পটুয়াখালীর কলাপাড়ার দোভাষীপাড়া খালের উপর নির্মিত আরসিসি গার্ডার সেতুটি উদ্ধোধণের আগেই ভেঙ্গে পড়েছে। রোববার সকালে সেতুর মাঝ বরাবর ভেঙ্গে খালে পড়ে যায়। এতে কুয়াকাটা পৌর শহরের পাঞ্জুপাড়া ও লতাচাপলী ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও নয় দশমিক সাত মিটার প্রস্থ্যের গার্ডার সেতুটি (এআরসিএইচ সিষ্টেম) নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছিলো দুই কোটি ২৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা। সেতু নির্মানে নি¤œ মানের নির্মান সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধ্বসে পড়ছে বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করছেন। তবে কুয়াকাটা পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে কি কারণে সেতুটি ভেঙ্গে পড়লো তা তদন্ত করে দেখা হবে।
পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার পাঞ্জুপাড়া গ্রামের দোভাষীপাড়া খালের উপর দীর্ঘ বছর ধরে ছিলো একটি আয়রণ সেতু। ওই সেতু চরম ঝুৃঁকি নিয়ে পার হয়ে কুয়াকাটা ভ্রমনে আসা পর্যটকরা মিশ্রীপাড়া বৌদ্ধ মন্দির আসা-যাওয়া করতো। প্রায়ই ভাঙ্গা আয়রণ সেতু থেকে পড়ে দূর্ঘটনার শিকার হতো পর্যটকসহ স্থানীয় গ্রামবাসীরা। এলাকাবাসীর দীর্ঘ বছরের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কুয়াকাটা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ গার্ডার সেতুর নির্মান কাজ শুরু হয়। সৈয়দ মো. সোহেল ও দ্বীপ এন্টারপ্রাইজ এ সেতুটি নির্মান করছিলো। যা শেষ হওয়ার কথা ছিলো এ বছরের জুৃন মাসে। কিন্তু সেতুর কাজ শেষ হওয়ার আগেই তা ধ্বসে পড়লো।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুতে নি¤œমানের নির্মানসামগ্রী ব্যবহার করার কারণে নির্মান কাজ শেষ হওয়ার আগেই তা ধ্বসে পড়লো। তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী ঠিকাদার সেতু নির্মান কাজ করায় কাজে তদারকি ছিলো না পৌর কর্তৃপক্ষের। এ কারণে সরকারের দুই কোটি টাকা আজ গচ্ছা গেলো। এ অনিয়মে জড়িত ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন গ্রামবাসীরা।
গ্রামবাসীরা জানান, এ সেতু নির্মান কাজ শেষ হলে কুয়াকাটা, ধুলাসার ও লতাচাপলী ইউনিয়নের মানুষ চলাচলের সুবিধা পেতো। কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা পর্যটকরা নির্বিঘেœ এ সড়ক পথে মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ পরিদর্শনে যেতে পারতেন। কিন্তু সেতুটি ভেঙ্গে পড়ায় অন্তত চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও সেতু সংলগ্ন কয়েক হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছেন।
কুয়াকাটা পৌর সভার আট নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফ আলী সিকদার জানান, আথচ সেতুটি যাতে ঠিক মতো নির্মান হয় সেজন্য সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছেন। কিন্তু প্রকৌশলীরা এখানে তদারকি করেনি। এ সুৃযোগে জমাট বাঁধা সিমেন্ট দিয়ে সেতুর ঢালাই দিয়েছে ঠিকাদার। নি¤œমানের কাজ করার কারণে আজ এই দূর্ভোগ।
লতাচপলী ইউনিয়ন সিপিবি’র টিম লিডার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেতুটির নির্মান ছিলো লতাচাপলী ও কুয়াকাটার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। প্রকৌশলীরা গুরুত্ব না দেয়ায় আজ প্রকাশ্যে ভেঙ্গে পড়লো সেতুটি।
কুয়াকাটা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, আমি কুয়াকাটা পৌরসভায় নতুন যোগদান করেছি। সেতুটির নির্মাণ কাজে কোন ত্রুটি ছিলো কিনা সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তবে সেতু নির্মানে কোন অনিয়ম করা হয়নি বলে জানান।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, সেতুটি কেপিআইআইপি প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মান হচ্ছে। এর দায়িত্ব ওই প্রকল্পের প্রকৌশলীর। কুয়াকাটা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী শুধু তদারকি করবেন। সেতুটি ভেঙ্গে পড়ার বিষয়টি প্রকল্পের পিডিকে অবহিত করা হয়েছে। এ দূর্ঘটনায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানান।