কিশোরগঞ্জে কোরবানীর বাজার কাঁপাতে প্রস্তুত ‘ভাটির রাজা’ ‘ব্লাক ডায়মন্ড’ কালো মানিকসহ আরও নানা নামের গরু।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের নিয়ামতপুরের রোহা গ্রামের বাসিন্দা বাংলাদেশ মিলস্কেল রি-প্রসেস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং জেসি গ্রুপ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোঃ এরশাদ উদ্দিনের নতুন আধুনিক জে,সি এগ্রো দুগ্ধ ও গরু মোটাতাজ করণ প্রকল্পের ‘ব্লাকডায়মন্ড’ গরুটি এলাকায় সারা জাগিয়েছে। গরুটির দাম হাকা হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। নিয়ামতপুরের বিলে ১০ একর নিজস্ব জায়গায় গরুর খামারেই এখন সময় দিচ্ছেন এরশাদ উদ্দিন। গরু পোষা তাঁর প্রিয় সখ। তাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পরিকল্পনা ছিল গরুর খামার প্রতিষ্ঠার। গত বছরের মার্চে বহির্বিশ্বে করোনার প্রাদুর্ভাবে সারাদেশে যখন লকডাউন ছিলো তিনি তখন ঢাকা হতে নিজ এলাকায় এসে অবসর সময় না কাটিয়ে করোনাকালের ভেতরেই উদ্যোগ নেন গরু খামারের। ২০টি দেশি বিদেশী গরু দিয়ে খামার শুরু করেন। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণেরও উদ্যোগ নেন। অনেক গরু কুরবানীর জন্য উপযোগী হলে খামারে এসেই নিয়ে যাচ্ছে গরু ক্রেতারা। খামারে বিদেশী কিছু গাভী দিয়ে দুগ্ধ খামারও সম্প্রসারণ করেছেন।
আসন্ন কোরবানিকে সামনে রেখে উন্নত জাতের ২৫০টি গরু ও মহিষ মোটাতাজাকরণের কাজ করছেন তিনি। এক বছরের ব্যবধানে তার খামারে এখন গরু, মহিষের সংখ্যা ২৫০। এর মধ্যে ১২০টি গরু তিনি প্রস্তুত করেছেন কোরবানি ঈদের জন্য। এ জন্য বেছে নিয়েছেন অর্গানিক পদ্ধতি। এই ঈদে ৩ কোটি টাকা ব্যবসার আশা করছেন এই খামারি। ইতোমধ্যে ২ কোটি টাকার গরু বিক্রি করেছেন। পাশাপাশি অচিরেই খামারের পরিধি বাড়িয়ে প্রায় এক হাজার গরু, মহিষ পালনের স্বপ্নের কথাও জানান তিনি।
এরশাদের সেই পরিকল্পনা আজ প্রায় সফল। এলাকায় তো বটেই আশপাশের উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে তার অর্গানিক পদ্ধতিতে পশুপালনের কথা। ফলে প্রতিদিনই কোরবানির পশু কিনতে ক্রেতা আসছেন। অনেকে গরু পছন্দ করে বুকিং দিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সত্তর ভাগ গরু বিক্রি করে ফেলেছেন।
তাঁর খামারে সবচেয়ে বড় ৯০০ কেজি ওজনের ষাঁড়ের নাম ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’। ব্লাকডায়মন্ডের দাম হাকা হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। খামারের সবচেয়ে কম ওজনের গরুটির ওজন প্রায় ৪০০ কেজি। এগুলো ছয়মাস থেকে এক বছর ধরে খুব যত্ন নিয়ে পালন করা হচ্ছে। খামারে পশুর খাবারের সার্বিক তত্বাবধানে থাকা মো. সাইদ আল সাহাবের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫ জন শ্রমিক খামারে নিয়মিত কাজ করেন। এর মধ্যে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেয়া কর্মী রয়েছেন। তিনি নিজেও এ কাজে প্রশিক্ষিত।
খামারের উদ্যোক্তা এরশাদ উদ্দিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার গরুপালনে প্রতি দুর্বলতা ছিল। বিভিন্ন ক্ষতিকর ওষুধ ও স্টেরোয়েডের মাধ্যমে গরু মোটাতাজাকরণ ভুল প্রমাণ করতেই আমি পশুখাদ্য নিজে উৎপাদন করছি। কুড়া, ভুষি, ভুট্টা, খড়, খইল, চিড়া, গুড় এবং ডাই ক্যালসিয়াম ফসফেট নিয়মিত দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত জিংক, কৃমিনাশক, লিভার টনিক ও বিভিন্ন রোগের ওষুধও দিচ্ছি।’
সফল খামারি আলহাজ্ব এরশাদ উদ্দিন আরও বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে আমরা এই প্রথম গরু মোটাতাজা ও দুগ্ধ ফার্মের জন্য সরাসরি জমি থেকে ভুট্টার সাইলেজ তৈরির মেশিন আমদানি করি। আমাদের গরুর ফার্মের ব্যাবহারের জন্য কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের পাঁচশত একর ভুট্টার জমি থেকে অগ্রিম ভুট্টার চারা ক্রয় করে নিয়েছিলাম। যেগুলো জার্মানি স্ট্যান্ডার্ডে জার্মান মেশিনে সরাসরি জমি থেকে সাইলেজ চপিং করা হয়। যা গরুর জন্য খুবই উপকারী খাবার।’ কোরবানি ঈদ সামনে রেখে সুস্থ ও ভেজালমুক্ত গরু সরবরাহ করা মূল উদ্দেশ্য জানিয়ে এরশাদ আরো বলেন, ‘ঈদে ৩ কোটি টাকার গরু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ইতোমধ্যে ২ কোটি টাকার গরু বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অর্গানিক পদ্ধতিতে দেশিয় শঙ্করজাতের গরু-মহিষ পালন লাভজনক। পাশাপাশি এগুলোর মাংস মানুষের জন্য নিরাপদ। স্থানীয় মানুষ এরশাদের খামার দেখে উৎসাহিত হচ্ছে। অনেকে বলছেন- তারাও এমন খামার দিতে চান। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।’এলাকায় আগে ভুট্টাচাষ তেমন হতো না। এরশাদের খামারের কারণে স্থানীয় কৃষক ভুট্টাচাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সব মিলিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে খামারটি।
অপর দিকে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের মধ্য কাজলা গ্রামের কৃষক মো: মতিউর রহমানের ‘ভাটির রাজা’ গরুটিকে দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক জনতা। দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন ক্রেতারাও। মালিক ভাটির রাজার দাম হাঁকাচ্ছেন ১২ লাখ টাকা। সামনে কুরবানীর হাটে বিক্রি করার জন্য কৃষক মতিউর এই গরুটিকে লালন পালন করেছেন। ফ্রিজিয়ান (ব্ল্যাকবি অস্ট্রেলিয়ান) জাতের ৩০ মাস বয়সী (দুই দাঁত) এই গরুটিকে এখন প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ কেজি করে খাবার দিতে হচ্ছে এর মালিককে।‘ভাটির রাজা’র খাবারের তালিকায় রয়েছে নিজস্ব জমির কাঁচা ঘাস, শুকনো খড়, গমের ভুষি, খেসারির ভুষি, ভুট্টাভাঙা ও কলা।
তাড়াইল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নূরজাহান বেগম বলেন, গরুটির মালিক একজন সফল উদ্যোক্তা। আহমেদ এগ্রো নামে তিনি একটি খামার গড়ে তুলেছেন। গত বছর কোরবানীর ঈদে তিনি দেশি জাতের ছয়টি গরু বিক্রি করেছেন। এবার প্রথম বড় জাতের গরু মোটাতাজা করেছেন তিনি। গরুটি লালন পালনে কৃষক কোনো ধরণের হরমোন বা স্টেরয়েড ব্যবহার করেননি। গরুটি যতটা না ওজন তার চেয়ে সুন্দর বেশি।
এছাড়া হোসেনপুরের রুবেলের কালো মানিক নামের গরুটিকেও দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। সেটির দাম হাকা হচ্ছে ১৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে নামের সাথে সাজুয্য রেখে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় কোরবানীর বাজার কাঁপাতে প্রস্তুত গরু মালিক ও খামারীরা।