দিনাজপুরের বিরল সাব-রেজিষ্টার রিপন চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাঁর দূর্নীতির কারণে প্রতিনিয়িত হয়রানীর শিকার হচ্ছেন, ভূমির দলিলদাতা ও গ্রহিতা এবং দলিল লেখকগণ। সাব-রেজিষ্টার রিপন চন্দ্র মন্ডলের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের ৪৪ নং সনদ প্রাপ্ত দলিল লেখক আনোয়ারুল ইসলাম গত ২৩ জুন জেলা রেজিষ্টার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগকারীকে হেনস্থা করতে এখন তিনি শোকজ নোটিশ পাঠিয়ে অভিযোগ করার সাধ মেটাবেন বলে ভয়ভীতির প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ওই অভিযোগের অনুলীপি সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দিনাজপুর জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা রেজিষ্টার, বিরল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র এর কার্যালয়, বিরল প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরন করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সাব-রেজিষ্টার রিপন চন্দ্র মন্ডল বিরল অফিসে যোগদানের পর দলিল লেখকদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে দলিল লেখার আগেই সাব-রেজিষ্টারের সাথে আলোচনা করে নিতে হবে এবং কোন দলিল বাবদ কত প্রদান করতে হবে সে বিষয়ে অলিখিত একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলিলের সাথে, ডি.সি.আর, মাঠ জরিপের ফটো কপি থাকলে ১ হাজার টাকা এবং খারিজের ফটোকপি থাকলে ২ হাজার টাকা এবং অছিয়ত, বন্টন দলিল ও হেবার ঘোষনা দলিল করার সময় আলোচনা সাপেক্ষে সাব-রেজিষ্টার রিপন চন্দ্র মন্ডলের চাহিদানুযায়ী উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে দলিল সম্পাদন করতে হবে বলে প্রস্তাবনা পেশ করলে হয়রানিমুক্ত থাকতে দলিল লেখকগণ চাহিদা মেনে নিয়ে কর্ম সম্পাদনে একমত হোন।
ঠিক এভাবেই সাব-রেজিষ্টার রিপন চন্দ্র মন্ডলের কথা অনুযায়ী দলিল লেখকরা দলিল সম্পাদন করে আসছিল। গত ১৭ জুন বিরল উপজেলার উত্তর শ্যামপুর মৌজার একটি দলিল সম্পাদনের জন্য সাব-রেজিষ্টার রিপন চন্দ্র মন্ডলের নিকট দলিলের স্বপক্ষের কাগজ খারিজ ও ডিসিআর এর ফটোকপি দাখিল করায় ফটোকপি যাচাইয়ের কথা বলে দলিলটি সম্পাদন না করে দলিলের দাতা-গ্রহিতাকে ফেরত দেয়া হয়। ওই দলিল গত ২৩ জুন আবারও সম্পাদনের জন্য দাখিল করলে তিনি দলিল লেখক আনোয়ারুল ইসলামের কাছে পূরর্বর সিদ্ধান্ত বাদে আরো ১০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করে বসেন। কিন্তু দলিল লেখক আনোয়ারুল ইসলাম অতিরিক্তি ১০ হাজার টাকা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করে পূর্বের আলোচনানুযায়ী দলিলটি সম্পাদনের অনুরোধ করেন। এ ঘটনায় দলিলের দাতা-গ্রহিতার সম্মূখেই সাব-রেজিষ্টার রিপন চন্দ্র মন্ডলের সাথে দলিল লেখক আনোয়ারুল ইসলামের বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে দলিল লেখক আনোয়ারুল ইসলামকে অফিস থেকে বের করে দেয়ার জন্য কর্মচারীদের নির্দেশ দেন এবং দাখিলকৃত দলিলের সাথে খাজনার মূল রশিদ, খারিজের ফটোকপি, ডিসিআর এর ফটোকপি রেখে সম্পাদনের জন্য দাখিলকৃত দলিলটি ফেরত দেন। দলিল সম্পাদনকারী একজন দলিল লেখককে দাতা-গ্রহীতার সম্মূখে উৎকোচ প্রদানে রাজি না হওয়ায় অফিস থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশনার প্রতিবাদে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন দলিল লেখক আনোয়ারুল ইসলাম।
এদিকে এ অভিযোগের সত্যতা জানতে গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের একটি দল বিরল সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কাচারীতে গেলে প্রায় একই রকম অভিযোগ তুলে কথা বলেন প্রায় অর্ধশত দলিল লেখক। সাব-রেজিষ্টার রিপন চন্দ্র মন্ডলের অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে দলিল লেখকগন একপ্রকার জিম্মি ও অতিষ্ঠ বলেও জানান তাঁরা। এ সময় বেরিয়ে আসে সাব-রেজিষ্টার রিপন চন্দ্র মন্ডলের আরোও নানা অনিয়মের কাহিনী। সাধারন দলিল লেখকদের দলিল সম্পাদনে নানা রকম গড়িমসি করে আজ নয় কাল রেজিষ্ট্রী করা হবে বলে অতিরিক্ত অর্থ আদায় সাপেক্ষে দলিল সম্পাদন করেন এই সাব রেজিষ্টার। যে সব দলিল লেখক অতিরিক্ত টাকা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করে তাদের দলিল সম্পাদন না করে ফেরত দেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে দলিল লেখকদের। পরে ফেরত দলিলগুলি কথিত দলিল লেখক সমিতির সভাপতির মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে সম্পাদন করা হয় বলে অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী অর্ধশতাধিক দলিল লেখক। এখানেই উৎকোচ গ্রহনে খ্যান্ত নয় সাব-রেজিষ্টার রিপন চন্দ্র মন্ডল, জমির মূল্য ১ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে ১ হাজার ১ শত ৫০ টাকা এবং ১ লাখ ১ হাজার টাকা হতে সর্বোচ্চ মুল্যের দলিল প্রতি ১ হাজার ৬শ’ ৫০ টাকা উৎকোচ নেয়া হয় রশিদ ছাড়াই। এ ছাড়া দলিল লেখক সমিতির নির্ধারিত হারে অর্থ আদায়ে সহায়তার জন্য সমিতির নিকট হতে প্রতি দলিল বাবদ ৩০০ টাকা করে আদায় করেন সাব-রেজিষ্টার রিপন চন্দ্র মন্ডল।
এ ব্যাপারে বৃহষ্পতিবার সাব-রেজিষ্টার রিপন চন্দ্র মন্ডলের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে আমাদের প্রতিবেদকসহ বিরল প্রেস ক্লাবের অন্যান্য সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি উৎকোচ গ্রহনের বিষয় অস্বীকার করে অভিযোগের বিষয় শুনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সম্পাদনের জন্য দাখিলকৃত দলিলের স্বপক্ষের কাগজে ক্রটি থাকায় দলিলটি সম্পাদন না করে ফেরত দেয়া হয়েছে মাত্র।