যশোরের মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম মানবতার “মা” হিসেবে দিনদিন পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছেন। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির শুরু থেকেই তিনি উপজেলার করোনাযোদ্ধা, অসহায়, গরীব, দূর্ঘটনাসহ বিভিন্নভাবে আহত ও নিহত পরিবারের খোঁজ-খবর নেয়াসহ তাদের পাশে দাড়িয়েছেন। এমনকি তিনি ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থায়নে ওই সকল পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ প্রদান করে চলেছেন। মণিরামপুরে সকল জনপ্রতিনিধির মধ্যে এই নারী বর্তমানে সেবামূলক কার্যক্রমে সকলের উর্ধ্বে রয়েছেন বলে একাধিক মহলে চাউর উঠেছে।
জানাযায়, নাজমা খানম ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ বিপুল ভোট ব্যবধানে মণিরামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারী ও ২০১৪ সালের ১৫ মার্চ এই দু’বার উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ পরিবারের এ নারী দীর্ঘদিন যশোর জেলা মহিলা যুবলীগের সহ-সভাপতির পদে আদিষ্ট রয়েছেন। এছাড়াও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন ডিগ্রী পাশ শিক্ষিতা এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের গৃহবধূ।
উপজেলার ভরতপুর গ্রামের ভিক্ষুক কুলসুম বেগম বলেন, নাজমা খানম চেয়ারম্যান নয়, সে একজন মনবতার মা। তিনি আরও বলেন, মণিরামপুর বাজারের থানার সামনে থেকে ১৩এপ্রিল আমার ভিক্ষা করা চাল চুরি হয়ে গেলে খবর শুনে পরদিন আমার বাড়িতে এসে আমাকে এক মাসের খাদ্য সামগ্রী দিয়ে যায়। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার এ উপকারের কথা ভুলবোনা। তার মতো এমন মানবতার “মা” চেয়ারম্যান সারাদেশে প্রয়োজন।
গত ১৫মার্চ সড়ক দূর্ঘটনায় আহত যশোর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা তপন বিশ্বাস পবন বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমা খানমের জন্য আমি পঙ্গুত্বর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। তার একান্ত প্রচেষ্টায় এবং প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবরে আমার শরীরের সুস্থ্যতা এবং মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদি কিনা আমার পরিবারের নিজস্ব প্রচেষ্টায় চিকিৎসা সেবা নিতে হতো তাহলে আজ আমাকে হয়তো-বা পঙ্গুত্ব অবস্থায় বাড়িতে থেকে ধুকেধুকে জীবন-যাপন করতে হতো।
জানাগেছে, উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম গত ৩মে কাশিমনগর ইউপির খুজালীপুর গ্রামে মামুন নামে এক যুবক আততায়ীর হাতে খুন হলে পরদিন নিহত অসহায় বাবা মশিয়ার রহমান ও মা শাহিদা বেগমকে শান্তনা দিতে তার বাড়িতে যান। এ সময় চেয়ারম্যান অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন।
২৩মে একই ইউপির ইত্যা গ্রামের টায়ার ব্যবসায়ী সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হলে তাদের বাড়িতে গিয়ে শোকাবহ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। ১৯জুন পৌরসভাধীন হাকোবা গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী পানিতে ডুবে মারা গেলে খবর পাওয়া মাত্রই তাদের বাড়িতে উপস্থিত হন।
উপজেলার খানপুর ইউপির ঘুঘুদহ গ্রামের শিক্ষিকা লক্ষী রনী, ভরতপুর গ্রামের আল-মামুন ও ডাঃ নূরুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত হলে গত ২১জুন তাদের বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শান্তনাস্বরুপ তাদের মনোবল বৃদ্ধি করেন এবং ওই পরিবারের মাঝে কিছু খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন। গত ২জুলাই সড়ক দূর্ঘটনায় আহত মহাসিন আলী নামের এক অসহায় ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেবা হিসেবে নগদ অর্থ এবং পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী দেন।
মণিরামপুর প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য ইউনুচ আলীর বৃদ্ধ মা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৩জুন ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে তাদের গ্রামের বাড়ি নেহালপুরে হাজির হন পরিবারের স্বজনদের দুঃচিন্তা থেকে শান্তনা দিতে।
গত ২৮জুলাই মশ্মিমনগর ইউপির পারখাজুরা গ্রামে আবদুর রাজ্জাক ও হাজরাকাটী বেলতলা গ্রামে ফরিদা খাতুনের করোনায় মৃত্যু হলে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে তাদের বাড়িতে ছুঁটে যান। পৌর শহরের দূর্গাপুরে করোনায় মৃত্যু রোকেয়া বেগমের বাড়িতে যান এবং শোকাবহ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
৩জুলাই করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আমির হোসেনের স্ত্রী বিলকিস আরা বেগম (৭০), কাশিপুর গ্রামের মরহুম শিক্ষক আমিন উদ্দীনের স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৫২), এক্ই গ্রামের রুহুল কুদ্দুস মন্টু (৫৫), মোবারকপুর গ্রামের নারায়ণ পালের স্ত্রী কল্পনা পাল (৪০) ও মোহনপুরের নজরুল ইসলাম (৫৫)। উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে এদিন সকল মৃত. ব্যক্তিদের বাড়িতে হাজির হয়ে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
এছাড়ও উপজেলার ১নং রোহিতা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আনসার আলী, নেহালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা নাজমুস সা’দত অসুস্থ হলে তাদের শয্যাপাশে হাজির হন এবং প্রত্যকের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নেন।
খোঁজ-খবর নিয়ে আরও জানাগেছে, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উপজেলার অসংখ্যা অসহায়, আত্মপিড়িত, কেউ মৃত্যুবরণ করলে এবং দূর্ঘটনা কবলিত মানুষের খবর পাওয়া মাত্রই তাদের বাড়িতে হাজির হচ্ছেন এবং বিপদগামী পরিবারের সুখ-দুঃখের সাথী ও দেখভালের শরিক হয়েছেন। এ সময় তিনি সাধ্যমতো বিভিন্ন সহয়তা প্রদানসহ সেইসব পরিবারের স্বজনদের শান্তনা ও মানসিক মনোবল জুগিয়ে চলেছেন।
গত দু’বছরে তিনি সড়ক দূর্ঘটনায় হাসপাতালে আহত, বিভিন্নভাবে মৃত্যুবরন করা ও করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে বাড়িতে অবস্থান করা প্রায় ৪ হাজার পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। যে কাজটি এখনও চলমান রয়েছে। মহতি উদ্যোগের এ কাজগুলো করে তিনি উপজেলার অধিকাংশ জনগণের মণিকোঠায় প্রশংসনীয় ব্যক্তিত্বর পরিচয় দিয়েছেন।
একান্ত সাক্ষাৎকারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, আমি চেয়ারম্যনের দাম্ভিকতা পরিহার করে উপজেলাবাসীর মানবতার সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। দলমত নির্বিশেষে সকল গরীব, অসহায়ের পাশে দাড়ানোই আমার ইচ্ছশক্তি। এক প্রশ্নর উত্তরে তিনি বলেন, আমি যতদিন এ চেয়ারের দায়িত্বে আছি, কোন অপশক্তির কাছে মাথানত করবোনা।