নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিলীন হতে চলছে সরকারী হাট-বাজার। উপজেলার ৭টি হাটের মধ্যে বর্তমানে নতুন হাট বিলীন হয়ে গেছে। ওই হাটে এখন এলাকার লোকজন গরু ছাগল চড়াচ্ছে। কেউ কেউ আবার হাটের জায়গায় তুলেছে ঘরবাড়ি। কেউবা দিয়েছে পোয়াল পুজ। আগে যে হাট ছিল তার কোন চিহ্ন নেই সেখানে। এক কথায় ওই হাট এখন বিলীন হয়ে গেছে। কারণ জানতে চাইলে এলাকার অনেক ব্যবসায়ি জানান, আগে এ হাটটি সরকারীভাবে ডাক হত। বাংলা সন ধরে ১ বছরের জন্য ডাক হত হাট। ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় ডাক হত। এখান থেকে সরকার রাজস্ব পেত। এখন গ্রামের মোড়ে মোড়ে ব্যক্তি মালিকানায় দোকান গড়ে ওঠায় পাশে থাকা সরকারী হাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে মানুষ দোকান সড়িয়ে নিয়ে তারাও যাচ্ছে রাস্তার মোড়ে। সরকারী হাট এভাবে বিলীন হচ্ছে। অথচ অবৈধভাবে সড়কের মোড়ে মোড়ে বসানো বাজার চলছে জমজমাটভাবে। এ অবৈধ বাজার গুড়িয়ে দেয়ার নিয়ম থাকলেও দায়িত্বে থাকা কর্তারা কেন যেন নীরব। আর এ কারণেই সৈয়দপুর উপজেলার হাট-বাজার বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সৈয়দপুর উপজেলায় রয়েছে ৭টি হাট। হাটগুলো হল কামারপুকুর হাট, চওড়া বাজার হাট, হাজারী হাট, সিপাইগঞ্জ হাট, পোড়ার হাট, নতুন হাট, চিকলী বাজার। করোনাকালিন সময় থেকে হাটগুলো ইজারা দেয়া বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে হাটগুলোর খাস খাজনা আদায়ের দায়িত্ব পড়েছে ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা (তহশীলদার) ওপর।
২৪ জুন পোড়ার হাট ইজারা ও খাস খাজনা নিয়ে কথা হয় বোতলাগাড়ি ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা ইমদাদুল হকের সাথে। তিনি জানান, করোনাকালীন সময়ে হাটগুলোর ইজারা বন্ধ রাখে সরকার। আমরা ভুমি অফিস থেকে খাস খাজনা আদায় করে আসছি। সপ্তাহে ২দিন শুক্র ও মঙ্গলবার পোড়ার হাট বসে। প্রত্যেক দোকানদারের কাছ থেকে আমরা খাস খাজনা নিয়ে থাকি ৫ টাকা করে। পোড়ার হাটে রয়েছে সরকারী ভাবে ৭০টি দোকান। কিন্তু সেখানে দখলদাররা গড়ে তুলেছে প্রায় দুই শতাধিক দোকান। অতিরিক্ত দোকানদাররা আমাদের খাজনা দিতে চায় না। তাছাড়া দোকান থাকলেও ব্যবসায়িরা সেখানে ব্যবসা করেন না। কারণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। বর্ষায় পানিবন্দী হয়ে থাকে হাটটি। পানি নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় অনেক ব্যবসায়ি পোড়ার হাট ছেড়ে চলে গেছে পাশে ঢেলাপীর হাটে। এ হাটে সরকারী যে সৌচাগার ছিল বর্তমানে সেটি দখল করে নেয় মোস্তফা নামে এক ব্যবসায়ি। সৌচাগার বন্ধ করে তিনি সেখানে মুরগীর ব্যবসা করছেন। একসময় এ হাটটি ডাক হত এক বছরের জন্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। হাটে কাঠের দোকানদার মিস্ত্রী রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমি এ দোকানটি ভাড়ায় নিয়ে ব্যবসা করে আসছি। আমার দোকানের মালিকের নাম লিটন। প্রায় ২ বছর থেকে আমি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছি। প্রতি হাটে সরকারী লোককে খাজনা দিয়ে থাকি ৫ টাকা করে।
মুদি দোকানদার দুলাল হোসেন বলেন, বর্তমানে সরকারী এ হাটের বারো অবস্থা বিরাজ করছে। হাটের জায়গা অনেকে দখল করে রেখেছে। এগুলো উদ্ধারে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। সরকারীভাবে যদি হাটটি সংস্কার করে নিয়মতান্ত্রিক দোকান নির্মাণ করে বরাদ্দ দেয়া হত তাহলে সরকার এখান থেকে অনেক টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারত। কাঁচা মালের ব্যবসায়ি দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকার হাটটির দিকে নজর দিলে এ হাট থেকে অনেক রাজস্ব আদায় হত। দ্রুত সময়ে হাটটির দিকে সরকার নজর না দিলে একসময় এ হাটটি বিলীন হয়ে যেতে পারে।