জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার নয়াপাড়া টু শিবসমুদ্র পর্যন্ত মাত্র দুই-কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণ না হওয়ায় ১১টি গ্রামের মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঐ কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাচলের জন্য এখন একেবারেই অনুপযোগী হওয়ার কারণে আশপাশে এলাকার মানুষের চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই ঐ কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীরা বিপদজনক হয়ে পড়ে। এরপরও প্রয়োজনের তাগিদে জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে এলাকার বসবাসকারী ও পথচারীদের। তবে ঐ কাঁচা রাস্তাটি বহু বছরের সমস্যা সমাধানে নেয়া হয়নি কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। স্থানীয় জন-প্রতিনিধিদের অবহেল কারণে ঐ কাঁচা রাস্তাটি বছরের পর বছর ধরে বেহালয় রয়েছে বলে এমনিটি অভিযোগ গ্রামবাসীর ও পথচারীদের।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের নয়াপাড়া টু শিবসমুদ্র গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই-কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি স্বাধীনতার ৫০ বছর যাবৎ সংস্কার ও পাকাকরণের অভাবে বর্তমান জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঐ দুই-কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা দিয়ে উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা, ভাওজাপাতার, নয়াপাড়ার, হিমাইল, শিবসমুদ্র, পারকাটা, তাল্লা, বলি-শিবসমুদ্র, গাড়ইল, রায়ভাঙ্গি, পার্বতীপুর গ্রামের অন্তত ১৩ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। ঐ রাস্তাটি এলাকাবাসীর চলাচলের একমাত্র অবলম্বন। ঐ কাঁচা রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন উপজেলার শত শত কৃষিপণ্য পরিবহন, এ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি, মোটরসাইকেল, বাই-সাইকেল, ভটভটি, ভ্যান, অটো-ভ্যান চলাচল করে। বর্তমান ঐ রাস্তাটি একাধিক স্থানে ছোট-বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি ফলে বর্ষায় একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা মাঝে পানি জমে থাকে। তাছাড়া সেই রাস্তার দু-ধারে নেই কোন পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের ব্যবস্থাও। নয়াপাড়া টু শিবসমুদ্র গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই-কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার মাটি বর্ষার একটু বৃষ্টির পানিতে নরম, পিচ্ছিল হচ্ছে। সেই সঙ্গে হচ্ছে এক হাঁটু-নরমকাঁদা এবং সেখানে ছোট-বড় অনেক গর্তের সৃষ্টির ফলে কৃষিপণ্য পরিবহন, ভ্যান, ভটভটি, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলসহ কোন যানবাহনই চলাচল করতে পাড়ছেনা। এমকি পায়ে হেঁটে চলাচল করতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেখানে। তবে খুব দ্রুত কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী ও পথচারীরা।
উপজেলার বিয়ালা-পারকাটা গ্রামের মো.বদিউজ্জামান শেখ, মো.মোজাহার আলী মন্ডল ও মো.রাব্বিউল হাসানসহ অনেকেই বলেন, আমরা চরম অবহেলিত এলাকায় বসবাস করছি, যার কারণে স্বাধীনতার ৫০ বছর হলেও গ্রামীণ এই অবহেলিত কাঁচা রাস্তাটি এখনো পর্যন্ত আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি। উপজেলায় বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট উন্ন্য়ন হলেও নয়াপাড়া টু শিবসমুদ্র পর্যন্ত মাত্র দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি আর পাকাকরণ হয়নি। ঐ রাস্তাটি বহু বছরের পর বছর ধরে কোন সংস্কারের কাজ এবং পাকাকরণ না হওয়ায় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জন-প্রতিনিধিকে বিষয়টি অনেকবার জানানোর পরও কাঁচা রাস্তাটি এখনো বেহাল হয়ে পড়ে আছে।
উপজেলার পারকাটা গ্রামের মো. এরশাদুল হক, মো. মফিদুল ইসলাম ও নূর-জাহান বেগম বলেন, এই রাস্তাটি প্রায় ১১টি গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র অবলম্বন। এই রাস্তা ছাড়া আর কোন আমাদের চলাচলের জন্য রাস্তা নেই। এই রাস্তায় বর্ষাকালে একটু হালকা বৃষ্টি হলেই রাস্তার মাটি গুলো নরম হয়ে ব্যাপক হারে কাঁদা-মাটি ও পিচ্ছিলসহ বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলের সময় বিপাকে পড়ছেন পথচারীরা। দিনের বেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও রাতের সময় এই রাস্তায় কোনো যানবাহন চলাচল করে না। অনেক সময় রাতের বেলায় জরুরি মুহূর্তে রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে। এ কাঁচা রাস্তার কারণে বর্তমান এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
একই গ্রামের কৃষক মো. ইসমাইল হোসেন, মো.মফিজ উদ্দিন ও খামারি মোছা. আনজুয়ারা আক্ষেপ করে বলেন, ভোটের সময়ে জনপ্রতিনিধিরা এলাকার উন্নয়নের কথা বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ভোট নেন। ভোট নেওয়ার শেষে আর তারা আমাদের কোন খোঁজ খবর রাখেন না। এলাকার এ কাঁচা রাস্তার ফলে বর্ষাকালে যে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও গবাদিপশু পালন করি, তা বাজারজাত করতে ঠিকমতো পাড়ছি না। যেখানে বাজারজাত করতে পরিবহনের ভাড়ার খরচ ২০ টাকায় হয়, সেখানে ভাড়া নিচ্ছে প্রায় ১শ টাকা। তাছাড়া সময় অপচয়সহ কৃষিপণ্য ও গবাদিপশু নিয়ে বরাবরই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
উপজেলার নয়াপাড়া টু শিবসমুদ্র রাস্তার ভ্যান চালক মো.মোফা হোসেন ও ভটভটি চালক মো.রফিকুল ইসলাম বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই কাঁচা রাস্তাটি চলাচলের জন্য একেবারেই অনুপযোগী হয়। এ রাস্তা দিয়ে ভ্যান ও ভটভটি চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এ কাঁচা রাস্তার মাটিতে বৃষ্টির পানি পড়লে মাটিগুলো নরম ও কাঁদাযুক্ত হয়ে অনেক গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভ্যান ও ভটভটি চালাতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিকল হচ্ছে এবং অনেক সময় বেঙ্গেও যাচ্ছে। তাই ঐ কাঁচা রাস্তাটি খুব দ্রুত পাকাকরণ করা হলে সবার জন্য অনেক উপকার হবে।
স্থানীয় মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. নূরনবী মন্ডল বলেন, এই এলাকার নয়াপাড়া টু শিবসমুদ্র প্রায় দুই-কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার কাজের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে, কিন্তু কেন কাজটি এত দিন দেরি হচ্ছে তা আমার জানানেই।
এই বিষয়ে কালাই উপজেলার এলজিইডি’র প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঐ কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। রাস্তাটি পাকাকরণের কাজের প্রয়োজনীয় বরাদ্দর পেলেই খুব দ্রুত কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণ করা হবে।