মঙ্গলবার খাদিজা (২৩) শশুর বাড়ী গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বড় কালীপুরা গ্রামে। প্রবাসী স্বামী রবি হোসেন থাকেন ব্রুনাই। গত ২৭ জুন তারিখে তার বিকাশ নাম্বারে দুই বারে মোট একত্রিশ হাজার পাঁচশত টাকা পাঠান।
করোনা কালের এমন দূর্রদিনে প্রত্যন্ত গ্রামের গৃহিণী খাদিজা পল্লী ষোল আনী গ্রামে প্রায় দুই কি.মি. পথ হেটে ফাইজা টেলিকম নামক একটি বিকাশ এজেন্টের দোকানে টাকা উত্তোলন করতে আসেন।
তিনি (খাদিজা) বলেন দোকানদার কে আমার মোবাইল দিয়ে বিকাশ থেকে পুরো টাকাটা উত্তোলন করার জন্য পিন নাম্বার দিলে দোকান মালিক আমাকে বলে একত্রিশ হাজার পাঁচশত টাকা আমার (খাদিজা) একাউন্টে রয়েছে। একটু পর বাহানা দিয়ে দোকান মালিক মাহাদী হাসান (৩৮) আমাকে বলেন ডেবিট (উত্তোলন করা অর্থ) করার মত পর্যাপ্ত টাকা তার ক্যাশে নেই। আটাশ হাজার এখন আর বাকী টাকা কিছুক্ষণ পর পরিশোধের শর্তে রাজী হলে আমার বিকাশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা (সর্বোচ্চ) ক্যাশ আউট করলে দোকান মালিক আমাকে জানায় আমার বিকাশ একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই।
খাদিজ আরোও বলেন তখন আবার পুনরায় অ্যাকাউন্ট চেক করে তিনি (হাসান) আমাকে দেখায় আমার মোবাইল একাউন্টে ছয় হাজার পাঁচশত টাকা আছে বাকী টাকা নেই।
এ বিষয়ে দোকান মালিক মাহাদী হাসান বলেন আমি আমার যেই বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠিয়েছি সেখানে টাকা অ্যাড হয়নি বরং তার একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই বলেই বার্তা আসে।
টাকা কোথায় গেছে সরেজমিনে এমন প্রশ্ন করলে প্রতিউত্তরে তিনি বলেন টাকা টি একটি এয়ারটেল নাম্বারে সেন্ড মানি হয়ে চলে গেছে। নাম্বারটি আমার নয়। অ্যাকাউন্ট টি সম্ভবত কোন হ্যাকার গ্রুপের কবলে পড়েছে। নাম্বারটি এখন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে খাদিজার শাশুড়ি চাঁন বাহার বাদী হয়ে দোকান মালিক হাসানের বিরুদ্ধে গজারিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
অভিনব কায়দায় এমন ঘটনা গজারিয়া উপজেলার আঁনাচে কাঁনাচে অহরহ প্রতিনিয়তই ঘটছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় করোনা কালে সমাজের নানা শ্রেনীর নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত সহায়তা ও প্রনোদনা প্যাকেজ অর্থ বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বারে প্রেরিত হচ্ছে। এতে উপকারের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন গজারিয়া উপজেলার অসচেতন নাগরিকরা। কৌশলে প্রতারক চক্রের পাঁতানো নানা প্রতারনার ফাঁদে সহজেই পা বাড়াচ্ছে তারা। এতে কাঙ্খিত সুবিদা কতটুকু বাস্তবতায়িত হচ্ছে সেটা পুনরায় ভাবার বিষয় হয়ে উঠেছে বলে জানিয়ে সচেতন মহল।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় সাংবাদিক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন সমাজে এমন ঘটনা উদ্বেগ জনক। কারোনা কালের এমন কষ্টকর দিনে ডিজিটাল প্রতারনা জনসাধারনের জন্য মরার উপর খড়ার ঘাঁ।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন ঘটনাগুলো বিছিন্ন কোন ঘটনা নয়, এগুলো জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট। ডিজিটাল প্রতারনার বিরুদ্ধে অচিরেই আমাদের সমাজে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে অভিযোগ গুলোর প্রেক্ষিতে আইনগত তদারকিও। এরপর দুপুরে নারী ইউপি সদস্য রেনু বেগম দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ের সামনে এলে উল্লিখিত ব্যক্তিরা তার হাতে থাকা দরপত্র ছিনিয়ে নেন। এ সময় রেনু বেগম কান্নাকাটি করে ইউএনওকে বিষয়টি ফোনে জানান। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ হাজির হয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।
নারী ইউপি সদস্য রেনু বেগম বলেন, ওই নেতা ও তার ছেলে আমার হাত থেকে জোরপূর্বক দরপত্র ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। দরপত্র কেড়ে নেওয়ার ফলে আমি সঠিক সময়ে জমা দিতে পারিনি।
সখীপুর থানার ওসি (তদন্ত) ছাইফুল ইসলাম বলেন, ওই নারী ইউপি সদস্য দুইজনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। ওসি স্যার না থাকায় মামলাটি এখনো নথিভূক্ত (রেকর্ড) হয়নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নজরুল ইসলাম নবু বলেন, আমি ও আমার ছেলে কোনো দরপত্র ছিনতাই করিনি। আমার বিপক্ষ দল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চিত্রা শিকারী বলেন, এ বিষয়ে ওই নারী বাদী হয়ে সখীপুর থানায় অভিযোগ করেছেন। খেয়াঘাটের ইজারার দরপত্র আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।