নেত্রকোণার দুর্গাপুরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ৮শ ৬০টি পুকুর ও ২টি মৎস্য খামার ভেসে গিয়ে অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার প্রায় ৯৫টি গ্রাম পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পুকুর ও মৎস্য খামারের ওপর দিয়ে ৩/৫ ফুট করে পাহাড়ি ঢল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। গত শনিবার ৩ জুলাই বিকেলে উপজেলা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত পুকুরের কোন তথ্য দিতে পারেনিন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুমন কুন্ডু।
গত বুধবার থেকে তিনদিনে ঐ পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৯৫টি গ্রামের লোকজন মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। গোখাদ্য সংকটেও রয়েছে ঐসব এলাকাগুলি। বন্যার পানিতে মাছ ভেসে যাওয়ায় মৎস্য খামারি দুজনের মাথায় হাত। অনেক কষ্টে গড়া গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের খামারি আবদুস সাত্তার প্রায় সত্তর হাজার টাকার মাছ ভেসে গেছে। তিনি ঐ ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন অনেক মালিকানা পুুকুরের মাছ চাষিরাও।
গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের মৎস্য খামারের মালিক আবদুস সাত্তার বলেন, অনেক দেনা-লেনা করে মৎস্য খামার করেছি। কিন্তু পাহাড়ি ঢলে আমার প্রায় লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এমনকি মৎস্য খামারের ক্ষতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন মৎস্য অফিসের লোকজন এসে খোঁজ খবর নেয়নি। এভাবে এ এলাকায় অসংখ্য মালিকানা মৎস্য চাষির ক্ষতি হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখো গেছে, উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের ৩২টি গ্রামের মধ্যে ২৮টি গ্রাম টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে গ্রামীণ বসতি, মৎস্যখাত ও ফসল ক্ষতি হয়েছে। প্রায় তিন শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। কাকৈরগড়া ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ২শতাধিক পুকুর ডুবে গেছে। সদর ইউনিয়নের প্রায় দশটি গ্রাম বন্যার পানিতে ডুবে ২শ পুকুরের মাছ চলে গেছে। বাকলজোড়া ইউনয়নের ১০টি গ্রাম পানিবন্দি ও ৫০টি পুকুর ডুবে যায়। কুল্লাগড়া ইউনিয়নের ৮-১০ গ্রাম প্লাবিত ও ৭০-৮০টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। চন্ডিগড় ইউনিয়নের ১০/১২টি গ্রাম প্লাবিত ও বেশকটি পুকুর ডুবে গেলেও মাছ ভেসে যেতে পারেনি। জাল দিয় অনেকে নিজেদের মাছ রক্ষা করতে পেরেছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলতাবুর রহমান কাজল। ঐসব পাহাড়ি ঢল উপজেলার নি¤œাঞ্চলে নিস্কাশিত হতে না পেরে বিস্তির্ণ বীজতলা ও সবজি ফসলী ক্ষেতে এখনো আটকে আছে প্লাবিত পাহাড়ি ঢল। পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে আন্ত গ্রামীণ রাস্তা, পুকুরের মাছ, মৎস্য খামারীর মাছ। উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা সুমন কুন্ডু বলেন, দুর্গাপুর পৌরসভা ও ৭ ইউনিয়নে ৫ হাজার ৫০০টি পুকুর রয়েছে। মৎস্য খামার রয়েছে ৩হাজার ৮শ। গলদা চিংড়ি’র একটি প্রদশর্ণী রয়েছে। তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্রায় ৮৬০টি পুকুর ও ২টি মৎস্য খামারির প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতির বিষয়ে কিছুই জানা নেই খোদ এ মৎস্য কর্মকর্তার। রাজস্ব ৬টি পদের মধ্যে ২জন স্টাফ রয়েছে আর ৪টি পদই খালি। মৎস্য কর্মকর্তার এ উদাসীনতা ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের চরম ক্ষতির কারণ বলে মনে করছেন অনেক ভুক্তভোগী মৎস্য চাষী। তাঁদের অভিযোগে, আমাদের এত পরিমাণ ক্ষতি হলো তিনি মাঠ পর্যায় থেকে কোন খোঁজ পর্যন্ত নেননি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠার বিষয়ে কোন পরামর্শও পাননি মৎস্য চাষীরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) রাজীব উল-আহসান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে মৎস্যের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার একটা পরিসংখ্যান অবশ্যই থাকা উচিত, তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।
নেত্রকোণা জেলার সিনিয়র সহকারি পরিচালক(মৎস্য) শাহজাহান কবীর জানান, দুর্গাপুর উপজেলায় চলতি বন্যায় মৎস্যের ক্ষতির পরিমাণ জানতে ইতোমধ্যে নির্দেশণা দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আমি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলে আপনাকে পরবর্তী সময়ে জানাতে পারবো।