১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলকালে নেত্রকোনার উত্তরে কলমাকান্দা উপজেলা ভারতের মেঘালয় সীমান্তে রংড়া কমলা ক্যাম্পে ক্যাপ্টেন চুহানের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশকে শক্রুমুক্ত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সেবিকা হিসেবে অংশগ্রহণ করলেও নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের ১৫ নারীর দীর্ঘ ৫০ বছরেও জোটেনি নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না পেলেও স্থানীয় অনেক মুক্তিযোদ্ধারাই তাদের নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ডাকেন। নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে সেবিকার ভুমিকা রাখলেও স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও তাদের স্বীকৃতি না মেলায় হতাশায় দিন কাটছেন তারা। সরকারের কাছে অনেক আবেদন নিবেদন করেও স্বীকৃতি পাচ্ছেন না তারা। এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, কেউ কেউ মারা গেছেন, কেউ পাহাড়ে লাকড়ি সংগ্রহে, কেউ বিদেশ চলে গেছেন, কেউ পঙ্গু অবস্থায়, কেউ কেউ এখনও নিরাশ না হয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে। সেখানে সরকারি ভাবে যাচাই বাচাই কার্যক্রমে না মঞ্জুর তালিকায় চিহ্নিত হয়ে আপিলে অংশ নিয়েছিলেন। জামুকায় তাদের নথিপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল, ডাকও পড়েছিল, কারো কারো নামে জামুকার চিঠিও এসেছিল, তারা সাড়াও দিয়েছিল, কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয়, সেখানেও স্বীকৃতি মিলেনি ব্যর্থ হয় তারা। তাদের টিম লিডার মল্লিকা ঘাগ্রার কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আক্ষেপের সহিত বলেন, আমরা দীর্ঘ এক মাস ভারতের কমলা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষ করে সেবিকার কাজ করতে করতে দেশে ফিরি। দূর্ভাগ্য আমাদের সরকারি তালিকায় আজও আমাদের নাম উঠেনি! কেন উঠেনি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে যখন শেখ মুজিব সাহেবকে মেরে ফেলা হলো, তখন সময়ে মানুষের মুখে মুখে রটে গিয়েছিল-যারা মুক্তিযোদ্ধে গিয়েছে তাদেরকেও মেরে ফেলা হবে; সেই ভয়ে আমাদেরকে যে একটা ভারতীয় নারী মুক্তিবার্তার তালিকা দিয়েছিল, সেটি মাটির নিচে পুতে রেখেছিলেম। আমরা কি জানতাম, এই কাগজটি এখন এত প্রয়োজন হবে, পরে মাটি খুঁড়ে দেখি ইউঁপোকা খেয়ে ফেলেছে সব। এই জন্যই মনে হয় আমরা স্বাীকৃতি পাচ্ছিনা।
তারই এক সহযোদ্ধা মুকুল আজিম বলেন, আমরা তখন সময়ে লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের বালুচড়া সেক্রেটহার্ড উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেম। সেখান থেকেই চলে যাই ভারতের রংড়া কমলা ক্যাম্পে, টানা ১ মাস সেবিকার কাজে নিয়োজিত ছিলাম, আত্মরক্ষার জন্য রাইফেল, স্টেনগান, হ্যান্ড বোম এর ট্রেনিংও করেছি।
এ বিষয়ে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা বিকাশ চন্দ্র ভৌমিক, শরাফ উদ্দিন খান, প্রবীর সাংমা ও নিতেন আজীম কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ওরা ভারতের কমলা ক্যাম্পে ক্যাপ্টিন চুহানের নেতৃত্বে ট্রেনিং করেছে, সেখানে তারা সেবিকা হিসেবে কাজ করেছে, আমাদের গোপন তথ্য আদান প্রদানের কাজেও সহযোগিতা করেছে।