পরিকল্পিত ও পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার প্রত্যয় নিয়ে লালমনিরহাট পৌরসভার ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের কোনরূপ করারোপ ছাড়াই ৪১ কোটি ২৪ লাখ ৬১ হাজার ৫শ ৯৬ টাকা'র বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুন) দুপুরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স হলরুমে জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, আইনজীবী, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ সকল স্থরের জনসাধারনের উপস্থিতিতে এ বাজেট ঘোষণা করেন পৌর মেয়র মোঃ রেজাউল করিম স্বপন।
বাজেটে প্রস্তাবিত আয় ধরা হয়েছে রাজস্ব খাতে ৯ কোটি ৮৫ লক্ষ ৭১ হাজার ৩০৫ টাকা, পানি সরবরাহ খাতে ৮৫ লক্ষ ১৪ হাজার ৫৩৭ টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ৩০ কোটি ৫৩ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭শ ৫৪ টাকা।
বায় ধরা হয়েছে রাজস্ব খাতে ৯ কোটি ৫৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা, পানি সরবরাহ খাতে ৮০ লক্ষ টাকা, অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ৩০ কোটি ৫২ লক্ষ ৫০ হাজার ১শ ৩ টাকা। বছর শেষে উদ্বৃত্ত ধরা হয়েছে রাজস্ব খাতে ৩২ লক্ষ ৬ হাজার ৩শত ৫ টাকা, পানি সরবরাহ খাতে ৫ লক্ষ ১৪ হাজার ৫শত ৩৭ টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৬শ ২৪ টাকা।
বাজেট অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল করিম স্বপন পৌরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার বক্তব্যে বলেন- আপনারা আমার উপরে আস্থা রেখে আমাকে লালমনিরহাট পৌরসভার সেবক হিসেবে গুরু দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন। আমি গত ১৪ মার্চ দায়িত্ব নেয়ার পর ইতোমধ্যে ১০০ দিন অতিক্রম করলাম। আমি দায়িত্বভার গ্রহন করার পর থেকে চেষ্টা করেছি পৌরসভাকে একটি কার্যকর, দুর্নীতি ও অনিয়ম মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহি মূলক, নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন ও সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার। লালমনিরহাট পৌরসভাকে একটি মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত শান্তিপূর্ণ শহর হিসেবে উপহার দেয়াই আমার স্বপ্ন।
তিনি আরও বলেন, আমি যেদিন দায়িত্ব নিয়েছিলাম সেদিন পৌরসভার দেনার পরিমান ছিল ৮ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন ছিল অনিয়মিত, তাদের পাওনা ছিল ৪ কোটি টাকার উপরে, বিদ্যুত বিল বকেয়া ছিল ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, পেট্রোল পাম্পের বিল বাকী। রোলার সহ বিভিন্ন গাড়ি ছিল অকেজো, বিএমডিএফ প্রকল্পের লোনের কিস্তি ছিল বাকী, ভ্যাট আয়করসহ বিভিন্ন ফান্ডের টাকা অন্য খাতে ব্যায়, অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত আত্মীয়স্বজন ও বেনামী কর্মচারীদের নামে বেতন উত্তোলন, বিভিন্ন তহবিল তসরুপসহ অনিয়মে জর্জরিত ছিল।
আমি প্রথমেই পৌরসভার সকল অনিয়ম ও অপবায় বন্ধ করি, যারা অবৈধভাবে পৌরসভা থেকে বেতন গ্রহন করতেন তাদের সেই সুবিধা বন্ধ করে দেই, কারণ পৌরসভায় তাদের কোন নিয়োগ বৈধতা নেই। পৌরসভা একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, এটা কারও কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, এখানে স্বেচ্ছাচারিতা ও অপব্যয় করার কোন সুযোগ নাই। আমি এই ১০০ দিনে কর্মকর্তা কর্মচারীদের ৫ মাসের বেতন, বৈশাখি ভাতা ও ঈদ বোনাস মিলে প্রায় ২ কোটি টাকা প্রদান করি। চলতি ও বকেয়া মিলে ২০ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল, পাম্পে তেলের বিল, বিএমডিএক প্রকল্পের বকেয়া কিস্তি ১২ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি।
দীর্ঘদিন থেকে ভরাট হয়ে যাওয়া পৌরসভার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে কার্যকর ড্রেনে পরিনত করি, যার সুফল পৌরবাসী পেতে শুরু করেছেন। অকেজো, বন্ধ, সড়ক বাতি গুলো সচল করা হয়। দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা আবর্জনা পরিস্কার করে রুটিন মাফিক ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এছাড়াও দৈনন্দিন বিভিন্ন ব্যয়ের টাকাও নিয়মিত প্রদান করি। পৌরসভার সকল অকেজো রোলার ও গাড়ি সচল করি, বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করি এসব কিছু সম্ভব হয়েছে পৌরবাসীর সহযোগিতায়, কারণ তাদের ট্যাক্সের টাকায় এগুলো প্রদান করা হয়েছে। আমি মনে করি এই দায়িত্ব জনগনের দেয়া পবিত্র আমানত। আমি পৌরবাসীর প্রতি পৌরসভার যে দায়িত্ব গুলো রয়েছে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন, চেম্বার অব কমার্স এর পরিচালক মোকছেদুর রহমান, ৫ নল ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস ছালাম প্রমুখ।
পৌরসভার হিসাব রক্ষক শফিকুল ইসলাম পাটোয়ারীথর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন পৌর পরিষদের কাউন্সিলরবৃন্দ, পৌর সচিব হাসানুজ্জামান বসুনীয়া, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, নির্বাহী প্রকৌশলী, মেডিকেল অফিসারসহ অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।