রংপুরে বিষমুক্ত হাড়িভাঙ্গা আম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষক। জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই সফলতা এসেছে। এ পদ্ধতি সম্প্রসারণ করা গেলে কম খরচে বিষমুক্ত উপায়ে অধিক পরিমান আম উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রংপুরের ৮ উপজেলায় ১ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে সুস্বাদু, আঁশবিহীন হাড়িভাঙ্গা আম। এর মধ্যে মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলায় সিংহভাগ জমিতে আবাদ হয়েছে এ আম। এবার আমের গড় ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ১৫ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১২৭ কোটি টাকা। মাছি, ফলছিদ্রকারী পোকাসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ থেকে আমকে রক্ষা করতে কৃষকরা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার কীটনাশক প্রয়োগ করে। এতে করে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে গাছে কীটনাশক ছিটানোর সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ঔষধ শরীরের প্রবেশ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে কৃষক। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরাহাটে হাড়িভাঙ্গা আম চাষের সম্প্রসারক আব্দুস সালাম সরকারের বাগানে ৪০টি গাছে প্রদর্শনী আকারে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে হাড়িভাঙ্গা আম উৎপাদন করা হয়েছে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান রুস্ল আইপিএমের উদ্যোগে কীটনাশকের বদলে ফেরমেনের চেয়েও অধিকতর কার্যকর ফাঁদ ও জৈব বালাইনাশক আম গাছে প্রয়োগ করা হয়। এতে করে সাধারণ গাছের পরিচর্যার তুলনায় অর্ধেক শ্রম ও খরচে বিষমুক্ত আম উৎপাদন হওয়ায় লাভবান হয়েছেন কৃষক।
আব্দুস সালাম সরকার বলেন, আমার বাগানের ৪০টি গাছে প্রদর্শনী আকারে জৈব বালাই নাশক ব্যবহার করে আম চাষ করা হয়েছে। এতে করে বাগানের অন্য আম গাছের পরিচর্যা ও খরচের তুলনায় এ পদ্ধতি প্রয়োগে খরচ কম হয়েছে। ফাঁদ ও জৈব বালাইনাশক প্রয়োগ করে ভালো মানের আমও উৎপাদন হয়েছে। আগামী বছরে গোটা আম বাগানেই এই জৈব বালাই নাশক প্রয়োগ করা হবে।
স্থানীয় আম চাষী সবুর মিয়া বলেন, বিষমুক্ত আম উৎপাদনের জন্য ফাঁদ ও পোকাকে আকৃষ্ট করা হলুদ কার্ড ব্যবহার দেখে আমরা এই পদ্ধতি অনুসরণে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। এই ফাঁদগুলো লাগানোর সাথে সাথে পোকাগুলো আটকে মরে যাচ্ছে। এছাড়া যে বাগানে এটির প্রয়োগ করা হয়েছে সেই বাগানের আমও ভালো হয়েছে। আমরা আগামী বছরে এই পদ্ধতিতে বিষমুক্তভাবে হাড়িভাঙ্গা আম উৎপাদন করবো। এতে করে আমের দাম বর্তমানের তুলনায় বেশি পাওয়া যাবে।
রুসল আইপিএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ শফিকুল আকতার বলেন, জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে মানুষ রাসায়নিক বিষক্রিয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবে। এছাড়া প্রচলিত প্রতিটি রোগের জন্য আলাদা আলাদা ঔষধ ব্যবহার করতে হয় যার ফলে অনেক বেশি পরিমাণে ঔষধ ব্যবহার করে থাকেন। অপরদিকে জৈব বালাইনাশক প্রত্যেকটা রোগ-পোকার জন্য আলাদা ব্যবহার করার দরকার হয় না। কারণ পোকামাকড়গুলো নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি বায়োকেমিক, বায়োলজিক্যাল এবং ‘আকর্ষণ করো ও মেরে ফেলো’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যার ফলে অল্প পরিমাণ জৈব বালাইনাশক গাছে স্প্রে করতে হয়। রুসল আইপিএম জৈব বালাইনাশক কৃষককের স্বল্পমূল্যে প্রাপ্তি নিশ্চিতে কাজ করছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, বিষমুক্ত হাড়িভাঙ্গা আম ও সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।