গাইবান্ধা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে গাইনী ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গর্ভবতী মা ও শিশুসহ সাধারণ রোগীরা। গাইবান্ধা জেলার মা, শিশুসহ মেয়েদের সবচেয়ে নিরাপদ চিকিৎসা সেবা পাওয়ার একমাত্র ভরসা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির নাম মাতৃসদন নামে বহুল পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৩৯ সালে গর্ভবতী মায়েদের ডেলিভারি সেবার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে। পরে ২০০০ সাল থেকে জরুরী সেবা কার্যক্রম সংযুক্ত করে এবং দিন দিন সাধারণ মানুষের নিকট জনপ্রিয় নিরাপদ চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে সুনাম অর্জন করে। মা ও শিশু ছাড়াও সাধারণ রোগীদের ব্যবস্থাপত্র এবং বিনামুল্যে ওষুধ প্রদান করা হত। বর্তমানে ২০ বেড সম্পন্ন মাতৃসদনে - গর্ভকালীন পরিচর্যা, প্রসবকালীন পরিচর্যা, প্রসব পরবর্তী পরিচর্যা, বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা, কিশোর কিশোরী সেবা, নারীদের জরায়ুর মুখের ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং সেবা, শিশুদের ক্ষেত্রে ০ থেকে ১ বছরের শিশুর পরিচর্যা এবং ১-৫ বছরের শিশুর পরিচর্যা সেবা ও পরিবার পরিকল্পনা সেবার মধ্যে রয়েছে কনডম এবং খাবার বড়ি সরবরাহ, ইনজেকশন, ইমপ্লানন, আইইউডি (কপার্টি), নারী ও পুরুষদের জন্য স্থায়ী পদ্ধতি এবং এমআর সেবা দেয়া হয়। কিন্তু মাতৃসদনের মূল চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা গাইনী ডাক্তার দীর্ঘ প্রায় একবছর ধরে না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গাইবান্ধা জেলার মা ও শিশুরা। ২০০৪ সালে গাইনী ডাক্তার হিসেবে দায়িত্ব নেয়া আফসারী খানমের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিক সেবার কারণে অল্প সময়ে দেশের অন্যান্য মাতৃদনের সেবা মানের মধ্যে গুনগত মানের দিকে অবস্থান করে নেয় এবং গর্ভবতী মায়েদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দানের জন্য ১১ বার জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কারে ভূষিত হয়। বিশিষ্ট গাইনী চিকৎসক আফসারী খানম উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিকবার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এ বিষয়ে আফসারী খানম জানান আমি প্রতিষ্ঠানটি নিজের মত করে সাজিয়ে ছিলাম। একটি প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জন করতে অনেক ত্যাগ, শ্রম ও সময় লাগে কিন্তু ধ্বংস করতে বেশি সময় লাগে না। সেদিন আমি দায়িত্বে ছিলাম না।যাদের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটেছিল তারা আমার উপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন। আমি অন্যত্রে চাকরি করলেও গাইবান্ধা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রর জন্য সবসময় শুভকামনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় এক বছর আগে এখানকার দায়িত্বরত ডাক্তার এবং অন্যান্য সহকর্মীদের অবহেলায় একজন গর্ভবতী মা’ রাস্তায় এবং একজন রিক্সার মধ্যেই সন্তান প্রসব করে। সেই ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তৎকালীন দায়িত্বে না থাকা গাইনী ডাক্তার আফসারী খানম কে লালমনিরহাটে বদলী করা হয়। ফলে ভেঙ্গে যায় সুনাম ধারী মাতৃ সদন এর চিকিৎসা ব্যবস্থা। কিছু দিন পর একজন গাইনী চিকিৎসককে দিনাজপুরের খানসামা থেকে পোস্টিং দিলেও তিনি অসুস্থ জনিত কারণে দীর্ঘ সময় ছুটিতে আছেন।এতে করে স্থানীয় গ্রামের অসহায় দরিদ্র গর্ভবতী ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদেরকে সন্তান প্রসবের জন্য পাঠানো হচ্ছে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিকে। বিনা খরচে সন্তান প্রসবের সুচিকিৎসা নিতে এসে বেসরকারী ক্লিনিকে গিয়ে গুনতে হচ্ছে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। গাইনী ডাক্তারের অভাবে এখানে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় এমন বিপাকে পরতে হচ্ছে বলে ,চিকিৎসা নিতে আসা কুপতলা গ্রামের সাহিদা বেগম জানান, সিজার বন্ধ থাকায় আমাকে প্রথমে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে কিন্তু সেখানেও ডাক্তার না থাকায় অবশেষে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হয়েছে। সেখানে আমাকে ১৫ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ডাক্তার ভিজিটর যাবতীয় যন্ত্রপাতি ঠিকই আছে।শুধুমাত্র নেই গাইনি ডাক্তার।এজন্যই প্রতিষ্ঠানটিতে জরুরী সিজারিয়ান চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গর্ভবতী মা ও প্রসূতি মায়েরা। বললেন ক্লিনিকের অফিস সহকারি লুৎফুন নাহার বেগম।
একজন স্বাস্থ্য কর্মী জানান, আফসারী আপা থাকতে মাসে প্রায় ৩শ’র উপরে ডেলিভারী রোগীকে সার্ভিস দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে গাইনী ডাক্তার না থাকায় ডেলিভারী পরবর্তী কিছু সমস্যার কথা চিন্তা করে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক রোগীকে ভর্তি না নিয়ে ফেরৎ দিতে হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, গাইনি ডাক্তারের সংকট নিরসনের জন্য অধিদপ্তরকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। গাইবান্ধা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, গাইবান্ধার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটির পুরনো ঐতিহ্য সুচিকিৎসা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে দ্রুত গাইনী ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।তানাহলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।