কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই চেয়ারম্যান। উপজেলা প্রশাসন বলেছে সুবিধাভোগিদের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযেগে জানা যায়, উপজেলার বল্লভেরখাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন সরকারি বিধির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছে মতো ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে করোনা কালীন ভিজিএফ ৬ হাজার ৬শ ৭১ টি পরিবারের জন্য প্রত্যেক পরিবারের ৪শ ৫০টাকা হারে মোট ৩০ লাখ ১ হাজার ৯শ ৫০ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে ২ হাজার ৪শ টি কার্ড বিতরণ করলেও চেয়ারম্যান নিজের কাছে রেখে দেন ৪ হাজার ২শ ৭১টি কার্ড। এসব কার্ড পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের পছন্দনীয় ব্যক্তি এবং স্বচ্ছল ব্যাক্তিদের কাছে বিতরণ করেন। এছাড়াও চেয়ারম্যান ভোটার আইডি নম্বর ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের নাম দিয়ে ১৯ লাখ ২১ হাজার ৯শ ৫০টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডের সুবিধাভোগীর ভোটার আইডি নম্বর ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন দেখানো হলেও সেই টাকা সুবিধাভোগীরা পাননি বলে জানানো হয়। এছাড়াও ২০১৬-২০২১ পর্যন্ত অর্থ বছরের উপজেলা পরিষদের ভূমি হস্তান্তর ১%, হাট বাজারের ইজারা ১০% এবং ১৫% টাকা উত্তোলন করা হয়। সাধারণ ব্যবসায়ীদের নিকট হতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ৩শ টাকা আদায় করে সরকারি রাজস্ব খাতে ৫০ টাকা হতে ১শ টাকা জমা করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান। জন্ম সনদের ২শ টাকা হতে ৩শ টাকা নিলেও সরকারি খাতে ৫০ টাকা জমা করেন। ইউনিয়নে বসত বাড়ির বাৎসরিক কর ১শ টাকা করে আদায় হলে মূল বইয়ে-৫০টাকা দেখিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
ভিজিএফ সুবিধাভোগী আবুল কাশেম বলেন, আমার নামে ভিজিএফ কার্ডের তালিকায় নাম থাকলেও আমি কোন টাকা পাইনি। সেই টাকা কে পেয়েছে তা আমার জানা নেই। একই অভিযোগ অপর সুবিধাভোগী খাইরুল আলম বলেন, আমিসহ আমার পরিবারের ৪ জনের নাম দিয়েছি ভিজিএফ কার্ডে। কিন্তু ঈদের আগে শুধু মাত্র আমার মেয়ে সেই টাকা পেয়েছে। আমি এবং আমার দুই ছেলে কোন টাকা পাইনি। শুনেছি তালিকায় আমাদের নাম থাকলেও সেই টাকা চেয়ারম্যান তুলে নিয়েছেন।
ইউপি সদস্য হুজুর আলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দকৃত টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এডিপি ও এলজিএসপি’র বরাদ্দের টাকার কাজ বাস্তবায়নে ইউপি সদস্যদের নিয়ে রেজুলেশন করলেও সেই কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করেই টাকা আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি এবং অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পাওয়ারও অভিযোগ করেন তিনি।
ইউপি সদস্য ছইফুর রহমানও একই অভিযোগ করে বলেন, আমরা নির্বাচিত হবার পর থেকে চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে প্রতিবাদ করে আসছি। এজন্য আমাদেরকে অনেক হুমকিও দেয়া হয়েছে। এই অভিযোগের আগেও সকল ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে অভিযোগ দেবার পরেও কোন কাজ হয়নি। ফলে চেয়ারম্যানের দুর্নীতি লাগামহীন হয়ে পড়েছে।
চেয়ারম্যান আকমল হোসেন বলেন, পূর্বে যে গুলো অভিযোগ দিয়েছিল সেগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। অন্য মেম্বারদের সাথে আমার কোন বিরোধ নেই। কিন্তু দু’জন মেম্বার তারা সবসময় বরাদ্দের বাইরেও বাড়তি সুবিধা চেয়ে আসছে। সেই সুবিধা না দেয়ায় তারা নানাভাবে আমাকে হেয় করে আসছে।
উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা নুর আহমেদ মাছুম বলেন, ভিজিএফ সুবিধাভোগীদের কেউ টাকা না পাওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।