ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্রের মাধ্যমে তৎকালীন যুদ্ধাপরাধীদেরই একজন নামধারী মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম। ২০১০ ইং সালে তিনি মারা গেলেও মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সকল প্রকার সরকারী সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছেন তার সহধর্মীনি মাসুমা বেগম। নজরুল ইসলাম পীরগঞ্জ উপজেলার কুমেদপুর ইউনিয়নের বারুদহ গ্রামের মৃত মোহাম্মদ হোসেন সরকারের পুত্র। এ ব্যাপারে উপজেলার অর্ধ ডজন মুক্তিযোদ্ধা তার সনদ বাতিলের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। লিখিত অভিযোগ ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ১৯৭১ ইং সালে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অগ্নি সংযোগ, লুটপাট, গণহত্যা, ধর্ষণ এবং পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্যকারী (দালাল) যুদ্ধাপরাধী নজরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারী যুদ্ধাপরাধী ও দালাল আইনে গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারী বাংলাদেশ দালাল আইন ঢ়.০.হড় াররর ড়ভ ১৯৭২ এবং ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন জারি করা হয়। ওই আইনে সারা দেশে সরকারীভাবে দালালদের (যুদ্ধাপরাধী) তালিকা প্রণয়ন করা হয়। ঐ তালিকায় নজরুল ইসলামের নাম উল্লেখ রয়েছে। লেখক এএসএম সামছুল আরেফিন সম্পাদিত ‘রাজাকার ও দালাল অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের তালিকা’ (ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে মার্চ ১৯৭২ পর্যন্ত সংকলন ও সম্পাদনা) বইয়ে পীরগঞ্জে যে ৪ জন দালালের নাম উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম নজরুল ইসলাম। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পীরগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মরহুম আবদুল মমিন আকন্দ রচিত ‘আগুনঝরা দ্রোহকাল- আমার কিছু কথা’ বইয়েও গ্রেফতারের ঘটনা ও দালাল হিসেবে নজরুল ইসলামের নাম উল্লেখ করেছেন। গত রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় কথিত মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের সহধর্মীনি মাছুমা বেগম, পুত্র খলিলুর রহমান (৪৫) ও নুরন্নবী মিয়া (৪৮)র সঙ্গে। তারা জানায়, ২০১৭ সাল হতে মাসুমা বেগমের নামে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করা হচ্ছে। ভাতা উত্তোলনের কার্ড দেখতে চাইলে পুত্র খলিলুর রহমান বলেন, কার্ডটি পীরগঞ্জ সোনালী ব্যাংক শাখায় জমা আছে। কারণ জানতে চাইলে জানান, ওই ব্যাংক হতে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করায় কার্ডটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিজ হেফাজতে রেখেছে। নজরুল ইসলাম প্রকৃত পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কিনা ? এমন প্রশ্নে তারা মুখে কুলুপ এঁটে দেন। এ ব্যাপারে বগেরবাড়ি গ্রামের মৃত তোরাব মুন্সি’র পুত্র অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল মিয়া বলেন, নজরুল ইসলাম বেঁচে থাকা কালীন সময়ে পূর্ব পরিচয়ের ভিত্তিতে আমার মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্রটি দেখার কথা বলে বাড়ি নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমার নাম ঠিকানার স্থলে নজরুল ইসলামের নাম ঠিকানা উল্লেখ করে ভূয়া সনদে মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় আওতাভূক্ত হয়। নজরুল ইসলামের সহোদর অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আতাউর রহমানসহ নজরুল ইসলামের সহপাঠিখ্যাত বারুদহ গ্রামের মৃত ওসমান মিয়ার পুত্র অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম ও মৃত আজিজার রহমানের পুত্র অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মকবুল হোসেন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে নজরুল ইসলাম সেনাবাহিনীতে যোগদান করে এবং যুদ্ধ শুরুর মুহুর্তে সে সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসে। পরে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্যকারী (দালাল) হিসেবে কাজ করে এবং গ্রেফতার হয়।