রংপুরের মিঠাপুকুরে তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া এক শিশু শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগে পালিয়ে থাকা রাজা মিয়াকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যাকা-ের ঘটনার দিন ৩০ দিন পর আত্মগোপনে থাকা ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা ও লাশ গুম করার অভিযোগে মামলা রয়েছে। শুক্রবার (২৫ জুন) দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে অভিযুক্ত রাজা মিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রংপুর জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (ডি সার্কেল) মোঃ কামরুজ্জামান তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এরআগে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেলে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা এলাকার তালমার মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে আত্মগোপনে থাকা রাজা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার এজাহার ও মিঠাপুকুর থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ মে বুধবার বিকেলে উপজেলার বুজরক সন্তোষপুর গ্রামের প্রাথমিক স্কুলপড়ুয়া দশ বছর বয়সী এক শিশু তার মায়ের কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে চিপস কেনার জন্য বাড়ির পাশের দোকানে যায়। এরপর আর বাড়িতে ফিরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে পরিবারের লোকজন। কোথাও নিখোঁজ শিশুটির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিবেশি রাজা মিয়াকে তার নানীর বাড়িতে খুঁজে না পাওয়ায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তখন শিশুটির পরিবার গ্রামের লোকজনসহ রাজার নানীর বাড়িতে গেলে পূর্ব দুয়ারী আধাপাকা ঘরের মেঝেতে কাঁদা দেখে সবার সন্দেহ বেড়ে যায়। এরপর তারা পুলিশকে খবর দেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের মেঝের মাটি সরিয়ে গর্ত করে চাপা দিয়ে রাখা নিখোঁজ শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। লাশ উদ্ধারের সময়ে রাজা মিয়ার নানী হালিমা বেগমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই ঘটনায় রাজা মিয়া ও হালিমা বেগমকে আসামি করে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার রাজা মিয়া ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানিয়ে এএসপি কামরুজ্জামান বলেন, আসামি রাজা মিয়া বুজরুক সন্তোষপুর গ্রামের শামিম মিয়ার ছেলে। ছোটবেলা থেকেই তার নানীর বাড়িতে থেকে বড় হয়েছে। রাজা মিয়া রুটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করত। ঘটনার দিন শিশুটি চিপস কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। পথিমধ্যে রাজা মিয়া ওই শিশুটিকে আরও ১০ টাকা দিয়ে বিস্কুট আনতে বলেন। শিশুটি বিস্কুট নিয়ে রাজার বাড়িতে গেলে কৌশলে তাকে নিয়ে ঘরের ভিতরে যায়। এরপরে রাজা ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। কিন্তু শিশুটি চিৎকার দিতে শুরু করলে রাজা তার গলা টিপে ধরে। এতে শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ব্লেড দিয়ে শিশুটির গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে রাজা মিয়া।
পরে কোদাল ও বটি দিয়ে ঘরের মধ্যে গর্ত করে লাশ গর্তের মধ্যে পুতে ফেলে। গর্ত পানি দিয়ে লেপে দিয়ে তার উপর ধানের বস্তা রেখে দেয়। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত কোদাল পাশের বাড়িতে, বটি ঘরের বিছানার নিচে এবং রক্ত মোছার কাজে ব্যবহৃত কাঁথা ও লুঙ্গি বাড়ির পাশের পুকুরে পুতে রাখে। এরপর রাজা মিয়া নিজেকে অপরাধ আড়াল করতে প্রতিবেশিদের সাথে নিখোঁজ শিশুটিকে খুঁজতে বের হন। পরে ধরার পরার ভয়ে ওই দিন রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে রাজা মিয়া আত্মগোপনে চলে যায়।
রাজা মিয়াকে গ্রেফতারের হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ব্লেড, বটি, কোদাল, রক্তমাখা কাঁথা ও লুঙ্গি উদ্ধার করা হয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দিতে রাজি হওয়ায় শুক্রবার দুপুরে আদালতে নেয়া হয় রাজা মিয়াকে। সেখান থেকে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।