী। মেয়ে সমরিতা মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করছেন। তারা থাকেন ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমন্ডিতেই।
মুন্নী ঢাকায় রাজনীতি করলেও নিজ এলাকা কোম্পানীগঞ্জের রাজনীতির বিষয়েও খবর নেন নিয়মিত। দলের সকল কর্মসূচীতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। আর্থিক সমর্থন দিয়েও আসছেন এখনো। লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অফ ডারবি থেকে আইন বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে তিনি ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে বাংলাদেশে আইনপেশায় জড়িয়ে পড়েন। মুন্নী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির অন্যতম নেতৃত্বে আছেন। সারা বাংলাদেশের বার থেকে ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশানের কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি (২০২১-২০২২)। সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠিত সুপ্রীম কোর্টের যত আন্দোলন সংগ্রাম চলছে। তার সাথে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন। যার ভিডিও ফুটেজ ফেইসবুকে ভাইরালও হচ্ছে। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট ইউনিটের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা পদে কর্মরত আছেন।
সোমবার সকালে সাংবাদিকদের আন্দোলন সংগ্রাম ও মওদুদ আহমদ প্রসঙ্গে পারভিন কাওসার মুন্নী বলেন, ঢাকা সুপ্রিম বারের বর্তমানে সভাপতির পদটি জবর দখল করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের এখন নির্বাচিত সভাপতি দরকার। সেই চেষ্টাই আন্দোলন চলছে। ঢাকায় বিএনপির নানা কর্মসূচীতে উপস্থিত থাকি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সফল সদস্য এবং সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ এর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত হয়েছি। তবে শংকিত নই। তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে এবং সামনেও থাকবে। তাঁর অবদান আমরা দলের কেউ অস্বীকার করতে পারবোনা। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ এর প্রতি সম্মান রেখে কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির রাজনীতি চাঙ্গা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আর আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনৈতিক কর্মী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা বর্তমানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের হাতকে আরো শক্তিশালী করতে রাজনীতি করছি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুন্নী বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের অসংখ্য নেতা-কর্মীরা সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় জেল-জুলুমের শিকার হচ্ছেন। দেশের মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। মেট্টো হোমসের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তিনিতো বিএনপির প্রাথমিক সদস্যও নয়। তাহলে তিনি কীভাবে মওদুদ আহমদের মত বিশাল হৃদয়ের অধিকারী নেতার নেতৃত্বে আসবেন? এটি হাস্যকর। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে; এখন দলকে এগিয়ে নিতে হলে মাঠের ঐক্য সবচেয়ে জরুরী।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভিন কাওসার মুন্নী আরো বলেন, বহুদলীয় গনতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের প্রতিফলন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এই দলের একজন আদর্শীক কর্মী হিসাবে কাজ করে যেতে চাই। সেই সাথে আগামীতে নোয়াখালী-৫ আসনে এমপি হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পেলে সাধারণ জনগণ ও দলের জন্য নি:স্বার্থ এবং নিরলস ভাবে কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ। মানুষকে ভালোবেসে সবকিছু করবো। এলাকায় সাংগঠনিক অবস্থান মজবুত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাবো।